বিভাগীয় কর্মী থেকে গ্রাহক, তাঁর ‘দুর্ব্যবহারের’ শিকার অনেকেই। তাঁর ‘অশ্রাব্য’ গালমন্দে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই ‘প্রত্যাঘাতের’ পথেও হেঁটেছেন। দফতর সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। তাতে যে তাঁর স্বভাবের বিশেষ হেলদোল হয়নি, নিগমের এক মহিলা কর্মীকে ফের ‘গালমন্দ’ করে তারই প্রমাণ রাখলেন রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডল।
|
আবু আয়েশ মণ্ডল |
‘গালাগাল’ দেওয়ার পাশাপাশি টেলিফোনে ক্রমান্বয়ে তাঁকে হুমকি দেওয়ায় এ বার খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমা শিক্ষা সুপারভাইজার নাসিফা বেগম। ক্ষুব্ধ নাসিফা মঙ্গলবার বলেন, “প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেব। কিন্তু আমি এর শেষ দেখে ছাড়তে চাই।” ইতিমধ্যেই ডোমকল থানায় আবু আয়েশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, অভিযোগ পেয়ে সে ব্যাপারে খোঁজখবরও শুরু করেছে পুলিশ।
ওই মহিলা জানান, দিন কয়েক আগে কলকাতায় নিগমের অফিসে এসে চেয়ারম্যানের কাছে প্রয়োজনীয় কিছু ফাইলপত্র দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নাসিফা বলেন, “সোমবার হঠাৎই চেয়ারম্যান আমার মোবাইলে ফোন করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যাচ্ছেতাই ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। বলেন, আমার বিরুদ্ধে নাকি অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। কী অভিযোগ জানতে চাইলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে শুরু করেন তিনি। আমি কেঁদে ফেলি।” প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে ওই মহিলা কর্মী, নিগমের চেয়ারম্যান তথা মন্তেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়কের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের পুরোটাই রেকর্ড করে রেখেছিলেন নিজের মোবাইল ফোনে।
এ দিন আবু আয়েশ অবশ্য চেনা সুরেই গালমন্দ করার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “ওই কর্মীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করতেই তাঁকে ফোন করি। গালাগাল দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” কিন্তু মোবাইলের রেকর্ডারে তাঁর গালমন্দ তো স্পষ্ট ধরা আছে? নিগমের চেয়ারম্যানের পাল্টা যুক্তি: “সব কারচুপি। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়েই ওই মহিলা এই সব মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”
আবু আয়েশের গালমন্দের সাক্ষী অবশ্য অনেকেই। নিগমের উত্তরবঙ্গ শাখার আঞ্চলিক সমন্বয়-আধিকারিক সামাদ সরকার বলেন, “সরকার সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের চেষ্টা করছে। কিন্তু গ্রাহকদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দুর্ব্যবহারে অনেকেই নিগমে পা রাখতে চান না। দফতরের কর্মীদের সঙ্গেও তিনি অভব্য আচরণ করেন।” মুর্শিদাবাদের নিগমের অন্য এক কর্মীর কথায়, “সামান্য টাকায় কাজ করি। কিন্তু ওঁর ব্যবহারে বেশি দিন কাজ করতে পারব বলে মনে হয় না।”
বীরভূমের রামপুরের বাসিন্দা আনোয়ারা বিবি বছরখানেক আগে সেলাই মেশিন কেনার জন্য দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন নিগমের কাছে। ঋণ নেওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই তাঁর স্বামী মারা যান। ঋণ মকুবের জন্য ওই মহিলা দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিগমের চেয়ারম্যানের। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার অনুরোধ শুনে অশ্রাব্য এক মন্তব্য করে চেয়ারম্যান প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে আমায় বের করে দেন।”
দুর্ব্যবহার চলছেই। নাসিফা সেই তালিকায় নতুন সংযোজন মাত্র। |