রথের মেলা করবে কে
যাত্রা শুরু সেই ১৭৭৬ সালে। অনেকে বলেন, জনপ্রিয়তার নিরিখে ওড়িশার পুরী ও হুগলির মাহেশের রথের পরেই পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথযাত্রা। কিন্তু এ বছর পঞ্চায়েত ভোটের গেরোয় সেই রথ উৎসবের আয়োজন প্রশ্নচিহ্নের মুখে। ওই এলাকাতেই ভোটকেন্দ্র হওয়ায় রাস্তার দু’পাশে কোথায় দোকানপাট বসবে তা নিয়ে চাপানউতোর চলছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল এ বার মেলার পরিচালনার দায়িত্ব ও ব্যায়ভার বহন করবে কে? আগে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতিই পুরো বিষয়টা দেখত। ৩০ জুন পঞ্চায়েত সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই অবস্থায় মেলা পরিচালনার দায়িত্ব কে নেবে তাই নিয়ে প্রশ্ন দানা বেধেছে। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, “এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। সর্বদল বৈঠক ডেকে প্রশাসনকে একটা ব্যবস্থা নিতে বলব।” মহিষাদল রাজ পরিবারের উত্তরসূরী হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, “নির্বাচনকে মেনে নিতেই হবে। আমাদের রথযাত্রাটি যতটা সম্ভব আচার মেনে করার চেষ্টাই করব।”
মেরামতির কাজ চলছে মহিষাদলের রথের।—নিজস্ব চিত্র।
কথিত আছে, স্থানীয় রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের পত্নী রানি জানকী এই রথযাত্রার সূচনা করেন। ঐতিহ্যবাহী এই রথযাত্রায় রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনমোহন জিউকে শুধু রথে তোলা হয়। বলরাম বা সুভদ্রার কোনও প্রতিকৃতি দেখা যায় না। সারা বছর এই রথ দেখভালের ভার রাজ পরিবারের। তবে রথ উৎসবের দিনগুলির মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমস্ত খরচ ও পরিচালনার দায়িত্ব স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতিই বহন করে। সময় স্রোতে ১৭টি চূড়া বিশিষ্ট এই রথের উচ্চতা কমে ১৩টি হয়েছে। কিন্তু উৎসবের জাঁক বেড়ে চলেছে দিন দিন।
এ বারও মহা সমারোহেই রথযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। সেই মতো রথ মেরামতের কাজও এগোচ্ছে। কিন্তু আচমকা ভোটের যে নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়েছে (পূর্ব মেদিনীপুরে ১৫ জুলাই), তাতে ভেস্তে যেতে বসেছে সমস্ত পরিকল্পনা। স্থানীয় চিকিৎসক নীলাঞ্জন চক্রবর্তীর কথায়, “রথযাত্রা হয়তো ঠিক ভাবেই হবে। কিন্তু রথযাত্রাকে ঘিরে যে ভাবে মেলা বসে, লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়, তা সম্ভব হবে কি না জানি না।”
প্রতি বছর রথতলা থেকে গুণ্ডিচা মাসির বাড়ি পর্যন্ত যায় ২৩৭ বছরের পুরোনো মহিষাদলের রথ। আগে গুণ্ডিচাবাটির দিকে মেলা বসলেও রাস্তা সরু হওয়ায় তা সরে যায় ছোলাবাড়ি এলাকায়। সিনেমা মোড় থেকে শুরু করে তেরাপেখ্যা মোড়, রাজবাড়ি সংলগ্ন ছোলাবাড়ি, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে সার দিয়ে বসে কাঁঠাল, বেতের সামগ্রী, জিলিপি, পাঁপড়, তেলেভাজার দোকান। এ বার রাজ হাইস্কুল ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সিনেমা মোড়, কলেজ রোড হয়ে গুণ্ডিচাবাটি যাওয়ার মূল রাস্তার বেশ কিছুটা অংশে দোকানপাট (রাজ হাইস্কুল পর্যন্ত) বসবে না বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ছোলাবাড়ির ময়দানটিও খালি রাখতে বলা হয়েছে গাড়ি রাখার জন্য। ফলে নাগরদোলা ইত্যাদি কোথায় বসবে, জানা নেই কারও। কলেজ রোডের ধারে রেস্তোরাঁ মালিক সুদীপ চক্রবর্তী হতাশ গলায় বলেন, “নতুন দোকান খুলেছি ভেবেছিলাম রথে। কিন্তু এই পথ রুদ্ধ হলে তা আর হবে না।”
স্থানীয় বিডিও তথা নির্বাচনী আধিকারিক প্রদ্যুতকুমার পালই বলেন, “ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় সমস্যা তো হলই। ছোলাবাড়ি বা কলেজের রাস্তা তো খালি রাখতে হবে। নির্বাচন নির্বিঘ্ন রেখে কী ভাবে রথ-উৎসব সুষ্ঠু ভাবে করা যায় তা নিয়ে বৈঠক ডাকব।”
হাতে আর এক সপ্তাহ আছে। এত অল্প দিনে কী ভাবে কী বন্দোবস্ত হবে প্রশাসনই জানে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.