কার্ড থাকলেও কাজে লাগাচ্ছেন না চাষিরা
কিষাণ ক্রেডিট কার্ড থাকলে মাত্র সাত শতাংশ সুদে কৃষিঋণ মেলে। নিখরচায় মেলে শস্য বিমাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে, ধানচাষিদের বিমার প্রিমিয়াম এখন দিচ্ছে রাজ্যই। বিমা করা খুব ঝামেলার কাজও নয়। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে কোনও ব্যাঙ্ক থেকে কৃষিঋণ নিলে আপনিই শস্যবিমা করে দেয় ব্যাঙ্কগুলি। অতএব মহাজনদের চড়া সুদ এড়াতে চাষিরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
অথচ দেখা যাচ্ছে, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড চাষিরা যথেষ্ট ব্যবহার করছেন না। ‘এগ্রিকালচার ইনসুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’-এর কলকাতার দফতর থেকে জানা গিয়েছে, ২০১২-১৩ সালে রাজ্যে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার আলুচাষি, আর বোরো চাষের মরসুমে (প্রধানত ধান চাষের জন্য) ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার চাষি কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণ নিয়েছেন। বিমাও পেয়েছেন।
কিন্তু তা কত কৃষকের প্রয়োজন মেটাবে? ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, রাজ্যে ৫১ লক্ষ চাষি নিজেদের জমি চাষ করেন। এঁদের মধ্যে ৬ লক্ষ মহিলা। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, জাতীয় ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং সমবায় ব্যাঙ্কের দেওয়া কার্ড মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মোট সংখ্যা ৪৩ লক্ষ ৫৯ হাজার। অর্থাত্‌ অধিকাংশ চাষিই কখনও না কখনও কার্ড পেয়েছেন।
অথচ কার্ড ব্যবহার করে ঋণ বা বিমার সুযোগ নিচ্ছেন খুব কম চাষি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী প্রায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার চাষি নিজের জমি চাষ করেন। চলতি বছরে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার চাষিকে। জেলার ব্যাঙ্ক কর্তারা জানাচ্ছেন, পুরনো কার্ড ছিল ৩ লক্ষ ৪০ হাজার। অর্থাত্‌ অধিকাংশই কখনও না কখনও কার্ড পেয়েছেন। অথচ দেখা যাচ্ছে। ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরে রবি মরসুমে পশ্চিম মেদিনীপুরে আলুর জন্য ৫৬ হাজার চাষি এবং বোরো ধানের জন্য ৪৫ হাজার মতো চাষি কিষান কার্ডে ঋণ ও বিমার সুবিধে নিয়েছেন। খারিফ মরসুমে কার্ড গ্রাহকদের মধ্যে ঋণসমেত ৬২ হাজার চাষি এবং ঋণ না-নিয়ে ৩৬ হাজার চাষি বিমা করেছেন। অর্থাত্‌ কার্ড গ্রাহকদের খুব কম অংশই কার্ড ব্যবহার করছেন।
তার একটা কারণ, সব চাষির কাছে কার্ড পৌঁছয়নি। কার্ড বিলির লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি, স্বীকার করেন জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার সমরেন্দ্র সন্নিগ্রাহী। “কত চাষি এখনও বাকি, তার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। কৃষি দফতর, ব্যাঙ্ক, ভূমি দফতর সহ বিভিন্ন দফতরের কাছে কার্ডহীন চাষিদের তালিকা চেয়েছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষি বিমা সহায়ক আধিকারিক নবকৃষ্ণ দাস বলেন, “জেলার চিত্র খুবই খারাপ। চাষিরা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
চাষিদের অনাগ্রহের কারণ কী, সে বিষয়ে নানা মত। প্রশাসনিক কর্তারা মনে করছেন, অধিকাংশ কৃষকই বিমার বিষয়টি জানেন। কিন্তু মহাজনদের একটি চক্র চাষিদের নিরুত্‌সাহ করছে। ব্যাঙ্কে গেলে হয়রানি হবে, কাগজপত্র লাগবে, সময়মতো ঋণ মিলবে না, এমন নানা কথা বলে চাষিদের সরকারি প্রকল্পের সুবিধে থেকে দূরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। “এ কথা অনেকেরই জানা, কিন্তু কোনও প্রমাণ না থাকায় কেউ কিছু বলছেন না,” বলেন কৃষি দফতরের এক আধিকারিক।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে কিন্তু দেখা গেল, মহাজনদের উপর তাঁদের নির্ভরতার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ঘাটালের মনসুকার সন্দীপ বেজ, দাসপুরের প্রফুল্ল ঘোষ, গড়বেতার সন্ধিপুরের বিষ্ণু কোটালরা বলেন, “আমরা মহাজনদের কাছ থেকে সহজে এবং সময় মতো টাকা ধার পাই। চাষ উঠলে তাঁরাই বাজারের ব্যবস্থাও করে দেন। ফলে সরকারি ঋণ নেওয়া হয়নি।” চড়া সুদ সত্ত্বেও মহাজনদের উপরেই ভরসা করছেন চাষিরা।
অনেক চাষি আবার ব্যাঙ্ক থেকে একবার ঋণ নেওয়ার পর আর ব্যাঙ্কমুখো হন না। টাকা দিয়ে টাকা ফেরত না পাওয়ায় অন্য কৃষকদের ঋণ দিতে নারাজ হয় ব্যাঙ্ক। এছাড়াও অনেক গ্রামে ব্যাঙ্কের অভাব, সমবায় থেকে বেশি অঙ্কের ঋণ না পাওয়া, এগুলো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এখন প্রশ্ন, কী ভাবে সরকারি বিমা প্রকল্প আরও ছড়ানো যাবে। চড়া সুদে ঋণ না নিয়ে চাষ করতে পারবেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “গ্রামে গ্রামে শিবির করে সরকার থেকে প্রতিটি ব্যাঙ্ককে ঋণ ও বিমার টার্গেট বেঁধে দেওয়া হলে, এবং ঠিকঠাক নজরদারি চালু করতে হবে।” তবে এমন চেষ্টাতে বাস্তবিক ফল কতটা হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান অন্যরা। প্রশাসনের আর এক কর্তা বলেন, “সরকার যতই প্রকল্প চালু করুক, এক শ্রেণির চাষি সব জেনে বুঝেও নানা ঝামেলা এড়াতে সরকারি ওই সুবিধাকে গুরুত্বই দেননি।”

কেন কিষান ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কম
• কার্ড বিলির লক্ষ্য পূরণ করা যাচ্ছে না।
• ব্যাঙ্কের প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিতে পারেন না বহু চাষি।
• কাগজ দিলেও হয়রান করছে, বারবার ঘোরাচ্ছে ব্যাঙ্ক।
• মহাজনরা কার্ড ব্যবহার করে নিরুত্‌সাহ করছে।
• ফসল বিপণনে মহাজনের উপরেই নির্ভরশীল চাষিরা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.