তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। আচমকা ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে বাঁদরভুলায় শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলের মূল দরজা ঠেলে হুড়মুড়িয়ে প্রাঙ্গণের ভিতর ঢুকে পড়ে একটি দাঁতাল হাতি। এই আশ্রমের ভিতর রয়েছে শিশু ও মেয়েদের মোট তিনটি স্কুল। ছাত্রীনিবাসে থাকে প্রায় দু’শো ছাত্রী। এছাড়াও থাকেন সন্ন্যাসিনী ও আশ্রমিকেরা। বেশ কিছুটা দূরে হই হই করে ছুটে আসছিলেন শ’দুয়েক লোকজন। ততক্ষণে আশ্রমের বাগানে গিয়ে শুঁড় দিয়ে গাছ নাড়িয়ে খসে পড়া পাকা আম খেতে থাকে হাতিটি। বেশ কয়েকখানি কলাগাছ সাবাড় করে যেই হেলে দুলে কাঁঠাল গাছের দিকে পা বাড়িয়েছে গজরাজ, অমনি পিছু নেওয়া আশেপাশের কয়েকশো গ্রামবাসী ও পুরনো ঝাড়গ্রামের লোকজন রে-রে করে আশ্রম প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। |
আশ্রমে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
মঙ্গলবার ভোর তিনটে নাগাদ ওই ঘটনায় হতচকিত হয়ে পড়েন সন্ন্যাসিনী ও আশ্রমিকরা। তাড়া খেয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক আশ্রমের চৌহদ্দির মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে হাতিটি। শেষ পর্যন্ত আশ্রমের পিছনে পূর্ব দিকের পাঁচিলের প্রায় ৪০ ফুট অংশ ভেঙে চম্পট দেয় হাতিটি। হাতির পিছু নেওয়া লোকজনও ফিরে যান। ফের পৌনে পাঁচটা নাগাদ ভাঙা পাঁচিলের ফোকর দিয়ে হাতিটি আশ্রম প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তখন অবশ্য ভোরের আলো ফুটে গিয়েছে। আশ্রমের মন্দিরে সমবেত প্রার্থনা চলছিল। হাতি দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় আবাসিক ছাত্রীরা। দ্বিতীয় দফায় বেশি লোকজন না থাকায় হাতিটি ধীরেসুস্থে আশ্রম প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াতে থেকে। উৎসাহী আশ্রমিকেরা মোবাইল ফোনে হাতিটির ছবিও তুলে রাখেন। আশ্রমের একটি ঘরে মজুত ছিল বেশ কিছু পাকা আম। চতুর হাতিটি দরজার ফাঁক দিয়ে শুঁড় গলিয়ে অর্ধেক আম সাবাড় করে দেয়। তারপর পৌনে ৬টা নাগাদ আশ্রমের পিছনের ভাঙা পাঁচিল দিয়ে কলাবনির জঙ্গলের দিকে চলে যায় হাতিটি। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ। আশ্রমের সহ সম্পাদিকা পরিব্রাজিকা আত্মহৃদয়া বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানটি জঙ্গল লাগোয়া হওয়ায় মাঝে মধ্যেই হাতি ঢুকে পড়ে। কিন্তু এব ার হাতি অনেকখানি পাঁচিল ভেঙে দেওয়ায় আমরা আতঙ্কিত।”
ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিস সামন্ত বলেন, “ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলে তিনটি রেসিডেন্সিয়াল হাতি আছে। তারই একটি গত রাতে শহর সংলগ্ন আশে পাশের লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল। বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে হাতিটি শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলে ঢুকেছিল। আশ্রম কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে পাঁচিল ভাঙার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’ |