স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে বেশ কিছু ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলেন স্বামী। আধা ঘুমের মধ্যেই স্ত্রীর উদ্দেশে তিন বার তালাক বলে বসেন। তা শুনেছিল নাবালিকা মেয়ে। কথা ওঠে পাড়া-পড়শির কানেও। গাঁয়ের মাতব্বরেরা নিদান দেন, বাড়ি ছাড়তে হবে স্ত্রীকে। স্বামী বেঁকে বসায় গ্রামছাড়া হতে হয়েছে সপরিবার।
ঘটনাটি খানাকুলের কুশালি গ্রামের মোল্লাপাড়ার। গত শুক্রবার স্ত্রী, চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন মধ্যবয়সী মোসলেউদ্দিন মোল্লা। গ্রামের লোকের চাপে আঠারো বছরের দাম্পত্যে ইতি টানতে নারাজ তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আরামবাগের এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র। পরিবারটিকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ও।
এর আগেও মোসলেউদ্দিনের সঙ্গে স্ত্রী নাসরিন বেগমের দাম্পত্য কলহ বেধেছে। পাড়া-প্রতিবেশীদেরও তা অজানা নয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এক দিন ঝগড়া মাত্রা ছাড়ায়। একাধিক ঘুমের ট্যাবলেট, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে রাগের মাথায় ঘুমিয়ে পড়েন মোসলেউদ্দিন। নাসরিন বলেন, “সে দিন উনি খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। ঘুমের ঘোরেই মেয়েকে বলেন, আমাকে তালাক দিয়েছেন। পরে অবশ্য জানান, ওষুধের বিকারেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। আমি সংসার ছেড়ে চলে যাই, সেটা উনি চান না। কিন্তু ঘটনা শুনে গ্রামের লোকজন আমাদের সংসার করতে দিতে চাইছে না।” মোসলেউদ্দিনের কথায় বলেন, “ঘুমের মধ্যে কী বলতে কী বলে ফেলেছি। কিন্তু তা তো মন থেকে বলিনি। এ ভাবে তালাক দেওয়া যায় না। কিন্তু গ্রামের কিছু লোক সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, হয় তালাক দাও। না হলে একঘরে করা হবে। নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। বাধ্য হয়ে সপরিবার গ্রামছাড়া হয়েছি।”
বস্তুত, শরিয়তবেত্তারা জানাচ্ছেন, তালাক দেওয়ার প্রক্রিয়া এত সহজ নয়। তিন বার তালাক উচ্চারণ করলেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে না। এর আরও অনেক নিয়ম-কানুন আছে। কিন্তু মুসলিম সমাজে নানা অছিলায় শরিয়তি সিদ্ধান্ত না মেনেই তালাক দেওয়ার চল আছে। যা এক কথায় অমানবিক।
মোসলেউদ্দিনদের সমস্যার কথা উঠেছিল পুলিশ-প্রশাসনের কানে। গ্রামে পুলিশ আসে। কিন্তু মোল্লা-মাতব্বরদের বোঝানো যায়নি। মোসলেউদ্দিন পেশায় ফেরিওয়ালা। গ্রামছাড়া হওয়ায় পেশাগত সমস্যায় পড়েছেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে। ওই ব্যক্তি বলেন, “বিপদ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন মসজিদে যোগাযোগ করেছিলাম। সকলেই জানিয়েছেন এমন ভাবে তালাক দেওয়া কখনও আইনসিদ্ধ হতে পারে না। কিন্তু গ্রামের লোককে তা বোঝাতে পারিনি।”
মোল্লাপাড়ার মানুষ অবশ্য এককাট্টা। পাড়ার বাসিন্দা আনিস মোল্লা বলেন, “আমরা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছি, ওই ঘটনার পরে স্বামী-স্ত্রী এক ঘরে থাকা যাবে না। তবে ওঁদের ঘরছাড়া করার অভিযোগ মিথ্যা।”
|