হাওড়া শহরে একতলার চেয়ে উঁচু বাড়ি সারানোর ক্ষেত্রে এ বার দমকলের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি হাওড়া পুরসভাকে চিঠি দিয়ে এমনই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অভিযোগ, হাওড়া পুরসভা দীর্ঘ দিন ধরে অগ্নি-নির্বাপণ দফতরের কোনও অনুমতি না নিয়েই লাগাতার বহুতল তৈরি বা সারানোর অনুমতি দিয়ে আসছে। ফলে বাড়ি সারানোর নামে অবৈধ নির্মাণকাজ চলছে। সেই বিষয়টি কড়া হাতে আটকাতে এখন থেকে একতলার চেয়ে উঁচু বাড়ি তৈরি করতে বা সারাতে গেলেও স্থানীয় দমকল অধিকর্তার অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হল।
রাজ্য সরকারের যুক্তি, শহর জুড়ে আগুন লাগার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষত, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুন বেশি লাগছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহরে ১৪.৫ মিটার উচ্চতার মধ্যে যে সব বাড়ি আছে, সেগুলি সারাতে গেলে বা তার উপরে নির্মাণ করতে গেলে এ বার স্থানীয় দমকল অধিকর্তার লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং তার পরেই পুর-কর্তৃপক্ষ নির্মাণ বা সারানোর অনুমতি দিতে পারবেন।
সম্প্রতি হাওড়া পুর-কমিশনারের কাছে এই নির্দেশ আসার পরে বামফ্রন্ট শাসিত পুরবোর্ডে কার্যত হইচই পড়ে গিয়েছে। মেয়র মমতা জয়সোয়াল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়বেন। বাড়ি সারাতে গেলেও অগ্নি-নির্বাপণ দফতরের অনুমতির জন্য ছোটাছুটি করতে হবে।” মেয়রের বক্তব্য, “এতে শহরে অবৈধ বাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, অধিকাংশ বাড়ির মালিকই বাড়ি তৈরি বা সারানোর আগে অগ্নি-নির্বাপণ দফতরের ঝামেলা এড়াতে আর পুরসভারও অনুমতি নেবেন না।”
কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বক্তব্য, গত ২০ বছরে হাওড়া শহরে বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা বহু গুণ বেড়েছে। কিন্তু অগ্নিবিধির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বিশেষত পিলখানা, সালকিয়া, বাঁধাঘাট, ডবসন রোড ইত্যাদি এলাকায় বহুতল বাড়ির উপরে বেআইনি ভাবে আরও একটি তল বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। হাওড়ার পুর-কমিশনারকে তাই নোটিস পাঠিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, হাওড়ার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিপজ্জনক ভাবে এই অবৈধ নির্মাণ চললেও কোনও ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কোনও দাহ্য বস্তুর ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স পেতে গেলে যেমন অগ্নি-নির্বাপণ দফতরের অনুমতির প্রয়োজন, তেমনই বাড়ি সারানো বা তৈরির ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু তা কোনও ক্ষেত্রেই মেনে চলা হয়নি।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আড়াই মিটারের উপরে বাড়ি করতে গেলে বা সারাতে গেলে স্থানীয় দমকল অধিকর্তার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, হাওড়া পুরসভা কোনও দিন তা মেনে চলেনি। তাই এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হল।” পুরমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “অবৈধ নির্মাণ রুখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অবৈধ নির্মাণকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়।”
|