নুরুল আবসার • উদয়নারায়ণপুর
|
সন্ত্রাস হচ্ছে, এই দাবিতে জেলা প্রশাসনের কাছে সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে ভোট করানোর দাবি করেছেন অনেক প্রার্থীই। কিন্তু হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে এমন অভিযোগ পেয়ে তাজ্জব পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। একে তো শাসক দলের প্রার্থীই করেছেন সেই দাবি। তা-ও আবার তাঁর বিরুদ্ধে সিপিএম প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রয়েছেন কংগ্রেস এবং নির্দল প্রার্থী। এ দিকে উদয়নারায়ণপুরে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসনে ওয়াক-ওভার পেয়ে গিয়েছে তৃণমূলই। তা হলে সন্ত্রাস কীসের?
|
সরোজ কাঁড়ার |
সমস্যার মূলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী সরোজ কাঁড়ার মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। উদয়নারায়ণপুরে দলের বিধানসভা কেন্দ্র সভাপতি তথা বর্তমান বিধায়ক সমীর পাঁজা তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সমীরবাবুই প্রথমে জেলা পরিষদের চারটি আসনে প্রার্থী ঠিক করেন। তাতে সরোজবাবুর নাম ছিল না। পরে দলের রাজ্য কমিটি সমীরবাবুর তালিকা থেকে একটি বাদ দিয়ে সেই জায়গায় সরোজবাবুকে প্রার্থী করে। বিবাদের সূত্রপাত সেই থেকেই। সরোজবাবুর অভিযোগ, সমীরবাবুই নির্দল প্রার্থীকে সরোজবাবুর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন।
সরোজবাবু পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন, ৩৭ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের সব বুথে সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে ভোট করাতে হবে। সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারের কটাক্ষ, “উদয়নারায়ণপুরে তৃণমূলের সন্ত্রাসে আমাদের লোকেরা প্রার্থী হতে পারেননি। এখন সরোজবাবু যে অভিযোগ করছেন, তাতে বোঝা গেল, মিথ্যা বলিনি। তবে এই সন্ত্রাস তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়ও মেনেছেন, “ওখানে একটা সমস্যা হয়েছে।”
এলাকার রাজনীতিতে সরোজবাবু পুরনো মুখ। ১৯৭২-১৯৭৭ কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূলে যোগ দেন। সরোজবাবুর অভিযোগ, “আমার অনুগামী এবং ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভোটারদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি বুথে সশস্ত্র পুলিশ প্রহরা চেয়েছি। বিষয়টি আমি জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। এক নির্দল প্রার্থীকে সামনে রেখে সমীরবাবুই এ সব কাণ্ড করাচ্ছেন।”
সমীরবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “দলে গোড়া থেকে আছি। যখন এলাকায় সংগঠন গড়ে তুলি তখন সরোজবাবু সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের মারধর করেছিলেন।” তবে নির্দল প্রার্থীকে মদত দেওয়ার অভিযোগ তিনি মানেননি। তিনি বলেন, “সরোজবাবুর অতীত কীর্তি দেখে তাঁর হয়ে নির্বাচনে খাটতে চাইছেন না দলের অনেকে। তাঁরা নির্দল প্রার্থীর হয়ে খাটছেন। নিজে যতটা পারছি দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচার করছি।” মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “সরোজবাবু কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমি বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, সমস্যা হবে না।” তবে জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, মন্ত্রী-সহ দলের একাধিক জেলা স্তরের নেতা ওই ঘটনায় বিব্রত।
সরোজবাবুর অভিযোগ পেয়ে কী করলেন? জেলা পুলিশের একাধিক কর্তা বলেছেন, “ভেবেছিলাম, ওই এলাকায় যেহেতু শাসক দল অনেক আসনেই বিনা লড়াইয়ে জিতেছে, তা-ই ঝামেলা-ঝক্কি আর হবে না। এখন দেখছি, ভুল ভেবেছিলাম।” |