গোটা দুনিয়ায় তখন সদ্য চিন আর ভারতের নাম একই শ্বাসে উচ্চারিত হইতে আরম্ভ হইয়াছিল। সম্ভবত সেই মুহূর্তেই ভারতীয় নেতারা ভাবিয়া বসিয়াছিলেন, চিনের পথই আমাদের পথ। চিনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রভূত সাফল্য পাইয়াছে। অতএব, ভারতেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চাই। সেই চাহিদা মানিয়াই দেশে মোট ৫৭৭টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ছাড়পত্র দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু চিন যাহা পারে, ভারতও তাহাই পারিবে; চিনে যাহা সম্ভব, ভারতেও তাহাই সম্ভব হইবে এমন দাবি করিলে মুশকিল। ভারতে যে উদ্দেশ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি তৈরি হইয়াছিল, সেই উদ্দেশ্য সফল হয় নাই। মাত্র ১৭০টি অঞ্চল চালু হইয়াছে। তাহাতেও উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির জোয়ার আসে নাই বেশির ভাগ অঞ্চলের মুখই পরিষেবার দিকে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রক সিদ্ধান্ত করিল, আর নূতন অঞ্চল নহে। অবশ্য, সিদ্ধান্তটি এখনই কার্যকর হইতেছে না মাসছয়েক পরে, একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে হইবে। অত অপেক্ষার প্রয়োজন কী? ভাল সিদ্ধান্ত, কালক্ষেপ না করিয়াই তাহা কার্যকর করুন।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল লইয়া আপত্তি বহুবিধ। অঞ্চলগুলি যে সুবিধা পায়, তাহার প্রতিদানে দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট লাভ করিতেছে কি না, তাহাই মূল প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হওয়া মুশকিল। প্রথম কথা, অঞ্চল গড়িতে জমি দেওয়া হয় নামমাত্র মূল্যে। সেই জমির বাজারদর অনেক। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়াছে, শিল্প আসলে মুখোশমাত্র সেই জমি ব্যবহৃত হইতেছে রিয়াল এস্টেটের ব্যবসায়। দ্বিতীয়ত, অঞ্চলের শিল্পগুলিকে যে বিপুল কর ছাড় দেওয়া হয়, তাহা নিতান্তই রাজকোষের ক্ষতি। কারণ, এই অঞ্চলগুলিতে শিল্পোৎপাদন কখনও এমন মাত্রায় পৌঁছায় নাই যাহাতে রফতানির লাভে করছাড়ের ক্ষতি পুষাইয়া যাইবে। অঞ্চলগুলির একটি বড় অংশ জুড়িয়া আছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে করছাড়ের মেয়াদ ফুরাইবার আশঙ্কায় তাহারা নূতন আশ্রয় হিসাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিকে বাছিয়া লইয়াছিল। তাহাতে তো এই অঞ্চল গঠনের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। প্রকল্পটি ব্যর্থ হইয়াছে। এই বার বন্ধ হইলেই হয়।
এক কালে বাণিজ্য মন্ত্রকই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রবল সমর্থক ছিল। এখন তাহার হাতে নূতন পরিকল্পনা আসিয়াছে ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট জোন। অর্থাৎ, যে কোনও ক্ষেত্রে বিনিয়োগ নহে, কেবলমাত্র উৎপাদন ক্ষেত্রের দিকেই নজর ফিরাইয়াছে সরকার। আপাতদৃষ্টিতে আপত্তির কোনও কারণ নাই। কিন্তু যে কারণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি ব্যর্থ হইয়াছে, সেই কারণগুলি নূতন প্রকল্পের পথেও বাধা হইতে পারে। শ্রম আইন এখনও সেংশাধিত হয় নাই। পরিকাঠামোও উনিশ শতকে পড়িয়া আছে। এই প্রশ্নগুলির দিকে নজর ফিরানো প্রয়োজন। কোনও বিচ্ছিন্ন অঞ্চল বাছিয়া নহে, সামগ্রিক শিল্পোন্নয়নের চেষ্টা ছাড়া ভারতের উপায়ান্তর নাই। |