সম্পাদকীয় ১...
ত্রাণ-যুদ্ধ
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভারতে আগেও অনেক ঘটিয়াছে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামিতে হাজার-হাজার মানুষ নিহত হইয়াছেন। বন্যা তো নদীমাতৃক এই মরসুমি বর্ষণজর্জরিত দেশে প্রায় বাৎসরিক রুটিন। কিন্তু অতীতে কখনও বিপর্যয়ের দায় লইয়া, বিপর্যস্ত মানুষদের উদ্ধার ও ত্রাণ লইয়া রাজনৈতিক দল ও তাহাদের নেতাদের মধ্যে এমন চাপান-উতোর, কাদা-ছোড়াছুড়ি, ব্যক্তিগত আক্রমণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গিয়াছে বলে মনে হয় না। গুজরাত-কেশরী নরেন্দ্র মোদীর উত্তরাখণ্ডে গিয়া কেবল গুজরাতি দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণের উদ্যোগ এবং ‘১৫ হাজার দুর্গতকে উদ্ধার করার’ কৃতিত্ব দাবি দিয়াই এই প্রহসন-পর্বের শুরু। এই দাবির সত্যতা ও গুরুত্ব প্রমাণের জন্য যেমন তাঁহার নিজস্ব জনসংযোগ-রক্ষাকারী গোষ্ঠীটি সদাব্যস্ত, তেমনই তাঁহার বিরোধীরা তাঁহার দায়বহনের গুরুত্ব কমানোর জন্য প্রথমাবধি হাস্য-পরিহাসের মাধ্যমে বিশেষ ভাবে সচেষ্ট থাকিয়াছে। উত্তরাখণ্ডের অতি-প্রতিকূল ধ্বস্তভূমি হইতে এত সংখ্যক মানুষকে একক দায়িত্বে উদ্ধারের দাবির মধ্যে যে অসাধ্য-সাধনের অহমিকা আছে, তাহার প্রতি উল্লেখপূর্বক কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি এবং অন্যান্য বিরোধী নেতারা এমনকী নরেন্দ্র মোদীর সহিত হলিউডি নায়ক ‘র্যাম্বো’র তুলনা করিতেও ছাড়েন নাই।
ভারতীয় রাজনীতি অঙ্গন যে প্রধানত বাগ্যুুদ্ধ ও প্রদর্শন-প্রতিযোগিতার অঙ্গন, তাহা আরও এক বার প্রমাণ করিবার জন্য প্রধান দলগুলি উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী কেন এমন বিপর্যয়ের সময় বিদেশে, কেন দুর্গতত্রাণে তিনি অনুপস্থিত ইত্যাদি প্রশ্ন উঠিতেছে। সম্ভবত এই আক্রমণে প্ররোচিত হইয়া রাহুল ত্বরিত প্রত্যাবর্তন করিয়া সপারিষদ উত্তরাখণ্ড যাত্রা করিয়াছেন এবং কংগ্রেস-শাসিত এই রাজ্যের প্রশাসনকে তটস্থ, সন্ত্রস্ত করিয়া ত্রাণকার্যে ব্যাঘাত ঘটাইয়াছেন। এত সংখ্যক মানুষের জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে কোনও রকম অসুবিধা ঘটানো অপরাধের নামান্তর, কিন্তু কী রাহুল, কী নরেন্দ্র, কেহই এ বিষয়ে এক বিন্দুও ভাবিত বলিয়া মনে হয় নাই। বাস্তবিক, রাহুল গাঁধী কিংবা নরেন্দ্র মোদী, কোনও ভিআইপি-রই উত্তরাখণ্ডে সরজমিন সফরের কোনও আবশ্যকতা ছিল না। উদ্ধার ও ত্রাণের কাজ প্রধানত সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর জওয়ান এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরাই করিয়াছেন। এমন বৃহৎ আকারের বিপর্যয়ে প্রশাসনকেও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলির মধ্যে জরুরি সমন্বয় সাধনের কাজ করিতে হয়, যানবাহন, ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করিতে হয়, অস্থায়ী ত্রাণশিবির গড়িতে হয় এবং স্থায়ী পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করিতে হয়। এই জটিল ও বহুমুখী কর্তব্য সম্পাদনের কাজটি অকারণ বিঘ্নিত হইয়াছে ভিআইপি-দের সফরে।
অবশ্য এই সমস্যা নূতন নহে। সুনামি-র ত্রাণকার্যের ক্ষেত্রেও এই একই অভিযোগ প্রবল ভাবে উঠিয়াছিল, রাজ্যে রাজ্যে আজও বার বার এই একই সমস্যা দেখা যায়। সংকটের অকুস্থলে গিয়া ভিআইপিরা অন্যের কোনওই সুবিধা করেন না, কেবল নিজেদের সুবিধা তৈরি করেন। নিজেদের ভাবমূর্তি নির্মাণ করেন, যাহাতে আখেরে তাঁহাদের রাজনৈতিক মুনাফা হয়। রাজনীতি প্রতিযোগিতামূলক, ভাবমূর্তির প্রতিযোগিতাও তীব্র। হিন্দু হৃদয়সম্রাট নরেন্দ্র মোদীর সংকটভূমিতে ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হইয়া কেদারনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের ব্যয়বহন করার অঙ্গীকারের পাল্টা হিসাবে অবশ্যই কংগ্রেসের যুবরাজ রাহুল গাঁধীকে তড়িঘড়ি উত্তরাখণ্ড সফরের নির্ঘণ্ট বানাইতে হয়। কেহ আবার ভাবমূর্তির কাজে গাফিলতি করেন, এবং বিরোধীদের বিস্তর অপমানের লক্ষ্য হন। রাজস্থানের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া বর্তমান কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতকে দোষারোপ করেন রাজ্যের পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের উদ্ধার ও ত্রাণে উত্তরাখণ্ডে সরজমিনে না-যাওয়ার কারণে। অথচ উত্তরাখণ্ডের সরকারই এই ব্যাপক ত্রাণকার্যের সমস্ত ব্যবস্থা করিতেছে, দেশের কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীও সদাব্যস্ত রহিয়াছে। তাহা সত্ত্বেও এই অর্বাচীন প্রতিযোগিতা, কুরুচিকর প্রদর্শনপ্রিয়তা না দেখাইলেই নয়? আর কিছু না হোক, চক্ষুলজ্জার দোহাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.