|
|
|
|
|
আড়ি পাতার কেন্দ্রীয় আইনকে তোপ মমতার
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চলছেই। তার মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ফোনে আড়ি পাতার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “ইউপিএ-র দ্বিতীয় দফার সরকারের হাতে দেশের মানুষের গোপনীয়তা বিপন্ন।” বিরোধীদের চুপ করিয়ে রাখার জন্যই ইউপিএ সরকার এই ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে সম্প্রতি জানা গিয়েছে, আমেরিকার প্রিজম প্রোগ্রামের মতোই ‘সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেম’ (সিএমএস) নামে একটি নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করেছে মনমোহন সিংহের সরকার। এখনও সেটি চালু হয়নি। কিন্তু এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে আদালত এবং সংসদের তদারকি ছাড়াই কোনও ব্যক্তির ই-মেল বা ফোনে আড়ি পাততে পারবেন গোয়েন্দারা। ইন্টারনেট বা ফেসবুক-ট্যুইটারে ব্যবহারকারীরা কী লিখছেন, তা-ও জানতে পারবেন তাঁরা। বর্তমানে কোনও ব্যক্তির ফোন বা ইন্টারনেটে আড়ি পাততে গেলে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। পরে সংশ্লিষ্ট ফোন বা নেট সংস্থার সাহায্য নিতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় এ সবের প্রয়োজন হবে না বলেই জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সি-ডট প্রযুক্তির মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলির দফতরেও সরকারি আড়িপাতার ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে।
২০১১ সালেই মনমোহন সরকারের এই সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেমের কথা প্রকাশ্যে আসে। তখনই বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু করে। তবে কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সরব হয়নি। আজ মমতা মুখ খোলার পরেও অবশ্য কেন্দ্রের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর শঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। দেশের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার জন্যই এমন ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছে। এর ফলে নাশকতা এবং জঙ্গি হামলার আগাম আঁচ পেতে সুবিধা হবে বলেই দাবি মন্ত্রক সূত্রের। তাদের বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক স্বার্থে এই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কেন্দ্রের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি আমেরিকার প্রিজম প্রোগ্রামের (যা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে চাপানউতোর চলছে) সঙ্গে সিএমএস-এর তুলনা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আগামী বছর মার্চের মধ্যে কলকাতা, কেরল এবং কর্নাটকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। কেন্দ্রের পরিকল্পনা রয়েছে মোট ১২টি রাজ্যকে এর আওতাভূক্ত করার। কেন ইউপিএ সরকার নজরদারির এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থা গড়ে তুলছে?” এর পরেই ক্ষুব্ধ মমতার প্রশ্ন, “বিরোধী এবং বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্যই কি এটা করা হচ্ছে? কার উপর আড়ি পাতা হবে, তা কে স্থির করবেন? এটা কি সংবিধান প্রদত্ত বাক স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ নয়?” মমতার মতে, সংসদে আলোচনা না করে কোনও রাজনৈতিক দলের মত না নিয়ে এই ব্যবস্থা মানুষের ঘাড়ে চাপানোটা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর সঙ্গে মানানসই নয়।
মমতা সংবিধানের উল্লেখ করে বাক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলেও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার বিভাগের অধ্যাপক পবন সিন্হার অবশ্য বক্তব্য, ভারতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে কোনও আইন নেই। তবে আদালতের তদারকি ছাড়া নজরদারি চালানো হলে অপব্যবহারের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। |
|
|
|
|
|