|
|
|
|
টিপাইমুখ প্রকল্প নতুন করে পর্যালোচনার দাবি
উত্তম সাহা • শিলচর |
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় বরাক উপত্যকার মানুষকেও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এখানে যদিও চারধামের মতো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে নেই হিমালয়। এখনও নেই কোনও বৃহৎ জলাধার। এমনকী মেঘ ভেঙে বিপন্ন করে তুলবে, এমনটাও নয়। তবে আছে বরাক নদী, যাকে বেঁধে রেখে মণিপুরের টিপাইমুখে ১৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র।
বাংলাদেশের আপত্তি, বরাক উপত্যকায় পরিবেশপ্রেমীদের আন্দোলন এবং বাঁধটি নির্মিত হলে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন— এই সকলের মিলিত প্রতিবাদে যদিও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি টিপাইমুখে, কিন্তু যে কোনও দিন নির্মাণ শুরুর আশঙ্কায় ভুগছেন বরাকের মানুষ। উত্তরাখণ্ডের ঘটনার পর নতুন করে পরিবেশ মন্ত্রকের টিপাইমুখ রিপোর্ট আলোচনায় উঠে এসেছে।
কী আছে ওই রিপোর্টে? ২০০৮ সালের ২৪ অক্টোবর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্র পায়। এতে বলা হয়েছে: যদি বাঁধটি ভেঙে যায়, তবে যে সব এলাকা জলের তলায় ডুবে যেতে পারে, সেখানকার জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য আগে থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা চাই। মনে রাখতে হবে, বাঁধ ভাঙলে ঘনবসতিপূর্ণ শিলচর শহরের উপর দিয়ে জল ৩ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় বইবে। সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে ‘রিয়েল টাইম টেলিমেট্রি স্টেশন’ তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। এই স্টেশনগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সরাসরি সংযোগ থাকবে এবং বিপর্যয়ের ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা আগে তারা বিপদ-সংকেত দেবে।
উত্তরাখণ্ড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বরাকের মানুষের আশঙ্কার কথা জানিয়ে নতুন করে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। একটি সংগঠনের ম্যানেজিং ট্রাস্টি রাজদীপ রায় চিঠি পাঠিয়ে মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, ছাড়পত্রটি যেন আরও একবার পর্যালোচনা করা হয়। তাঁর কথায়, একে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে ৭৮ লক্ষ গাছ কাটা পড়বে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ২৭ হাজার বাঁশঝাড়। সে জন্য বনবিভাগ এখনও ছাড়পত্র দেয়নি। কারণ এত গাছপালা উজানে ধ্বংস হলে ভাটিতে এর প্রভাব পড়বেই। সর্বোপরি এই অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ হিসেবে সবচেয়ে ঝুঁকিবহুল ৫ নম্বর জোনের অন্তর্গত। এর আগে টিপাইমুখ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দু’বার ভূকম্পনের মাত্রা সাড়ে আট রিখটার স্কেল ছাড়িয়ে গিয়েছে। সাত রিখটারে ভূমিকম্প হয়েছে ১৬ বার।
১৯২৯-৩০ সালে বরাক নদীর ভয়াবহ বন্যার পর উজানে জল আটকে রাখার কথাবার্তা প্রথম শুরু হয়। পঞ্চাশের দশকে ময়নাডহর, ভুবনডহর ও নারায়ণডহরে তিনটি জলাধার তৈরির প্রস্তাব আসে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৪ সালে টিপাইমুখে বৃহৎ বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। মিজোরাম থেকে আসা তুইবা নদী যেখানে বরাক নদীতে মিশেছে তার পাঁচশো মিটার দূরে, ভাটিতে জায়গা চিহ্নিত হয়। বন বিভাগের ছাড়পত্র এবং কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির অনুমোদন অবশ্য এখনও মেলেনি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ তীব্র আপত্তি তুলেছে। তাদের আশঙ্কা, উজানে বরাকের জল আটকে রাখা হলে খরার সময় বাংলাদেশে জলসঙ্কট দেখা দেবে, আবার বর্ষায় তারা বন্যার কবলে পড়বে। বাঁধের বিরোধিতায় আন্দোলন করছে এই অঞ্চলের বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিও। একটি সংগঠনের সম্পাদক, পীযূষকান্তি দাস বলেন, প্রস্তাবিত বাঁধটি ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৮১ মিটার উঁচু হবে বলে ধরা হয়েছে। ফলে ভূমিকম্প বা অন্য যে কোনও কারণে ভেঙে গেলে উত্তরাখণ্ডের চেয়ে আরও বড় মাত্রায় বিপর্যয় দেখা দেবে বরাক উপত্যকায়। |
|
|
|
|
|