ত্রিফলা কেলেঙ্কারি
অনিয়মের নালিশ সিএজির, জবাব খুঁজছে পুরসভা
ত্রিফলা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিএজি (কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল)-র খসড়া রিপোর্ট হাতে পেয়ে ঘুম ছুটেছে কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষের। ২৬ জুন পুরসভার কাছে ওই খসড়া রিপোর্ট পাঠিয়ে দশ দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেছে সিএজি। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই পুরসভা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এক পুরকর্তার মতে, “সিএজি যে ১২ দফা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে, তার জবাব হয় না। তবু নিয়ম মেনে কিছু একটা জবাব দিতে হবে।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “জবাব তৈরি হচ্ছে। ঠিক সময়েই তা দেওয়া হবে।”
কলকাতায় ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানোয় অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত করে সিএজি। কয়েক মাস ধরে তদন্তের পরে একটি খসড়া রিপোর্ট তৈরি করে তারা পুরসভাকে পাঠায়। অভিযোগগুলির জবাব ঠিক করতে সোম ও মঙ্গলবার বৈঠক করেন পুরকর্তারা। বৈঠকে আলো বিভাগের অফিসাররা জানিয়ে দেন, সিএজি-র রিপোর্টে লেখা অধিকাংশ অনিয়মের অভিযোগ ভুল প্রমাণ করার সুনির্দিষ্ট তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তা-ও পুর কমিশনারের নির্দেশে একটা উত্তরপত্র তৈরি করেছে আলো বিভাগ।
কী অভিযোগ করেছে সিএজি?
পুরসভা সূত্রের খবর, বলা হয়েছে, পুরসভার অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানোর মতো ব্যয়সাপেক্ষ কাজে হাত দেওয়াটাই বেআইনি। বিজ্ঞাপন না দিয়ে বাতিস্তম্ভ বসানোর কাজও অনিয়ম।
সিএজি-র রিপোর্টে আলো দফতরের (এরাই নোডাল দফতর) মেয়র পারিষদ মনজার ইকবালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, দরপত্র না ডেকে শুধু তাৎক্ষণিক নোটিস দিয়ে বাছাই করা ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে ত্রিফলার কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে, যার মূল দায়িত্বে ছিলেন আলো বিভাগের এই মেয়র পারিষদ। তবে সিএজি অভিযোগ করলেও মনজারের কাজে দোষের দেখছেন না মেয়র। তাঁর কথায়, “কাজ করতে হলে তো মেয়র পারিষদকে অনুমোদন দিতেই হবে। তিনি তাই-ই করেছেন।” কিন্তু ত্রিফলা কেলেঙ্কারির জন্য শুধু ডিজি (আলো)-কে কেন ‘শো-কজ’ করা হল, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি পুরকর্তারা।
অনিয়মের আরও অভিযোগ তুলে সিএজি বলেছে, ত্রিফলা বাতি ও স্তম্ভ-সহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনার জন্য আলো বিভাগ যে দাম ঠিক করে দিয়েছিল, চলতি বাজার দরের থেকে তা যথেষ্ট বেশি। কলকাতায় ১০ হাজার বাতিস্তম্ভ লাগাতে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে অতিরিক্ত প্রায় ৮ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা বেরিয়েছে। তদন্তের কাজে পুরসভার অসহযোগিতার অভিযোগও রিপোর্টে তুলেছে সিএজি। তাদের পক্ষে রেসিডেন্ট অডিট অফিসার লিখেছেন, ত্রিফলা-অনিয়ম নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ আগেই অভ্যন্তরীণ অডিট করেছে। কিন্তু চাওয়া সত্ত্বেও রিপোর্টের প্রতিলিপি তাঁদের দেওয়া হয়নি।
এমন ১২ দফা অনিয়ম-অভিযোগের সব ক’টির জবাব পাননি পুরকর্তারা। তবু একটি উত্তরপত্র তৈরি করা হয়েছে। তাতে কী বলা হচ্ছে?
পুরসভা সূত্রে খবর, বলা হচ্ছে তাড়াহুড়োর কারণেই দরপত্র ডাকা যায়নি, এবং দ্রুত কাজ করতে চেয়ে মেয়র পারিষদ এবং ডিজি (আলো)-র অনুমোদনের ভিত্তিতেই ‘স্পট টেন্ডার’ ডাকা হয়েছে। কৈফিয়ত দিয়ে পুরসভা লিখছে, বাতিস্তম্ভ লাগানোর খরচের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদনের লাগেনি। কারণ, ২৭ কোটি টাকার কাজটি ৫ লক্ষ টাকার কম মূল্যের ৫৪০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যা অনুমোদনের জন্য মেয়র পারিষদ (আলো)-এর অনুমোদনই যথেষ্ট বলে তাঁরা মনে করেছেন। এই কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সিএজি। জবাবে তা ঠিক নয় বলা হচ্ছে। তবে সিএজি দর বেশি দেওয়ার অভিযোগ তুললেও, তা নিয়ে সরাসরি উত্তর দেওয়া হচ্ছে না।
শনিবারের মধ্যে পুরসভার কাছ থেকে জবাব মেলার পরেই ত্রিফলা কেলেঙ্কারি নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করবে সিএজি। তার পর তা যাবে কেন্দ্রের কাছে। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “খরচের প্রশ্ন তুলে আগে কখনও পুরসভার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেয়নি সিএজি।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.