পুরসভার নিজস্ব অডিটে কলকাতার পথে পথে ত্রিফলা আলো লাগানোয় অনিয়ম ধরা পড়েছে আগেই। এ বার সেই কেলেঙ্কারি নিয়ে বিশেষ তদন্ত শুরু করল কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)। পুরসভা সূত্রের খবর, সোমবার সিএজি-র এক দল প্রতিনিধি পুরসভার আলো দফতরের ডিজি-র সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা করেন। ত্রিফলা নিয়ে ইতিমধ্যেই পুরসভা যে-অডিট করেছে, তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও চান তাঁরা।
কিন্তু সিএজি-র কাজে পুর-কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবেন কি?
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কিংবা পুর কমিশনার খলিল আহমেদ এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুরসভা সূত্রের খবর, কর্তৃপক্ষ এখনই ত্রিফলায় অনিয়মের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্টটি সিএজি-র হাতে তুলে দিতে চাইছেন না।
প্রথমে সিএজি-কে ত্রিফলার নথিপত্রও দিতে চায়নি পুরসভা। গত বছর ত্রিফলা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেই পুরসভার কাছে সেই সংক্রান্ত ফাইলপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিল সিএজি-র রাজ্য শাখা। পুরসভা তা দিতে অস্বীকার করে। মাস চারেক পরে মহাকরণের চাপে পুর-প্রশাসন তাদের অফিসে গিয়ে সিএজি-র প্রতিনিধিদের ফাইলপত্র দেখার অনুমতি দেয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পুরসভার অডিট চলতে থাকায় সিএজি এত দিন চুপচাপ ছিল।
অবশেষে তদন্তের কাজে নেমে সিএজি-র প্রতিনিধিরা এ দিন পুরসভার আলো দফতরের ডিজি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার পরে পুরসভার নবনিযুক্ত মুখ্য অডিটর সুব্রত সান্যালের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে পুরসভা যখন ত্রিফলার অডিট করিয়েছিল, তখন মুখ্য অডিটরের পদে ছিলেন বিপ্লব গুহরায়। বিপ্লববাবু বদলি হওয়ার পরে তাঁর জায়গায় এসেছেন সুব্রতবাবু। পুরসভা সূত্রের খবর, সিএজি-র অফিসারেরা ত্রিফলা নিয়ে অডিটের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে সুব্রতবাবুকে চিঠি দিয়েছেন। তবে সিএজি-র সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে, মুখ্য অডিটর তা জানাতে চাননি।
প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানগর জুড়ে ২০ হাজার বাতিস্তম্ভ লাগিয়েছে পুরসভা। অভিযোগ, ওই আলো লাগানোর ক্ষেত্রে দরপত্র এড়াতে পুরো কর্ম প্রক্রিয়াটিকে পাঁচ লক্ষ টাকার নীচে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ঠিকাদারদের কাজের বরাত দেওয়া হয়। তা জানতে পেরে পুর কমিশনার ঠিকাদারদের বিল আটকে দেন। ওই কাজে অনিয়মের অভিযোগে পরপর দু’জন ডিজি (আলো)-কে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ অডিটের ব্যবস্থা করে পুর-প্রশাসন। তাতেই ত্রিফলা লাগানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ধরা পড়ে। মেয়র শোভনবাবুও স্বীকার করে নেনন, ত্রিফলা আলো লাগানোর কাজে অনিয়ম হয়েছে।
এক পুর অফিসার জানান, বিষয়টি ‘ক্লোজড্ চ্যাপ্টার’ বলে বেশ কিছু দিন ধরে পুর-প্রশাসন প্রচার করছিল। কিন্তু এ দিন সিএজি তদন্ত (বিশেষ অডিট) শুরু করতেই ফের সরগরম হয়ে উঠেছে পুরমহল।
কী ভাবে তদন্তে এগোতে চাইছেন সিএজি-র প্রতিনিধিরা? পুরসভা সূত্রের খবর, নিছক পুর ফাইলেই ত্রিফলা আলোর অনিয়মের খোঁজ না-করে তদন্তের পরিধি বাড়িয়ে দিচ্ছে সিএজি। তাদের অডিটরেরা বোঝার চেষ্টা করবেন, সৌন্দর্যায়নের কাজে কীসের এত তাড়া ছিল যে, দরপত্র চাওয়ার সময় হল না!
পুর সচিবালয়ের এক অফিসারের কথায়, “সিএজি-র অফিসারেরা বলেছেন, কাগজপত্র তো দেখবই। সেই সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করব, সৌন্দর্যায়নের কাজে পুরসভা এত তড়িঘড়ি করতে গেল কেন। কলকাতার রাস্তা তো অন্ধকারে ডুবে ছিল না। তা সত্ত্বেও এত তাড়া যে, দরপত্র চাওয়ার রীতি মানা হল না!” অডিটের প্রয়োজনে সিএজি-র প্রতিনিধিরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের হাল দেখবেন।
ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ-পিছু দর কী ভাবে ঠিক হল, বাজার যাচাই করে তা নির্ধারণ করা হয়েছে কি না, কারা কারা কাজের বরাত পেয়েছেন তা-ও দেখবেন অডিটরেরা।
ইতিমধ্যে নিজস্ব অডিট রিপোর্টেই বিপাকে পড়ে গিয়েছে পুর-প্রশাসন। এ বার সিএজি-র তদন্ত শুরু হওয়ায় কপালে কুঞ্চন বাড়ল পুর-প্রশাসনের। |