১০ কোটি আয় হারাল রাজ্য
কাহিল করা গরম পড়েনি, তাই বিয়ার বিক্রিতে ভাটা
ক্রিকেটার হিসেবে তখন ফর্মের তুঙ্গে রবি শাস্ত্রী। সেই সময় একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁর প্রিয় পানীয় কী? অকপট শাস্ত্রী একটুও না-ভেবে বলেছিলেন, বিয়ার।
এ রাজ্যে বেশির ভাগ পান-পিয়াসীর কাছে বিয়ারের মরসুম হল গরম কাল। এপ্রিল-মে-জুনের গনগনে আঁচে পুড়তে পুড়তে ঠান্ডা বিয়ারই চোখ বুজে পানীয় নম্বর ওয়ান। সরকারের কোষাগারও ফুলেফেঁপে ওঠে। কিন্তু এ বছর উল্টো ছবি। তেমন হাঁসফাঁস গরমই পড়েনি, ফলে বিয়ারের বিক্রিও লক্ষণীয় মাত্রায় কম। এতটাই যে, অন্যান্য বছরের তুলনায় রাজ্যের ভাঁড়ারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব কম ঢুকেছে।
রাজ্য আবগারি দফতর সূত্রেরই খবর, গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এ বছর এপ্রিলে বিয়ার বাবদ রাজস্ব আদায় ১১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা বেশি হলেও মে মাসে বিয়ার থেকে রাজস্ব আদায় গত বারের সাপেক্ষে ৩৪ লক্ষ টাকা কমে গিয়েছে। জুন মাসের হিসেব এখনও তৈরি হয়নি। তবে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেন লিকার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যেই হিসেব করে দেখেছে, জুনে সরকারের কোষাগারে গত বছরের তুলনায় অন্তত ২০ কোটি টাকা কম রাজস্ব ঢুকেছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরাগ মিত্র জানান, “এ বছর জুনে মাসে ৭৫ লক্ষ বোতলের বেশি বিয়ার বিক্রি হয়নি। আগের বার জুন মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল এক কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি।” প্রাথমিক হিসেবে এপ্রিল-মে-জুন এই তিন মাসে বিয়ার থেকে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি টাকা কম।
এপ্রিল-মে-জুন, সাধারণত যে তিন মাসে এ রাজ্যে তাপমাত্রা ও অস্বস্তিসূচক সব চেয়ে বেশি থাকে, সেই সময়েই বিয়ারের বিক্রির হারও থাকে সর্বাধিক। তখন সামগ্রিক ভাবে বিয়ারের বিক্রি স্পিরিট-এর (হুইস্কি, ভডকা, রাম, জিন) তুলনায় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি থাকে। আর সেটাই এ বার হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ বেশি। অ্যাসোসিয়েশন-এর হিসেব বলছে, এ বছর ওই তিন মাসে ৬৫০ মিলিলিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে সওয়া তিন কোটির মতো। গত ১৫ বছরে যা এ রাজ্যে সব চেয়ে কম বলে অ্যাসোসিয়েশনের দাবি। তাদের বক্তব্য, গত বছর ওই সময় চার কোটিরও বেশি বোতল বিক্রি হয়েছিল (ক্যানে ভরা বিয়ার অবশ্য এই হিসেবের মধ্যে নেই। অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এ রাজ্যে ক্যানে ভরা বিয়ারের বিক্রি নগণ্য)।
গরম কালে এমনিতে বিয়ার খেতে খুবই পছন্দ করেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তিনিও এ বার বিয়ার খাননি বললেই চলে। তাঁর কথায়, “আমি অন্যান্য বছর গরমে প্রচুর বিয়ার খাই। কিন্তু এ বার গরম কম ছিল। এক দিন দু’টো ছোট বোতল বিয়ার খেয়েছি। ব্যস!”
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যও বলছে, এ বছর ৯ এপ্রিল তাপপ্রবাহের পর তাপমাত্রা আর সে ভাবে বাড়েনি। ওই এক দিনই তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৩৯.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। তা বাদে এ বছর গ্রীষ্মে এক দিনও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছোঁয়নি। এমনকী যেটা সাধারণত সবচেয়ে দাবদাহের সময়, সেই মে মাসেও চার-পাঁচ দিন বাদ দিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি ছাড়ায়নি। মে মাস জুড়ে মাঝেমধ্যেই কালবৈশাখী হয়েছে। জুন মাসেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেডের উপরে ওঠেনি। ফলে চলতি কথায় যাকে গরম পড়া বলে, সেটাই সে ভাবে এ বার পড়েনি পশ্চিমবঙ্গে।
মধ্য কলকাতার ওয়াটারলু স্ট্রিটের একটি বিলিতি মদের দোকানের মালিক রণজয় প্রামাণিকের বক্তব্য, “গরমে প্রতি মাসে আমরা সোয়া চার হাজার বোতল বিয়ার বিক্রি করি। সেই জায়গায় এ বার তিন হাজার বোতল বিক্রি হয়েছে। মাসে আড়াই হাজার ক্যানের জায়গায় বিক্রি হয়েছে বড় জোর ১৮০০ ক্যান।” রানিকুঠির অচিন্ত্য গুহরায়ও জানাচ্ছেন, এই গরমে তাঁর দোকানে বিয়ারের বিক্রি অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি বার-কাম-রেস্তোরাঁর মালিক হিরণ্যক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর ১০০-১১০ বোতল বিয়ার দিনে বিক্রি হয়েছিল। এ বার সেই জায়গায় ৫০ বোতলও বিক্রি হচ্ছে না।”
তবে এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা যে কোনও সময়ই বিয়ার খেতে ভালবাসেন। তাঁরা অবশ্য গরমকাল-শীতকাল দেখেন না। কোনও পার্টিতে সিঙ্গল মল্ট স্কচ আর বিয়ার থাকলে গিটারিস্ট অমিত দত্ত বিয়ারই বেছে নেন। সঙ্গীত পরিচালক নীল দত্তের কথায়, “আমি এ বছর বিয়ার খাওয়া মোটেই কমাইনি। আমার কাছে তাপমাত্রার কম-বেশি থাকাটা বিয়ার খাওয়ার ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর নয়।” তবে অমিতবাবু মানছেন, “এখানে বেশির ভাগ লোকের কাছে গ্রীষ্মকালই বিয়ার পানের সময়। সেই গরম এ বার পাওয়া যায়নি। সে জন্যই মনে হচ্ছে, অনেকে বিয়ার খাননি।”

আমি অন্যান্য বছর গরমে প্রচুর বিয়ার খাই। কিন্তু এ বার গরম
কম ছিল। এক দিন দু’টো ছোট বোতল বিয়ার খেয়েছি। ব্যস!

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.