নিয়মেই একের পর এক ভোট হয়ে যায়। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন? ভোটের আগে রাজনৈতির নেতা থেকে শুরু করে প্রার্থীদের কাছ থেকে শুধু প্রতিশ্রুতিই মেলে। এমনই অভিযোগ, মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চলের পাঁচামি-তালবাঁধ এলাকার বাসিন্দা থেকে মালিকদের।
পানাগড়-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মহম্মদবাজারের সোঁতশাল মোড় থেকে পাঁচামি, হাবড়াপাহাড়ি হয়ে ঢোলকাটা পর্যন্ত একটি রাস্তা এবং এই ঢোলকাটা পর্যন্ত আরও দু’টি রাস্তা আছে। প্রতিটি রাস্তার অবস্থাই ভয়ঙ্কর। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে, রাস্তাগুলি কত ভয়াবহ। বিশেষ করে সোঁতশাল থেকে ঢোলকাটা ও পাঁচামি থেকে ঢোলকাটা রাস্তা দু’টি। অথচ এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন কয়েকশো ট্রাক যাতায়াত করে। যাতায়াত করেন এলাকার ২৫-৩০টি গ্রামের বাসিন্দা থেকে পাথরশিল্প ও নানা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার লোকজন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তাটি জেলা পরিষদের অধীনে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে বিশেষ করে রাস্তার উন্নয়নের জন্য ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা পাথর বোঝাই ট্রাক থেকে টোল আদায় করে জেলা পরিষদ। ৬ চাকা গাড়ি থেকে দেড়শো টাকা, ১০ চাকা গাড়ি থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হয়। গড়ে ৮০০-১০০০ পাথর বোঝাই ট্রাক চলে। সোঁতশাল থেকে পাঁচামি-হাবড়াপাহাড়ি হয়ে রাস্তা চওড়া হলেও একটি ট্রাক বা গাড়িকে পাশ কাটিয়ে পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা মোটরবাইকে করে যাওয়া যায় না। বেহাল রাস্তার কারণে পাশ কাটাতে গিয়ে পাথর বোঝাই ট্রাকের তলায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, একটু নিয়ন্ত্রণ হারালেই ট্রাক উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মল্লারপুরের টুরকু হাঁসদা লেপসা হেমব্রম কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, ঢোলকাটার বাসিন্দা গোপীনাথ মুর্মু, প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তালবাঁধের পূর্ণিমা টুডুদের কথায়, “কলেজে যেতে ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেলে করে গিয়ে সোঁতশালে বাস ধরি। ওই ৮-১০ কিমি রাস্তা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তার উপরে ধুলো আছেই। সাইকেলের টায়ার, টিউব যে বছরে কতবার পাল্টাতে হয় তার ঠিক নেই।”
সমস্যা যে শুধু পড়ুয়াদের তা নয়। ২৪ পরগনা থেকে আসা ট্রাক চালক হায়দার আলি, নদিয়ার সঞ্জয় বিশ্বাস, হুগলির রথীন হালদার, মালদার দুখু মিঞা’রা বলেন, “পেটের জন্য ট্রাক চালাতে হয়। মালিকদের কথা মতো আসতেই হয়। যদি বলি রাস্তা খারাপের জন্য গাড়ি চালাতে পারব না, তা হলেই হল। ছাড়িয়ে অন্য চালক নিয়ে নেবে। তাই ঝুঁকি থাকলেও ওই পথ দিয়ে মাল বোঝাই করে যেতে হয়।” ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়ূরেশ্বর, সাঁইথিয়া এলাকার বাসিন্দারাও। উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক সাউরা বলেন, “প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে মোটরবাইক নিয়ে পাঁচামি এলাকায় যেতে হয়। খারাপ রাস্তার কারণে তেল তো দ্বিগুণ পোড়ে। আর বাইকের বারোটা বেজে যায়।” মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি জীতেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, ওই রাস্তার অবস্থা সত্যিই ভয়াবহ। জেলা পরিষদের উচিত শীঘ্রই রাস্তা ঠিক করে দেওয়া।
এলাকার বাসিন্দা সোনালি হেমব্রম, চুরকা টুডু, খোকন মাড্ডি, অনিল হাঁসদা, বাবু খানদের ক্ষোভ, “ভোট আসে যায়। পঞ্চায়েত বা বিধানসভা ও লোকসভা হোক না কেন। সব নেতারাই রাস্তা-সহ এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। তা বাস্তবায়িত হতে দেখলাম না।” আদিবাসী গাঁওতার নেতা সুনীল সোরেন, সম্পাদক রবীন সোরেনদের হুমকি, “রাস্তাঘাট-সহ এলাকার উন্নয়নের জন্য আমরা বহুবার আন্দোলন করেছি। উন্নয়ন না হলে আগামী দিনে ফের আন্দোলন হবে।” পাঁচামি মাইনস অ্যান্ড ক্র্যাশার ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিক বলেন, “বার বার প্রশাসনকে বলেও কাজ হয়নি।”
এ দিকে জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা জানি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জেলা পরিষদ চলছে। ইতিমধ্যে পাঁচামি থেকে তালবাঁধ হয়ে ঢোলকাটা রাস্তার জন্য ২৫ লক্ষ টাকার অনুমোদন মিলেছে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক বিধান রায়ও জানান, রায়পুর-ঢোলকাটা রাস্তার জন্য ইতিমধ্যে ২.৭২ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। সোঁতশাল-ঢোলকাটা রাস্তার কিছুটা পূর্ত দফতরের। রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে ওই দফতরের সঙ্গে কথা চলছে। |