গবেষকের আত্মহত্যার চেষ্টা,
ফের বিড়ম্বনায় বিশ্বভারতী
ফের ভুল কারণে খবরের শিরোনামে বিশ্বভারতী।
গত অক্টোবরে বিশ্বভারতীর কৃষি অর্থনীতি, কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এক গবেষণাপ্রার্থী ছাত্রীকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। এ বার গবেষণারত এক ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নাম জড়াল তাঁরই গাইডের। সোমবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন পি এম সদিশ কুমার নামে বায়ো টেকনোলজি বিভাগের এক গবেষক। ওই গবেষকের অভিযোগ, তাঁর পিএইচডি গাইড গবেষণার কাজে তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না। আর তারই জেরে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই গবেষক এমন অভিযোগ করলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি।
মঙ্গলবার ঘটনার প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই অবশ্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বভারতীর মিডিয়া ইন্টারফেস কমিটির চেয়ারপার্সন, অধ্যাপিকা সবুজকলি সেন বলেন, “বিশ্বভারতীর ছাত্রাবাসে ওই গবেষক কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন, তার তদন্ত আমরা শুরু করছি। এই বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সব রকমের পদক্ষেপ করবে।” অন্য দিকে, এসডিপিও (বোলপুর) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
সোমবার বিকেলে বিশ্বভারতীর শিক্ষাভবনের পিয়ার্সন পল্লি ছাত্রাবাস থেকে অচৈতন্য অবস্থায় ওই গবেষককে উদ্ধার করে প্রথমে পিয়ার্সন মেমোরিয়ালে ও পরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চেন্নাই থেকে বিশ্বভারতীতে গবেষণা করতে আসা পি এম সদিশ কুমার জ্ঞান ফিরতেই গাইডের বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “আমার গবেষণার কাজে গাইড কোনও সাহায্যই করছেন না। বারবার তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করলে তিনি উল্টে আমাকে কোর্স ওয়ার্ক পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিয়েছেন।” ওই ছাত্রের আরও দাবি, অসহযোগিতার কথা আগেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় তিনি পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থও হন। তার পরেও কারও কাছ থেকেই সাড়া পাননি বলে তাঁর অভিযোগ। এ দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি বলেন, “কারও থেকেই কোনও সাহায্য পেলাম না। অসহায় লাগছিল। তাই আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম।”
বিশ্বভারতী সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, ওই গবেষকের ক্লাসে উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম। মাত্র পাঁচ শতাংশ। তা ছাড়া বিভাগের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাতেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে তাঁর গবেষণার কাজ নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই অসন্তুষ্ট ছিল বিভাগ। বিভাগ সূত্রে খবর, ওই গাইড গবেষককে এ নিয়ে সতর্কও করেছিলেন। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অবশ্য বলেন, “এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষই বলবেন। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি মেনে নেব।”
গাইড বা সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা অবশ্য আগেও অভিযোগ তুলেছেন। গবেষণা করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের নানা ভাবে হেনস্থা ও অসহযোগিতা করা, এমনকী ফেল করানোর হুমকির অভিযোগ তো ছিলই। গত বছরই অভিযোগের সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছিল শারীরিক নিগ্রহও। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের কাছে এক গবেষণাপ্রার্থী ছাত্রী এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি ছিল, বিশ্বভারতীর তৎকালীন ছাত্র কল্যাণ আধিকারিক অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দেব মুখোপাধ্যায় তাঁর শারীরিক নিগ্রহ করেন। সিদ্ধার্থবাবুর কাছে গবেষণা করার জন্য ওই ছাত্রী আবেদন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরে তড়িঘড়ি একটি তদন্ত কমিটি গড়ে। বিশ্বভারতীতে নারী নিগ্রহ রুখতে নানা আলোচনাও করা হয়। কিন্তু বাস্তব হল, ওই অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট বিশ্বভারতী কোনও দিনই প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি। অভিযোগ আদৌ প্রমাণিত হয়েছিল কিনা, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্যই করেনি।
ফলে সাময়িক ভাবে ছাত্র কল্যাণ আধিকারিকের পদ থেকে সরানো হলেও সেই অধ্যাপক এখনও বিশ্বভারতীতে ক্লাস নিয়ে চলেছেন। তবে সাম্প্রতিক কালে বিশ্বভারতীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সব থেকে বেশি মর্যাদাহানি হয়েছিল পাঠভবনের এক ছাত্রীকে তারই প্রস্রাব চাটানোর অভিযোগকে ঘিরে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হস্টেল ওয়ার্ডেন উমা পোদ্দারকে কোনও শাস্তিই পেতে হয়নি। ওই ছাত্রীটি রাতে ঘুমনোর সময় বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলেছিল। এমন গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী নিজস্ব তদন্তে হস্টেল ওয়ার্ডেনকে ‘ক্লিন চিট’ পর্যন্ত দিয়েছিল। বিশ্বভারতীর সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য নানা মহলেই বিতর্কের মুখে পড়েছিল। শেষ দু’টি ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্বভারতী ছেড়ে চলে যেতে হয় অভিযোগকারিণীদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.