কোনও মতেই ইস্তফা দেবেন না, জানিয়ে দিলেন গণ অভ্যুত্থানের পর মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসি। সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা মুরসিকে পদত্যাগ করার জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাও।
প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পর দেশ জুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মিশরবাসী। মুরসি সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবার রাত থেকে এখনও পর্যন্ত সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪৩। এ দিনই মুরসি-বিরোধী আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পোর্ট সৈয়দে বোমার আঘাতে নিহত হন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিক। এক বিদেশি সাংবাদিককে ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ।
মুরসি ইস্তফা না দিলেও, আজ মিশরের বিদেশমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। ইস্তফা দেন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্রও। এর আগে চার মন্ত্রী ইস্তফা দেন সোমবারই। এ দিন প্রেসিডেন্ট মুরসি বলেন, “২৫ জানুয়ারির বিপ্লবের পর মিশরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনও পরিস্থিতিতেই দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।” মুখে তিনি যা-ই বলুন না কেন, মুরসির উপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ যে বাড়ছে সে কথাও চাপা নেই। মিশরের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মুরসির সঙ্গে মিশরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাও করেন তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত সংস্থার প্রধানও মুরসিকে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানের পথ বের করার কথা বলেছেন।
তাহরির স্কোয়ারের গণ আন্দোলন শেষমেশ গদি ছাড়তে বাধ্য করেছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে। তার পরে ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেয় সেনা। কয়েক মাস পরে প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন মুরসি। ফলে, তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল মিশরের আমজনতা। কিন্তু, গত এক বছরে দেশে নিরাপত্তার অভাব, অর্থনীতির বেহাল দশা ও গোষ্ঠী সংঘর্ষের ফলে বেড়েছে ক্ষোভ। নভেম্বরে নতুন সংবিধানে নিজেকে আদালতের আওতার বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন মুরসি। তখন থেকেই শুরু বিক্ষোভ।
স্বৈরাচারকে উৎখাত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেও স্বপ্নের মিশর যেন এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে। তা-ই ফের রাস্তায় নেমেছে মিশরবাসী। সেই তাহরির স্কোয়ারেই। |