প্রাক্তন মার্কিন গুপ্তচর এডওয়ার্ড জে স্নোডেনকে আশ্রয় দিল না নয়াদিল্লি। আজ রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে নয়াদিল্লির কাছে আর্জি পাঠিয়েছিলেন স্নোডেন। সেই আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির ভারত সফরে ফোন ও ইন্টারনেটে আমেরিকার আড়িপাতার অভিযোগ নিয়ে দু’দেশ একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং তা ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক বিনিময় গত কয়েক বছরে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় এই বিষয়টিকে নিয়ে অহেতুক স্বর চড়াতে চায় না সাউথ ব্লক।
আমেরিকায় ফোন ও নেটে আড়িপাতার বিপুল বন্দোবস্তের কথা ফাঁস করার পর থেকেই সে দেশে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ স্নোডেন। আজ মস্কোয় ভারতীয় দূতাবাসে পৌঁছয় ভারতে আশ্রয় চেয়ে তাঁর আর্জি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন। তাঁর কথায়, “আমরা ওই আবেদন খুবই সতর্কতার সঙ্গে পড়ে দেখেছি। খতিয়ে দেখার পর আমাদের সিদ্ধান্ত, আবেদনে সাড়া দেওয়া অর্থহীন।”
বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদও আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্নোডেন ও মার্কিন নজরদারি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনও প্রকাশ্য সংঘাতে যেতে রাজি নয় কেন্দ্র। খুরশিদের বক্তব্য, “ভারত যাকে-তাকে আশ্রয় দেয় না। এই বিষয়ে খুব কড়া নিয়ম মেনে চলা হয়।” স্নোডেনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফোন ও নেটে নজরদারির অন্যতম লক্ষ্য ছিল ভারত। খুরশিদ জানিয়েছেন, এই বিষয়ে জন কেরির সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। কেরি জানিয়েছেন, কোনও ভারতীয়ের ই-মেল পড়ে দেখেননি মার্কিন গোয়েন্দারা। কেবল কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা। ওই তথ্য জঙ্গিদের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে বলে মনে করেন খুরশিদও।
শুধু ভারতই নয়, মোট ২১টি দেশ তাঁকে আশ্রয় দিতে রাজি না হওয়ায় রাশিয়ার বিমানবন্দরেই আপাতত আটকে রয়েছেন স্নোডেন। উইকিলিকস ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সাহায্যে হংকং থেকে পালিয়ে রাশিয়ায় আসেন তিনি। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে স্নোডেন আশ্রয় পাবেন বলে আশা করেছিলেন অনেকে। সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে এখন লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসেই রয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু, স্নোডেনের বিষয়টি ইকুয়েডর এখন এড়িয়ে যেতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ সে দেশের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়া জানিয়েছেন, স্নোডেনকে নিরাপদে ইকুয়েডরে পাঠানোর দায়িত্ব রাশিয়ার। এক জন প্রাক্তন গুপ্তচরের সঙ্গে দেখা করার কোনও ইচ্ছাও তাঁর নেই বলে জানিয়েছেন কোরিয়া। অনেকের মতে, এ বার স্নোডেন কাণ্ডে বল রাশিয়ার কোর্টে ঠেলে দিতে চাইছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট।
স্নোডেনকে প্রত্যর্পণের জন্য রাশিয়াকে ইতিমধ্যেই অনুরোধ করেছে আমেরিকা। কিন্তু, মস্কোর বিমানবন্দরের ‘ট্রানজিট লাউঞ্জে’ আছেন স্নোডেন। ফলে, সরকারি ভাবে তিনি রাশিয়ার মাটিতে পা রাখেননি। এই অজুহাতে প্রত্যর্পণের আর্জি এড়িয়ে গিয়েছে রাশিয়া।
স্নোডেনকে নিয়ে সমস্যা রাশিয়া কী ভাবে মেটায় তা দেখতেই এখন উৎসুক সারা বিশ্ব।
|