|
|
|
|
হুল্লোড়
|
|
কেজি-র বসতি টেস্ট
আইপিএল দুটোতেই
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে পরিচালক সুমন ঘোষ |
|
‘C/O স্যার’ দেখে গত আই পি এলের রাহুল দ্রাবিড়কে মনে পড়ছিল। এই কি সেই লোক যাঁর ব্যাটিং টেকনিক ভারতীয় ক্রিকেটের চিরস্মরণীয় ইতিহাস হয়ে থাকে! আবার অন্য দিকে গত আইপিএলে ওই একই ক্রিকেটার দেখালেন অন্য রকম ক্রিকেটও কেমন ভাবে খেলা যায়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়যার ‘শব্দ’ দেখে মনে হয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়েরই টেস্টম্যাচ ব্যাটিং দেখছি। আবার ‘C/O স্যার’ দেখে মনে হল যেন রাহুল দ্রাবিড়েরই আইপিএলের ব্যাটিং দেখছি।
দু’ রকম ধাঁচের বাংলা ছবির মধ্যে কৌশিকদার স্বচ্ছন্দ অস্তিত্ব নিতান্ত বিরল।
নিয়মিত আড্ডা দিতে দিতে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আমার কাছে হয়ে ওঠে ‘কেজি’। ওই আড্ডাগুলো থেকেই বুঝতে পারি মানুষটার মনের মধ্যে কত নতুন নতুন ভাবনা
টগবগ করে ফুটছে। এমন সব অনন্য ভাবনা যা টলিউডে আমি আর কারও কাছে পাইনি, দেখিওনি। কৌশিকদার চিন্তা ভাবনা কিন্তু সত্যিকারেরই আন্তর্জাতিক স্তরের।
‘ভাবনা’ শব্দটার ওপর জোর দিলাম এই কারণে যে ছবি পরিচালকেরা অনেক সময়ই গল্প আর চিত্রনাট্যে বেশি জোর দেন, যেটা ‘ভাবনা’র বিষয়টা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক সময় মজা করে বকুনি দিয়ে বলেছি, কেজি সব ভাবনা সকলের সামনে আলোচনা করার দরকার কি তোমার? ভয় আমার এটাই, কৌশিকদার এত সব বৈচিত্রময় ভাবনা চুরি না হয়ে যায়। কিন্তু যতই মানা করি, বুঝতে পেরেছি কৌশিকদার কিন্তু কিস্সুু যায় আসে না। যত বারই সেই আড্ডায় বসেছি তত বারই নতুন থেকে নতুনতর ভাবনাই ওর মুখে শুনে আসছি।
দ্বিধা নেই বলতে আজ আমি আর কৌশিকদা খুবই ঘনিষ্ঠ। অনেকেই মনে করতে পারেন যে আমরা একে অপরের পিঠ চাপড়াচ্ছি। এখানকার সিনেমা জগতের পরিস্থিতিটাই যে এই রকম গোলমেলে। তবুও আমি বলব কৌশিকদা আর আমার অন্তরঙ্গতার কারণ প্রথমত এবং প্রধানত ওঁর কাজ। কাজের জন্যই ওঁর প্রতি আমার এমন তীব্র আকর্ষণ। সেই আকর্ষণটার জন্যই এই রকম এক জন শিল্পীকে নিয়ে আজ এ ভাবে লিখতে বসা। |
|
সেই ১৯৮৭ সাল থেকে কৌশিকদা ইন্ডাস্ট্রিতে। অঞ্জন দত্তের পাশাপাশি টেলিফিল্ম তৈরির অন্যতম দিকপাল কৌশিকদাও। অনেক দিন ধরে কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে বড় পর্দার ছবি করার পরও ওকে টেলিভিশন পরিচালকই মনে করা হত। লোকে এটাও বলত কৌশিকদা এমন এক জন পরিচালক যে সেলুলয়েডে টেলিফিল্ম বানায়। আমি অবশ্য সে সব ছবি একটাও দেখিনি। আমার মনে হয় ‘এক মুঠো ছবি’তে কৌশিকদার তৈরি ‘প্রোগ্রেস রিপোর্ট’ ছবিটাতে ইরানি সিনেমার ‘ফ্লেভার’ ছিল। ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ তো এককথায় একটা নিখাদ ছবি। এর পর একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ ছবি পরিচালনা করা শুরু করে কৌশিকদা। ছবিগুলো শৈল্পিক এবং বাণিজ্যিক দুই দিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গভীর মননের ছাপ রেখে গিয়েছে।
এই মুহূর্তে কৌশিকদাই একমাত্র ব্যতিক্রমী পরিচালক যে একটা সম্পূর্ণ আলাদা পথে হাঁটছে। যে পথে একই সঙ্গে মিশে গিয়েছে জনপ্রিয় সিনেমা এবং মননশীল-সিরিয়াস সিনেমার ধারা। এক দিকে ফোলি আর্টিস্টের মানসিক বিভ্রম নিয়ে ‘শব্দ’র মতো সংবেদনশীল ছবি, অন্য দিকে রোম্যান্টিক-থ্রিলার ছবি ‘C/O স্যার’। আর কিছু দিনের মধ্যেই বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বুঝতে পারবে কৌশিকদা যে পথে হাঁটছে সেই পথটার গুরুত্ব কতটা। এতে আখেরে বাংলা ছবিই লাভবান হবে। হালফিল কয়েক বছর ধরে বার্লিন থেকে দুবাই পৃথিবীর সেরা চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে যোগ দেওয়ার পথ প্রায় নিঃশব্দে তৈরি করেছে কৌশিকদা। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রোগ্রামার ডরোথি ওয়েমার অধীর ভাবে প্রতীক্ষা করে থাকেন কৌশিকদার পরের ছবির জন্য। এমন এক সময় যখন বাংলা ছবি ওয়ার্ল্ড সিনেমায় ম্রিয়মাণ, যখন আমরা আমাদের টলিউডে ছোট ছোট বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে ঢাক পেটাই, ঠিক তখনই কৌশিকদাই হতে পারে এই ইন্ডাস্ট্রির পথিকৃৎ।
শুধু কি তাই, পর পর তিন বছর টলিউডকে ইন্ডিয়ান প্যানোরমায় নিয়ে যেতে পেরেছে একমাত্র এই মানুষটাই। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের এত কিছুর পরেও আজকের অত্যন্ত সফল বাণিজ্যিক পরিচালকও ‘কেজি’। আগেকার দিনে একটা ধারণা ছিল দু’ধরনের পরিচালক আছেন এক দল ফেস্টিভ্যালের ছবি বানান, আর এক দল বাণিজ্যিক। কৌশিকদা কিন্তু এই বিভেদটা অনায়াসে ভেঙে ফেলেছে। কেন পেরেছে জানেন? তার কারণ এই একই মানুষ ‘রংমিলান্তি’ও বানিয়েছে, ‘C/O স্যার’ও বানিয়েছে।
তাই শুধু মাত্র আমরা কেজিকে ‘শব্দ’র মতো ছবি তৈরির ব্র্যান্ড হিসেবে গ্রহণ কিছুতেই করব না। হ্যাঁ, ‘শব্দ’ একটি ল্যান্ডমার্ক ছবি। কিন্তু কৌশিকদা ‘শব্দ’কে পেছনে ফেলে অনায়াসে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই তো আমরা ‘শব্দ’র জন্য যেরকম প্রতীক্ষা করে বসে থাকব, অপেক্ষা করব ‘C/O স্যার’য়ের মতো ছবির জন্যও।
ক্রিকেটের দ্রাবিড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর শুধুই আইপিএল খেলেন। বাংলা সিনেমার ‘দ্রাবিড়’ খেলুন আরও অনেক অনেক বছর চুটিয়ে, সব ফর্ম্যাটেই একই রকম কর্তৃত্ব নিয়ে।
|
স্যার ও বন্ধুরা
সে দিন শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে ‘C/O স্যার’য়ের
পার্টিতে হাজির ছিলেন টলিউডের বহু তারকা |
মুনমুন সেনের সঙ্গে জিৎ |
সব্যসাচী চক্রবর্তী ও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় |
আবির চট্টোপাধ্যায় ও মৈনাক ভৌমিক |
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও সব্যসাচী চক্রবর্তী |
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তনুশ্রী চক্রবর্তী |
ছবি: কৌশিক সরকার |
|
|
|
|
|
|