মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজি না-হওয়ায় কংগ্রেসের এক আদিবাসী মহিলা প্রার্থীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের এক প্রার্থী সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের বেলোয়ার গ্রামে ওই ঘটনার পরে তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, অভিযোগ মিথ্যা। একই জেলার বালুরঘাট অমৃতখণ্ড এলাকায় ‘বিক্ষুব্ধ’ মহিলা প্রার্থীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসও সেই অভিযোগ ‘সাজানো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
হরিরামপুরে কংগ্রেস প্রার্থী মালতি সোরেন পুলিশকে জানান, রবিবার দুপুরে বাড়ি লাগোয়া মুদি দোকানে তিনি একা ছিলেন। তখন তৃণমূলের এক কর্মী তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। সেই তৃণমূল কর্মী তাঁকে মনোনয়ন তোলার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। সেই সময়ে তাঁর চেচাঁমেচিতে স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দারা ছুটে গিয়ে অভিযুক্তকে ধরে ফেলেন। ধস্তাধস্তিতে ওই ব্যক্তির গেঞ্জি ছিঁড়ে যায়। এরপরেই সেখানে পৌঁছে যান এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মী ও ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী সুজিত ঘোষ। তিনিই অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যান। |
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বালুরঘাটের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী দীপ্তি মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ সুজিতবাবু-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। সুজিতবাবুর অভিযোগ, তাঁদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে ভোটের মুখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে কংগ্রেস। সুজিতবাবুর দাবি, “মনোনয়ন তুলতে ওই মহিলাকে চাপ দেওয়া হয়নি।” দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” ওই দিনই বালুরঘাটের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী দীপ্তি মাহাতো ও তাঁর ছেলেকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। দীপ্তিদেবীর অভিযোগ, “রাত ৮টা নাগাদ বাড়ির সামনেই আমার ছেলের উপর হামলা করে তিন কংগ্রেস কর্মী। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে ওরা আমাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে কপালে আঘাত করে।” দীপ্তিদেবীর দেওর গণেশ মাহাতোর অভিযোগ, “বৌদিকে ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তা না শুনে প্রচারে নামায় কংগ্রেস হামলা চালিয়েছে।”
তবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় এই ঘটনা ‘সাজানো’ বলে দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “কংগ্রেস সমর্থকদের ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীই নির্দল হিসাবে ওই মহিলাকে দাঁড় করিয়েছে। তাই নিয়েই তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায় অবশ্য বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। ওই মহিলাকে দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে না পেরে কংগ্রেসের একাংশ তাঁর উপরে হামলা করেছে।”
হুগলিতে সিপিএমের দাবি, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী পাঠাতে হবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা আশঙ্কিত, তৃণমূলের বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াবে। প্রচারেই সমস্যা নয়, আমাদের ভোটাররা ভোট দেবেন কী করে? তাই প্রশাসনের কাছে দরবার করা হয়েছে।” তাঁদের দাবি, জেলার ধনেখালি-সহ কিছু জায়গায় ঘরছাড়া প্রার্থীরা রয়েছে। তাঁরা এলাকায় ফিরতে না পারলে, কী করে প্রচার করবেন? তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তপন দাশগুপ্তর দাবি, “অযথাই ভয় পাচ্ছে সিপিএম ।” |