মেরেছো কলসির কানা, তা বলে কি প্রেম দেব না!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের জন্য এই নীতিই বরাদ্দ করতে চাইছে বাম শরিক ফব! ভরসা তাদের মুন্নাভাই। পর্দার মুন্নাভাই বাস্তবে এখন জেলে। তাতে কী? তাঁর দেখিয়ে যেওয়া গাঁধীগিরি তো রয়েছে! সেই পথেই হাঁটছে নেতাজির প্রতিষ্ঠিত দল।
রাজ্যে বেড়ে চলা নারী নিগ্রহের ঘটনা, বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ‘ফাঁসানো’র প্রতিবাদে মহাকরণে ফুল পাঠাবে ফব। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, তাঁর পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা ডিজি-র জন্য নানা প্রান্ত থেকে উপহার যাবে ফুল। মূলত গোলাপ। পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্বে দলের যুব সংগঠন যুব লিগ। তাদের স্লোগান, ‘আহা বিউটিফুল, দিদির হাতে গোলাপ ফুল’!
নারী নিগ্রহের ঘটনা এবং প্রতিবাদ করলেই সিপিএম বা মাওবাদী বলে তকমা দেওয়ার প্রতিবাদে ক’দিন আগেই শহরে ষাঁড় (পুলিশের তাড়নায় আসলের বদলে শেষমেশ নকল ষাঁড় এবং রংবেরঙের মুখোশ ব্যবহার হয়েছিল) নিয়ে মিছিল করেছিল যুব লিগ। ষাঁড়ের গুঁতোর পরে ফুলের পরশ দিতে চাইছে বামেদের যুব সংগঠন!
এক তৃণমূলকর্মীর খুনের ঘটনায় ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা বিধায়ক উদয়ন গুহ-সহ দলের ৪০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কোচবিহারের পাশাপাশিই হুগলি, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলার কিছু অঞ্চলে শাসক দলের সন্ত্রাসের জন্য পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বলে ফব-র অভিযোগ। আবার মনোনয়ন-পর্বেই হামলার মুখে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে অনেককে। ঠিক হয়েছে, আক্রান্ত বা ‘মিথ্যা অভিযোগে’র শিকার প্রত্যেক ফব কর্মী মহাকরণে ফুল পাঠাবেন। একই কাজ করবেন যুব লিগের কর্মীরাও।
যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরীর কথায়, “নারী নিগ্রহের ঘটনায় আমাদের রাজ্য প্রথম। পুলিশ-প্রশাসনের একটা বড় অংশ যে ভাবে শাসক দলের কথায় উঠছে-বসছে, সেটাও অভিনন্দনযোগ্য! তাই ডিজি-কে গোলাপ পাঠাব, ওঁর মতো ভাল ছাত্র হয় না বলে! আর মুখ্যমন্ত্রীকে গোলাপ দেব, এত ভাল দিদিমণি হয় না বলে! পুলিশ-প্রশাসনকে দ্রুত শিখিয়ে-পড়িয়ে তৈরি করেছেন তো!” এক যুব নেতা বলছেন, “মহাকরণে গিয়ে কেউ তো হাতে হাতে গোলাপ দিতে যাবে না। প্যাকেটে পাঠানো হবে। গ্রামেগঞ্জের লোকেরা গোলাপ না পেলে জবাও পাঠাতে পারেন। ফুল দিয়ে তাঁরা বলবেন, অভিনন্দন নিন! তাড়াতাড়ি সুস্থ হোন!” রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের মতে, “মিছিল করলে, প্রতিবাদ করলেও এখন অন্যায় হিসাবে দেখছে সরকার। তা হলে এটাই ভাল!”
তৃণমূল এই ‘গাঁধীগিরি’তে বিচলিত নয়। তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, “গোলাপ নয়, গোলাপের কাঁটাই আসল! তাতে সরকার রক্তাক্ত হবে না। বাংলায় তাণ্ডব আর রক্তপাত চালানোর পরে মানুষ যখন ওঁদের বিশ্রামে পাঠিয়েছেন, তখন হঠাৎ গোলাপের রাজনীতি মাথায় এল!” |