রমজানের সময় ভোট
রায় বদলের আর্জি নিয়ে রাজ্য আবার সুপ্রিম কোর্টে
বার স্তব্ধ পঞ্চায়েত ভোটের কাজ। বদলে যাবতীয় উত্তেজনা সেই সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে, যেখানে গত শুক্রবারই এক রায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভোটের নতুন দিনক্ষণ। এ দিন রমজান প্রশ্নে সেই নির্ঘণ্ট পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়েই শীর্ষ আদালতে হাজির রাজ্য সরকার। তাদের পাশাপাশি পৃথক ভাবে হাজির কংগ্রেস ও রাজ্যের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনও। এই নিয়ে দিনভর নাটকের পরে শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের হস্তক্ষেপে মঙ্গলবার ওই আর্জি নিয়ে শুনানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু এর ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের তৈরি হয়েছে সংশয়।
আজ নতুন নির্ঘণ্ট অনুযায়ী রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা ছিল। রাজ্যের পঞ্চায়েত আইনের ৪২ নম্বর ধারা অনুযায়ী রাজ্যকেই প্রথমে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। তার পরে সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করবে নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্টে দিন ও জেলাবিন্যাস চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরে এটা শুধুই নিয়মরক্ষার রীতি। তবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এই রীতি মানতেই হবে রাজ্য এবং নির্বাচন কমিশনকে।
কিন্তু এ দিন সেই বিজ্ঞপ্তি জারি হল না। পুরনো নির্ঘণ্ট অনুযায়ী আগামিকাল ৯ জেলায় প্রথম দফার ভোট হওয়ার কথা ছিল। কমিশন অবশ্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির জেলাশাসকদের জানিয়ে দিয়েছে, স্থানীয় ভাবে কালকের ভোট বাতিলের কথা ঘোষণা করে দিতে। কমিশনের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে পুরনো নির্ঘণ্ট আপনা থেকেই বাতিল হয়ে যাবে। ভোটের পাশাপাশি কিন্তু বাতিল হয়ে গেল কমিশনের একাধিক বৈঠকও। নতুন করে মামলা শুরু হওয়ায় আজ দিল্লি গেলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। তাঁর সঙ্গে গেলেন সচিব তাপস রায়ও। দিল্লি যাওয়ার আগে মীরা আধ ঘণ্টা বৈঠক করেন রাজ্যপালের সঙ্গে।
মীরাদেবীর দিল্লিযাত্রার ফলে আজ কমিশনের সঙ্গে পর্যবেক্ষকদের বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। একই সঙ্গে স্থগিত রাখা হয় আগামিকালের সব বৈঠক। কাল মীরাদেবীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশকর্তাদের আলোচনায় বসার কথা ছিল। ঘটনাচক্রে এ দিন দিল্লি গেলেন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-ও। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লি গিয়েছেন। কলকাতায় যখন ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ থমকে গিয়েছে, সেই সময় যাবতীয় নজর গিয়ে পড়েছে রাজধানী দিল্লিতে।
নাটক দিনভর
থমকে কলকাতা



সরগরম দিল্লি
• রায় খতিয়ে দেখতে বিচারপতি পট্টনায়কদের বেঞ্চে রাজ্য

• একই বেঞ্চে কংগ্রেস এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনও

• রাজ্যকে রিভিউ পিটিশনের নির্দেশ। অন্যদের আর্জি খারিজ

• প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি

• তাঁর নির্দেশে আবেদন নিল ডিভিশন বেঞ্চ। আজ সম্ভবত শুনানি
এক মাসের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর আজই সুপ্রিম কোর্টের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়। শুক্রবার পঞ্চায়েত মামলার শুনানি হয়েছিল অবকাশকালীন বেঞ্চে। আজ সকালে বিচারপতি এ কে পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকারের তরফে মৌখিক আবেদন জানান রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রমজান মাসে সংখ্যালঘুদের অসুবিধার কথা ভেবে ভোটের নির্ঘণ্ট বদলের আবেদন জানানোর পাশাপাশি তিনি বিষয়টির দ্রুত শুনানির আর্জিও জানান। বিচারপতি পট্টনায়কের সঙ্গে এ দিন ছিলেন বিচারপতি এম ওয়াই ইকবাল। কিন্তু আদালত দ্রুত শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়ে রাজ্যকে আগের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য লিখিত আবেদন বা ‘রিভিউ পিটিশন’ করার নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ পিটিশনের কোনও শুনানি বা সওয়াল-জবাব হয় না। বিচারপতিরা নিজেরাই লিখিত আবেদন খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির আবেদন তাঁরা খারিজ করে দেন।
বিচারপতি পট্টনায়কের বেঞ্চের এই সিদ্ধান্তের পরে সংখ্যালঘু সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ইউথ ফাউন্ডেশনের আইনজীবী মুকুল রোহতগি প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের দ্বারস্থ হন। বিষয়টির শুনানির জন্য অনুরোধ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি জানান, পট্টনায়কের বেঞ্চে শুনানির ব্যবস্থা করা হবে। সেই শুনানিতে অবশ্য রাজ্য সরকার, রাজ্য নির্বাচন কমিশনও বক্তব্য জানাতে পারবে। রাজ্যের আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নির্ঘণ্ট বদলের আবেদন জমা দিয়েছি আদালতে। রমজান বাদ দিয়ে নির্বাচন করানোর পক্ষে বক্তব্য রাখবে রাজ্য সরকার।”
যে সব সংখ্যালঘু সংগঠন আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন, তার মধ্যে যেমন প্রদেশ কংগ্রেসের সংগঠন রয়েছে, তেমন সিপিএম নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার সংগঠন এবং তৃণমূলের সমর্থনপ্রাপ্ত সংগঠনও রয়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস কমিটির সংখ্যালঘু সেল এবং সারা বাংলা সংখ্যালঘু কাউন্সিলের আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক বলেন, “আমাদের বক্তব্য, রমজান মাসে সংখ্যালঘুদের সমস্যার বিষয়টি রাজ্যের তরফে ঠিকমতো তুলে ধরা হয়নি। তাই আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে নির্ঘণ্ট বদল, প্রয়োজনীয় নির্দেশের আবেদন জানিয়েছি।” রমজান মাসে ভোট এড়ানোর আর্জি জানিয়ে আজও কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের দফতরে স্মারকলিপি দিয়ে আসে সংখ্যালঘুদের ১৭টি সংগঠন। বামেদের বৈঠকের পরে বিমান বসু রমজান মাসে ভোট এসে পড়ার যাবতীয় দায় রাজ্যের উপরে চাপিয়ে বলেন, “রথযাত্রার জন্য ১০ জুলাই ভোট করা যাবে না, সে ব্যাপারে জ্ঞানের নাড়ি টনটনে ছিল! ২১ জুলাই শহিদ দিবস পালন করতে হবে, তার জন্যও জ্ঞানের নাড়ি টনটনে ছিল! পরে জ্ঞানোদয় হল, রমজান আছে!”
আইনজীবীদের আশা, মঙ্গলবারই বিষয়টির শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু অনেকে প্রথামাফিক জটিলতার আশঙ্কাও করছেন। কারণ, শুক্রবার বিচারপতি এ কে পট্টনায়েকের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। আজ তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি এম ওয়াই ইকবাল। কাল থাকবেন বিচারপতি ফকির মহম্মদ ইব্রাহিম কলিফুল্লা। আইনজীবীদের বক্তব্য, এক বেঞ্চের মামলা অন্য বেঞ্চে শোনার প্রথা নেই। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে বিচারপতি যখন বদলে যাচ্ছে, তখন এই বেঞ্চকে অবকাশকালীন বেঞ্চের সঙ্গে এক করে দেখা হবে কি না।
প্রথাগত বিষয়টি যদি বাধা না-ও হয়, তা হলেও পুনর্বিবেচনার আর্জিতে ভোটের আকাশে নতুন করে মেঘের ঘনঘটা দেখছেন সকলে। এখন দেখার, কত দ্রুত কাটে সেই মেঘ।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.