রমজান প্রশ্নে ফের কোর্টে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় রাজ্য
বশেষে মীরা পাণ্ডের কাছে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। তাঁর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা ছিল, রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই শেষ হোক পঞ্চায়েত ভোট। কমিশন সূত্রে অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই ভোট করতে চায়। একই সঙ্গে মীরাদেবী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করুক সরকার। যা সম্ভবত আজ, সোমবারেই জারি করতে হবে। আর তাই যদি হয়, তা হলে রমজান প্রশ্নে ভোট পিছিয়ে দেওয়া বা এগিয়ে আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আদৌ আবেদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
রমজান মাসে পঞ্চায়েত ভোট এড়াতে যে তারা সুপ্রিম কোর্টে যেতে চায়, সে কথা শনিবারই জানানো হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে সোমবারেই ভোটের নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। কারণ, মঙ্গলবার অর্থাৎ ২ জুলাই থেকেই পুরনো বিজ্ঞপ্তিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এখন সোমবারেই নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি না হলে সংশয় তুঙ্গে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
দফতরে মীরা পাণ্ডে। মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর।
প্রশ্ন উঠেছে, আজ যদি রাজ্যকে নতুন বিজ্ঞপ্তিই জারি করতে হয়, তা হলে তারা আবার সেই ভোট রদ করার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবে কোন যুক্তিতে?
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই প্রশ্নেই দোলাচলে পড়েছে রাজ্য। রাজ্য সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এই নিয়ে এ দিন মুখ খুলতে চাননি। আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।” চন্দ্রিমাদেবীকেই পঞ্চায়েত মামলার তদারকি করতে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়া আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” তবে দলের আর এক সাংসদ সুলতান আহমেদ বলেন, “রমজান মাসে কোনও কাজ বন্ধ থাকে না ঠিকই, কিন্তু ওই সময়ে মুসলিমদের কষ্ট হয়। সেই কষ্ট লাঘবের জন্য রাজ্য সরকার ওই সময়ে ভোট না করার আবেদন আদালতে জানাবে কি না ভাবছে।”
এর মধ্যে দুই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে, ভোট পিছিয়ে দিতে তারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে। আজ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু শাখা এই আর্জি জানাবে শীর্ষ আদালতে। আবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা তাঁদের সংগঠনের মাধ্যমে এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাবেন। রেজ্জাকের বক্তব্য, “রমজানের সময় ভোট এবং প্রচার সব কাজেই বেশ কিছু অসুবিধা হয়। আমরা চাই, ওই সময় ভোট যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করা হোক।” একই আবেদন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যাচ্ছে বেশ কিছু মুসলিম সংগঠনও।
রমজানে ভোট (*)
২০০৫-এ ঈদ ছিল ৫ নভেম্বর।
অক্টোবর-নভেম্বরে রমজান মাসের
মধ্যে সাত দফায় ভোট হয় বিহারে

২০০৬-এ ঈদ ছিল ২৫ অক্টোবর।
তার আগে রমজানের মধ্যে মাদুরাইয়ে
উপনির্বাচন। জেতেন ডিএমকে
প্রার্থী সৈয়দ গউস পাশা
২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে রমজান মাসের
মধ্যেই ভোট দিল্লি ও বিহারে। উপনির্বাচন
অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু আসনেও

২০০৯-এ ঈদ ছিল ২২ সেপ্টেম্বর।
রমজানের মধ্যেই হরিয়ানায়
বিধানসভা ভোট

আমরা কখনও রমজানে ভোট করিনি।
এখন সুপ্রিম কোর্ট যা দেখার,
নিশ্চয়ই দেখবে।
গৌতম দেব,

পুজোয় ভোট হলে যেমন মানুষের দুঃখ
হয়, তেমনই রমজানে ভোট হলেও
একটি সম্প্রদায় দুঃখ পেতে পারেন।
সুলতান আহমেদ,

২১ জুলাই শহিদ দিবসের কথা আগে মনে
ছিল, আর রমজানের কথা মনে ছিল না?
অধীর চৌধুরী,

ভোটের মধ্যে রমজান পড়ায় আমরাও চিন্তিত। তবে
ভোট পিছোলে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
তাপস রায়,
তথ্য সূত্র: নির্বাচন কমিশন
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ভাবে মান বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যে প্রয়োজন, তা তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন। কিন্তু দলীয় তরফে এ দিন বিশেষ কিছু বলতে চাননি কেউ। অন্য দিকে, প্রশাসন সূত্রে খবর, আজ ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফাইল পাঠিয়ে দিতে পারে পঞ্চায়েত দফতর। তবে মহাকরণ থেকে অনুমোদন না মিললে এ বারও ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা।
কমিশন অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, দেশে-বিদেশে রমজান মাসে ভোট করার যথেষ্ট নজির রয়েছে। ইসলামি রাষ্ট্র কুয়েতে আগামী ২৭ জুলাই সংসদীয় ভোট। কমিশন বলছে, ভারতেও গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যে রমজানের সময় ভোট হয়েছে (*)। কমিশন সূত্রে আরও বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলার সময়ও তো এই নিয়ে বলতে গিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারপতিরাই তা শুনতে চাননি।
এমন অবস্থায় এ দিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মুখ্যসচিব কথা বলতে যান মীরা পাণ্ডের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী এখনও চাইছেন, রমজান শুরু হওয়ার আগেই ভোট শেষ করা যায়। সেই বার্তা মীরাদেবীকে জানান মুখ্যসচিব। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়, বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। এই আলোচনার পরিবেশটা আগেই প্রয়োজন ছিল। এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ভোট করতে চায় কমিশন। ফলে রাজ্য সরকার দ্রুত বিজ্ঞপ্তি জারি করুক।
প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যসচিব কোনও কথা বলেননি। মীরাদেবীও খোলসা করেননি এই বৈঠকের বিষয়টি। তিনি বলেন, “কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। সে জন্য মুখ্যসচিব এসেছিলেন।” তবে কী ধরনের সমস্যা, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। কমিশনার আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ফের নতুন বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য পঞ্চায়েত দফতরকে শনিবারই চিঠি দিয়েছি। তার জবাব পাইনি। কেন চিঠির জবাব পেলাম না, তা-ও জানতে চেয়েছি।” এ দিনের বৈঠকে হুমকি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মীরাদেবীর নিরাপত্তার বিষয়টিও আলোচনায় ওঠে।
এ সবের পাশাপাশি ভোট প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে আজ পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মীরাদেবী। মঙ্গলবার সকালে তিনি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন নিয়ে আলোচনায় বসবেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-র সঙ্গে। বিকেলে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে ভোট প্রস্তুতির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে দেওয়া হবে।
কমিশনের দফতরে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র।
কমিশনের এই তোড়জোড়ের মধ্যেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানোর তোড়জোড় করছে। এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য যাবতীয় দায় চাপাচ্ছে সরকারের ঘাড়ে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “রমজান মাসে ভোট হলে সংখ্যালঘুদের সমস্যা হবে। তা ভেবেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে কংগ্রেস।” কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “কমিশন ও রাজ্য সরকার, দু’পক্ষ একমত হওয়ার ফলেই সুপ্রিম কোর্ট ভোট করার রায় দেয়। তখন ২১ জুলাই ও রথযাত্রার দিন ভোট না করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা উৎসাহী থাকলেও রমজান মাস নিয়ে কিছু বলেননি।” এর পরেই তাঁর মন্তব্য, “আদালতে সে দিন কিছু না বলে এখন বাইরে এসে অন্য কথা বলছেন। এটা দ্বিচারিতা।”
সিপিএম তো বটেই, বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রমজানের জন্য কিছু অসুবিধা নিশ্চয়ই হবে। সুপ্রিম কোর্টে কিন্তু রাজ্য সরকার এই অভিমত ব্যক্ত করেনি। সুপ্রিম কোর্ট যখন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে দিয়েছে, তখন তা স্থগিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ফের নতুন কৌশল নিয়েছেন।’ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, আজ তাঁরা ফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা করবেন।
রমজান মাসে পঞ্চায়েত ভোট না-করার দাবিতে এ দিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষ
বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে থেকে মিছিল করে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যান। মীরাদেবীর হাতে একটি লিখিত আবেদন তুলে দেন তাঁরা।
পরে তাঁদের তরফে শেখ ওমর ওয়াইদুল হক বলেন, “কমিশনার জানিয়েছেন, ভোটের দিন বদলের ব্যাপারে তাঁর কিছু করার নেই।” একই দাবিতে আজ আবার সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠন মিছিল করে কমিশন দফতরে যাবে। ‘জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ’-এর নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানান, পঞ্চায়েত ভোট পিছোনোর দাবিতে আজ মিছিল করে কমিশনে যাবেন তাঁরাও। কমিশনের সচিব তাপস রায়ের বক্তব্য, “ভোটের মধ্যে রমজান পড়ে যাওয়ায় আমরাও চিন্তিত। তবে, কোনও কারণে ভোট পিছিয়ে গেলে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।”

—নিজস্ব চিত্র

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.