রাহুলের পথে চলেই পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাড়ল কংগ্রেসের
ত পঞ্চায়েত ভোটের চেয়ে এ বার বেশি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে বলে জানাল কংগ্রেস। তাদের দাবি, বাম আমলের মতো এ বারেও সন্ত্রাস হয়েছে। কিন্তু রাহুল গাঁধীর দেখানো পথ ধরে এগোনোর ফলেই সেই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক মানস ভুঁইয়া জানান, গত পঞ্চায়েত ভোটে সাড়ে ২২ হাজারের মতো প্রার্থী দেন তাঁরা। এ বার প্রার্থী ২৮ হাজারের বেশি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও মানসবাবু, দু’জনেরই দাবি, সন্ত্রাস না-হলে তাঁদের প্রার্থীসংখ্যা আরও বেশি হতো।
কী ভাবে সম্ভব হল এই কাজ? মানসবাবুর বক্তব্য, “রাহুল গাঁধী যে মডেলে যুব কংগ্রেসকে সংগঠিত করেছেন, সেই ধাঁচেই বুথ স্তর থেকে কমিটি করে এ বার আমরা প্রার্থী মনোনয়ন করেছি এবং সেই সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা একযোগে বিভিন্ন জেলায় গিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হলে আমরা তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এর ফলে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা কর্মীদের মনোবল অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, “তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে গিয়ে গত ১০ বছরে কংগ্রেসের হাত চিহ্নে ভোট দেওয়ার কথা মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছিল! কংগ্রেসকে রাজ্যে আবার শক্তিশালী করে তোলার সময় এসেছে।” পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে আগামী লোকসভা ভোটের আগে দ্রুত দলের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি করা দরকার বলেই তাঁরা মনে করেন।
সবংয়ে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে মানস ভুঁইয়া। রবিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
সেই কারণে জোট ভাঙার পরেই মানসবাবু তো বটেই প্রদীপবাবু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি ও প্রদেশ শীর্ষ নেতারা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সংগঠন মজবুত করার কাজে নেমে পড়েছেন। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে, বিশেষত মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়িতে কংগ্রেসের সংগঠন ভালই আছে। কারণ, জোটের প্রভাবে ওখানে কংগ্রেসের উপরে ততটা কোপ পড়েনি, যা দক্ষিণবঙ্গে হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে গত ১০ বছরে কংগ্রেসকে কার্যত পর্দার অন্তরালে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল!” ওই নেতার ব্যাখ্যা, ২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে জোট করতে গিয়ে কংগ্রেস মাত্র ৫৭টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল। দলের ১৩ জন বিধায়ককে টিকিট দেওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে, ২০০৪ সালের লোকসভা ভোট বা ২০১১-র বিধানসভা ভোটে জোটের শর্ত মানতে গিয়ে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে, স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছিল। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও সিপিএমের সন্ত্রাস ছিল। সে বার কংগ্রেস ২২ হাজার আসনে প্রার্থী দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে সাড়ে ৬ হাজার, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১,৪৪৬ ও জেলা পরিষদে ৯৯ আসনে জয়ী হয়েছিল।
পশ্চিম মেদিনীপুরে নিজের এলাকা সবংয়ের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচারের ফাঁকে রবিবার মানসবাবু অভিযোগ করেন, “সন্ত্রাস না-হলে বাঁকুড়া, বীরভূমে এ বার কংগ্রেস অনেক প্রার্থী দিতে পারত।” পরিসংখ্যান পেশ করে তাঁর বক্তব্য, পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েত সমিতিতে এ বার প্রথমে তাঁরা ৩৬২ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসের ফলে ১৮৫ জন কংগ্রেস প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হন। কিন্তু সন্ত্রাস উপেক্ষা করেও এ বার গ্রাম পঞ্চায়েতে গত বারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন মানসবাবুরা। এমনকী, কংগ্রেসের সহযোগী ঝাড়খণ্ড পার্টিও গত বারের তুলনায় এ বার প্রায় ৬ গুণ বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন সেখানে। তৃণমূলের দুর্গ বলে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরেও গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস প্রথমে ১১৪১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু সন্ত্রাসের ফলে শেষ পর্যন্ত ৮৫৮ আসনে তাঁরা প্রার্থী রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ বার পঞ্চায়েতে এই জেলায় যে সংখ্যক কংগ্রেস প্রার্থী রয়েছেন, তা গত বারের তুলনায় বেশি। মানসবাবুর কথায়, “আমার সবং, পিংলা তো আছেই, দুই মেদিনীপুরে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস মোকাবিলা করে পঞ্চায়েত ভোটের কাজ করে যাচ্ছি।”
প্রার্থীর বেড়েছে বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনাতেও। মানসবাবু জানান, সন্ত্রাসের কারণে বীরভূমের বোলপুর মহকুমাতে একটি আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি কংগ্রেস। কিন্তু রামপুরহাট-সহ জেলার বাকি অংশে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে পেরেছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, বীরভূমের জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ (জিমি) ও দলের পর্যবেক্ষক-সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সব নেতা-কর্মীর মধ্যে সমন্বয় করে বুথ স্তর থেকে কাজ করায় জেলার বাকি অংশে তাঁরা গত বারের তুলনায় বেশি প্রার্থী দিতে পেরেছেন।
প্রত্যাশিত ভাবেই কংগ্রেসের সন্ত্রাসের অভিযোগ নস্যাৎ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “সন্ত্রাস হলে ওঁরা এত প্রার্থী দিলেন কী ভাবে? এ বার ৬৯ হাজার আসনে ১ লক্ষ ৭০ হাজার প্রার্থী। আসলে ওঁদের যেখানে সংগঠন নেই, সেখানে ওঁরা প্রার্থী দিতে না পেরে সন্ত্রাসের ভূত দেখছেন!” মানসবাবু পাল্টা বলেছেন, “এই প্রথম মনোনয়ন-পর্বেই ১২ জন খুন হয়ে গিয়েছে। বহু কর্মী গুরুতর আহত। সন্ত্রাসের কারণেই দক্ষিণবঙ্গের ৭৭টি জায়গায় প্রার্থীরা বিডিও-র বদলে মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন।” মানসবাবুদের আশা, ভোট অবাধ ও শান্তিতে হলে এ বার গত বারের থেকে ভাল ফলও করবে কংগ্রেস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.