সকালে বাড়ির দরজা খুলেই চোখে পড়ল বারান্দায় একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট। প্যাকেট খুলতেই বেরোল একটা সাদা থান আর রজনীগন্ধার মালা!
নদিয়ার হাঁসখালির মামজোয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতে তাদের দলীয় প্রার্থী বুবুল রায় ও তাঁর পরিবারকে ভয় দেখানোর জন্য তৃণমূলই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘ওই সাদা থান তৃণমূলই পাঠিয়েছে। এটা অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয়। সন্ত্রাসের পাশাপাশি তৃণমূল এখন এ ভাবেও ভয় দেখাচ্ছে!’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলেই ওই প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখেন বুবুলদেবীর স্বামী, পেশায় স্কুল শিক্ষক অসিত রায়। তাঁর কথায়, “প্যাকেটটা খুলতেই চমকে উঠেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে সে-সব নিয়ে গিয়েছে।’’ অসিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘এখানে লড়াইটা হচ্ছে সিপিএম আর তৃণমূলের। এমন কাণ্ড তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই করেছে। থান ও রজনীগন্ধার মালা পাঠিয়ে আমাদের কী হুমকি দিতে চেয়েছে, সেটা তো জলের মতো পরিষ্কার।’’
নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘সিপিএমের ওই প্রার্থীকে আমরা সাদা থান পাঠাইনি। ওটা ওদেরই তৈরি করা নাটক। বরং গত ৩৪ বছরে সিপিএমই এই ভাবে সাদা থান পাঠাতো নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলায়। এখন পায়ের তলায় মাটি নেই বুঝতে পেরে নিজেরাই এ সব কাজ করে মানুষের সহানুভূতি পেতে চাইছে।’’ জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “এ রকম একটি ঘটনার কথা শুনেছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেককেই মনে পড়িয়ে দিচ্ছে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কেশপুর, গড়বেতা, পাঁশকুড়া বা পিংলার কথা। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ এই পর্বে রাজনৈতিক অশান্তির জন্য বারবার শিরোনামে এসেছে এই জায়গাগুলি। বিরোধী তৃণমূল বা কংগ্রেস তখন সিপিএমের বিরুদ্ধে বারবার ‘নীরব সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলত। বিরোধী প্রার্থীদের ‘সাদা থান’ পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হত। সেই সময় কেশপুরের তৃণমূল নেতা মহম্মদ রফিক (এখন কংগ্রেসে) বলেন, “সিপিএম এই হুমকি বহুবার দিয়েছে।” গড়বেতার তৃণমূল নেতা অসীম ওঝার কথায়, “এই হুমকিটা এমন ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হত যে, পরিবারের সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়তেন। বিরোধীদের মনোবল ভেঙে যেত।”
চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি-পর্বে হুমকি, মারধর এমনকী খুন হলেও সাদা থান পাঠানোর ঘটনা প্রথম ঘটল। অশান্তিও অব্যাহত। রবিবারই নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় দলীর প্রার্থীর হয়ে পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে মার খেয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। অভিযুক্ত তৃণমূল। চার সিপিএম সমর্থক গুরুতর আহত অবস্থায় তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা রেয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বর্ধমানের মেমারিতে প্রচারে যাওয়া সিপিএমের দুই মহিলা প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই দু’জনকে শনিবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের লোক তাদের কিছু সমর্থকের উপরে চড়াও হয়েছিল। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকার বাসিন্দারাই মারধর করেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম থানার ডাহি গ্রামে আবার এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে স্থানীয় বুথের কংগ্রেস প্রার্থী অমল দোলাইকে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার অমলবাবুকে চোদ্দো দিন জেলহাজতের নির্দেশ দেয় ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালত। দিলীপ দাস নামে ওই তৃণমূল কর্মী মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। পুরুলিয়ার বরাবাজারে তৃণমূল প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুদর্শন মাহাতোর অভিযোগ, “শনিবার রাতে ধাদকিডি গ্রামে আমাদের প্রার্থীর বাড়িতে চড়াও হয় সিপিএমের দুষ্কৃতীরা। মারার হুমকি দেয়।” বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি প্রণব নিয়োগীর দাবি, “সব তৃণমূলের অপপ্রচার।” |