ঠেকে শিখল রাজ্য সরকার। তারা ঠিক করেছে, এ বার জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের টাকায় কেনা ৭০০ বাস আর বেসরকারি মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। নতুন বাস চালাবে সরকারের অধীন পরিবহণ নিগম।
কেন এই সিদ্ধান্ত বদল?
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৯ সালে ১৫ বছরের পুরনো বাস বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে শহর জুড়ে বাসের আকাল শুরু হয়েছিল, সঙ্কটে পড়েছিলেন যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেই সময়ে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের টাকায় ৫০০ বাস কিনে তা বেসরকারি বাস মালিকদের মধ্যে বিলি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম। কিন্তু নতুন বাস হাতে পাওয়ার বছর দু’য়েক পর থেকে বেশির ভাগ বাস-মালিক মাসিক কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দেন। এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বাস-মালিকদের বৈঠক হয়। কিস্তির টাকা না মেটালে সংশ্লিষ্ট বাস-মালিকদের কাছ থেকে বাস বাজেয়াপ্ত করার হুমকিও দেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। মালিকদের পাল্টা বক্তব্য ছিল, বাস চালিয়ে লাভ হচ্ছে না। তাই সরকারকে তা ফিরিয়ে দিতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। এই চাপান-উতোরে মীমাংসা অধরাই থেকে যায়। শেষ পর্যন্ত পিছু হটে রাজ্য পরিবহণ দফতর। |
এই প্রেক্ষিতেই এ বার নতুন বাস চালানোর দায়িত্ব সরকারি নিগমের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। মহাকরণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সম্প্রতি সারা দেশে জেএনএনইউআরএম-এর বর্ধিত প্রকল্পের টাকায় নতুন ১০ হাজার বাস কেনার জন্য আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করবে বলে রাজ্যগুলিকে জানায়। এর মধ্যে ৭০০ বাস কেনার অনুমতি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে তারা। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে কলকাতা এবং আসানসোল-দুর্গাপুরের সঙ্গে শিলিগুড়িকেও এ বার প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, নতুন বাসের মধ্যে ৬০০টি থাকবে কলকাতায়, যার মধ্যে অন্তত ২০০ বাস হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এ ছাড়া, ৫০টি করে বাস চলবে দুর্গাপুর-আসানসোল এবং শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যে। কলকাতার ক্ষেত্রে সিংহভাগ বাস পাবে সিএসটিসি। কিছু বাস চালাবে ভূতল পরিবহণ এবং কলকাতা ট্রাম কোম্পানিও।
রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করতে মাসখানেকের মতো সময় লাগবে। তার পরে তা দিল্লিতে পাঠানো হবে। সরকারি মহলের আশা, কেন্দ্র আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করলে এ বছরেই কিছু নতুন বাস রাস্তায় নামবে।
মহাকরণের খবর, মেট্রো শহর বলে কলকাতার জন্য ৩৫%, সাধারণ শহর হিসেবে দুর্গাপুর-আসানসোলের জন্য ৫০% এবং পাহাড়ি শহর হিসাবে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির জন্য ৮০% অর্থ অনুদান দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। সব মিলিয়ে ৭০০ বাস কিনতে যে ৩৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন, তার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারের খরচ হবে ২০০ কোটি টাকার মতো।
পরিবহণ দফতরের এক মুখপাত্র জানান, আগের বার বেসরকারি বাস মালিকেরা ঠিকমতো মাসিক কিস্তি শোধ না করায় ঋণের বোঝা চেপেছে সরকারের উপরে। এ বার সরকার নিজেই নতুন বাস চালাবে বলে ঋণের অর্থ শোধ করার দায়িত্ব তাদেরই। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ৭০০ বাস কেনার জন্য রাজ্য সরকারের দেয় ২০০ কোটি টাকা দু’বছরে শোধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এ জন্য পরিবহণ দফতরের বাজেট থেকে বছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। |