আতঙ্কিত বাসিন্দারা
চুরি-ছিনতাই-তোলাবাজি বেড়েই চলেছে অশোকনগরে
পুলিশি ধরপাকড় চলছে। দুষ্কৃতীরা গ্রেফতারও হচ্ছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের মুখে অশোকনগর জুড়ে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমছে না। আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ বাসিন্দাদের। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও।
রবিবারই ভরসন্ধ্যায় অশোকনগরের দু’নম্বর স্কিম এলাকায় এক মাছ ব্যবসায়ীর বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে নগদ টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না হাতিয়ে পালায় দুই দুষ্কৃতী। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে অরুণ দাস নামে ওই মাছ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ওই সন্ধ্যায় তিনি কচুয়া মোড়ে গিয়েছিলেন। বাড়িতে স্ত্রী একা ছিলেন। দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুনের হুমকি দিয়ে, মুখ চেপে ধরে আলমারি খুলিয়ে নগদ ২৮ হাজার টাকা ও চার ভরি সোনার গয়না নিয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ওই দিনই অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলে চুরির চেষ্টা হয়। সোমবার বিকেলে গোলবাজার এলাকায় তিন সাইকেল-চোরকে হাতেনাতে ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় লোকজন। বেশ কিছু দিন ধরেই ওই এলাকায় সাইকেল চুরি বেড়েছে। দিন কয়েক আগে দিনেদুপুরে দু’নম্বর স্কিম এলাকার এক মহিলার কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা কয়েক হাজার টাকা ছিনতাই করে বলেও অভিযোগ।
থানা এলাকায় এ ভাবে ঘন ঘন দুষ্কৃতীদের উপদ্রব ঠেকাতে পুলিশের পর্যাপ্ত নজরদারি নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। কেউ কেউ আবার দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তের পিছনে রাজনৈতিক দলের মদতের অভিযোগও তুলছেন। গত শুক্রবারই ধৃত এক দুষ্কৃতীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য থানায় ঢুকে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে একটি রাজনৈতিক দলের এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে। যদিও ওই নেতা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, “আমি দলে কোনও দুষ্কৃতীকে ঘেঁষতে দিইনি। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে কী বলছে পুলিশ? অশোকনগর থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, গত ছ’মাসে ৬০ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তল্লাশি ও ধরপাকড় পুরোমাত্রায় চলছে।
তা হলে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমছে না কেন? পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীদের অধিকাংশই অন্য এলাকা থেকে এসে দুষ্কর্ম করে পালাচ্ছে। ধৃতদের বেশির ভাগই নিউ ব্যারাকপুর, রাজারহাট, দমদম, টিটাগড়, বনগাঁ বা বারাসত এলাকার বাসিন্দা।
সম্প্রতি কচুয়া মোড় এলাকায় একটি হোটেল-মালিকের কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা তোলা আদায়ের চেষ্টা করে। না পেয়ে তারা হোটেলের সামনে গুলি চালায়, বোমাবাজিও করে। তাতে কেউ জখম না হলেও আতঙ্ক বেড়েছে এলাকাবাসীর। তাঁরা জানিয়েছেন, আগে গোপনে তোলাবাজি চলত। দুষ্কৃতীরা এখন এতটাই বেপরোয়া যে প্রকাশ্যে তাণ্ডব চালাচ্ছে। অনেকে ভয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন না।
দুষ্কৃতীদের এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে শাসক দলের নেতাদের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী কর বলেন, “শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা দুষ্কৃতীদের উপদ্রব ঠেকাতে ব্যর্থ। তাঁদের কেউ কেউ দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছেন বলে সমস্যা মিটছে না। এলাকায় চোলাইয়ের ঠেক বেড়েছে। মহিলাদের কটূক্তি করা হচ্ছে।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। অশোকনগরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায়ের দাবি, “গত ছ’মাসে যে সব দুষ্কৃতী ধরা পড়েছে, প্রত্যেকেই সিপিএম আশ্রিত সমাজবিরোধী। এক জন দুষ্কৃতীর সঙ্গেও তৃণমূলের যোগ নেই। পুলিশকে বলেছি, তল্লাশিতে আরও জোর দিতে এবং আরও কড়া ব্যবস্থা নিতে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলর জানান, রাজনৈতিক রং না দেখে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া পুলিশি ধরপাকড়ই একমাত্র পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে।
সেই সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.