|
|
|
|
ভরা বর্ষায় ভোট, দুশ্চিন্তার মধ্যেই জোরকদমে প্রস্তুতি
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বুথের সামনের রাস্তা খারাপ। জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে কালভার্ট। মোটর বাইক নিয়ে যেতেই বিপত্তি হয়। তাহলে ভোটকর্মীরা বুথে পৌঁছবেন কী করে? পুলিশই বা কী ভাবে যাবে? পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে ভরা বর্ষায় হওয়ায় এ সবই এখন প্রশাসনের ভাবনা। এ জন্য একটি নির্দেশিকা এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ভোটের আগে কোনও কাজ করতে হলে, তা যদি বাৎসরিক পরিকল্পনায় (অ্যানুয়াল অ্যাকশন প্ল্যান) ধরা না থাকে তাহলে জেলাশাসকের অনুমতি নিয়ে করা যাবে। তাতেও দুশ্চিন্তা কমছে না।
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট স্থির করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এখন আবার রমজান মাসে ভোট হলে সমস্যার কথা জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে নানা পক্ষ। ফলে, ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেও কাটছে না। কিন্তু প্রস্তুতি তো সেরে রাখতেই হবে। হাতে বেশি সময়ও নেই। তাই জেলা ও ব্লক প্রশাসনে প্রস্তুতি এন তুঙ্গে। আধিকারিকদের দায়িত্ব বণ্ট হয়ে গিয়েছে। পোলিং পার্সনেল সেলের দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। তিনিই জেলার ওসি (ইলেকশন)। ল’ অ্যান্ড অর্ডার সেলের দায়িত্বে সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা আধিকারিক শাশ্বতী দাস। |
|
কালেক্টরেটে ব্যস্ত কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র। |
মেটিরিয়াল সেস সামলাচ্ছেন জেলা উন্নয়ন ও পরিকল্পনা আধিকারিক প্রণব ঘোষ। ব্যালট পেপার সেলের দায়িত্ব পেয়েছেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক রাহুল নাথ। ট্রেনিং সেলের দায়িত্বে জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক শম্পা হাজরা। ট্রান্সপোর্ট সেলের দায়িত্বে জেলা পরিবহণ আধিকারিক প্রিয়াঞ্জন দাস। সব মিলিয়ে ১১টি সেলের কাজ দেখভালের জন্য একজন করে অতিরিক্ত জেলাশাসককেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সব সামলানোর ভার জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের। তিনিই জেলার পঞ্চায়েত নির্বাচন আধিকারিক।
ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় যাবতীয় সরঞ্জাম সময়ে ব্লকে পৌঁছনো নিয়ে সংশয়ও তৈরি হয়। ঠিকাদাররা বরাত দিতে দেরি করছিলেন। এখন অবশ্য সব সরঞ্জাম জেলায় চলে এসেছে। ব্লকে ব্লকে পাঠানোও শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট বুথ ৪,৭৪৭টি। প্রতি বুথে ৮৪ রকমের সরঞ্জাম যাবে। এর মধ্যে রয়েছে, ব্যালট বক্স, ভোটিং কম্পার্টমেন্ট রয়েছে, ভোটার স্লিপ, পিন, পেন, কার্বন পেপার-সহ নানা জিনিস। প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ ব্যালট পেপার ছাপা হয়েছে। জেলায় ভোটার সংখ্যা ৩৯ লক্ষ ২৬ হাজার ২৫৬। ত্রিস্তর নির্বাচনের জন্য এক-একজন ভোটারকে তিনটি করে ব্যালট পেপার দিতে হবে। ফলে, বাড়তি ব্যালট পেপার ছাপা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলা থেকে যে সব সরঞ্জাম ব্লকে যাবে, তার জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। ব্লক স্তরে যে সব সরঞ্জাম কেনার কথা, তার জন্য খরচ প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। আর নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় খরচ ধরলে পরিমাণ দাঁড়াবে ৮ কোটির কাছাকাছি। ব্লক স্তরে ‘ডিস্ট্রিবিউশন কাম রিসেপশন সেন্টার’ (ডিসিআরসি) তৈরিও শুরু হয়েছে।
হাতে আর মাত্র ৯ দিন। তাই জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের ব্যস্ততাও এখন চরমে। সকলেই নিজের নিজের সেলের কাজ ঠিকঠাক চলছে কি না, দেখে নিচ্ছেন। প্রয়োজনে ব্লকে ফোন করছেন। সমস্যা-অসুবিধের খোঁজ নিচ্ছেন। এখন প্রযুক্তির যুগ। তাই ব্লক থেকে সমস্যা ই-মেলেই জানানো হচ্ছে। মেল খুলে তাতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন আধিকারিকেরা। তড়িঘড়ি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছিলেন, “প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন ভালয় ভালয় পঞ্চায়েত নির্বাচনটা মিটলেই হল!” |
|
|
|
|
|