খেলোয়াড় আর তার পরে দর্শক হিসেবে উইম্বলডনের সঙ্গে আমার চুয়ান্ন বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক। এ রকম অঘটনের মেলা কখনও দেখিনি। মহাঅঘটনের মেলা বলাই বোধহয় ঠিক। ঐতিহাসিক ভাবে উইম্বলডনে ‘মিড সানডে’-র বিরতির পর সোমবার-কে বলা হয় ‘ম্যাজিক মানডে’। সত্যিই আজ ম্যাজিক দেখলাম জার্মানির ট্রইসডর্ফ শহরে জন্মানো পোলিশ বংশোদ্ভুত বছর তেইশের মেয়ে সাবিন লিজিকি-র র্যাকেটে! পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি দীর্ঘকায় প্রতিদ্বন্দ্বীর অবিশ্বাস্য পাওয়ার গেমের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হল মেয়েদের টেনিসে বিশ্বের সর্বকালের সেরা পাওয়ারফুল প্লেয়ার সেরেনা উইলিয়ামস-ও। ২-৬, ৬-১, ৪-৬। নাদাল, ফেডেরার, সঙ্গা, শারাপোভা, আজারেঙ্কা-র পর এ বার সেরেনা! টেনিসের এতগুলো পাওয়ারহাউসের একসঙ্গে বিদায়! তা-ও কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই শুধু উইম্বলডনে কেন গ্র্যান্ড স্ল্যামেই আগে ঘটেনি! |
এর পর মেয়েদের সিঙ্গলসে তো টিকে থাকা আটজনের যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতেই পারে। ছেলেদের সিঙ্গলসেও আর ফেভারিট বাছার ঝুঁকি নিতে আমি রাজি নই। এ বার পিচ্ছিল ঘাসের কোর্টে সুপারস্টাররা ধড়াধড় পা হড়কে হেরেছে এমন ব্যাখ্যা না হয় প্রথম সপ্তাহে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আজ তো সেরেনা এক বারও পা পিছলে পড়েনি। তা হলে জীবনের শ্রেষ্ঠ ফর্মে থাকা সত্ত্বেও ২৪ নম্বর বাছাইয়ের কাছে হারল কেন? তা-ও একটা সময় টানা ন’টা গেম জিতে ১-১ সেট করার পর মীমাংসা সূচক তৃতীয় সেটে ৩-০ এগিয়ে থেকেও! আসলে এখন টেনিসে এত বেশি পাওয়ার এসে গিয়েছে! ঘাসের কোর্টেও চিপ অ্যান্ড চার্জের বদলে বেসলাইন থেকে দুদ্দাড় সব স্ট্রোক হচ্ছে যে, নিজের দিনে গড়পরতা মানের প্লেয়ার যে কোনও বিশ্বমানের প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিতে পারে। সেরেনার কাছেও আজ ছিল ‘অফিসে একটা খারাপ দিন’। ম্যাচের গোড়া আর শেষের দিকে ওকে এ রকম নার্ভাস আর নড়বড়ে কখনও দেখিনি।
সেন্টার কোর্টে তখন বসে নিজের গতকালের বলা কথাটা ভাবছিলাম সেরেনা যা ফর্মে, কোর্টে পা হড়কালেও হারবে না! কিন্তু সটান স্বীকার করছি, লিজিকি-র ক্ষমতা চিনতে ভুল করেছিলাম। ও হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিল, কেন মেয়েদের ট্যুরে ওর ডাকনাম ‘বুম বুম’! শুধু অবিশ্বাস্য জোরে সার্ভিসই নয়, প্রচণ্ড জোর ওর গ্রাউন্ডস্ট্রোকেও। সেরেনার ওষুধেই সেরেনাকে হারাল লিজিকি। পাওয়ারগেমের জবাবে পাল্টা পাওয়ারগেম! মেয়েটা বছর দশেক হল ফ্লোরিডায় নিক বলতিয়েরির অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করছে। তবে ওর ক্রীড়াবিজ্ঞানী বাবার অধীনে। এই নিয়ে গত চার বছরের মধ্যে তিন বার লিজিকির হাতে উইম্বলডনে বধ হল সে বছরের ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন। গত বার এখানে চতুর্থ রাউন্ডেই শারাপোভাকে হারিয়েছিল ও। এবং সেরেনার মতোই সে সময় শারাপোভা বিশ্বের এক নম্বর ছিল। এ বার উইম্বলডন শুরুর ঠিক আগে তীব্র বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সেরেনা-শারাপোভাকে এ দিন কোথাও যেন মিলিয়ে দিল লিজিকি! যাতে ব্রিটিশ হার্টথ্রব লরা রবসনের হারও চাপা পড়ে গেল।
নিঃশব্দে কোয়ার্টার ফাইনাল লাইন আপ হল: না লি-রাডওয়ানস্কা। স্লোয়ান স্টিফেন্স-বার্তোলি। কিভিতোভা-ফ্লিপকেন্স, লিজিকি-কানেপি। পুরুষ সিঙ্গলসে মারে-ভার্দাস্কো। ফেরার-দেল পোত্রো। জাঙ্কোভিচ-কুবোট। জকোভিচও জিতল। ডাবলস শেষ আটে লিয়েন্ডার-স্টেপানেক, মহেশ-নোয়েল, বোপান্না-ভাসেলিন জুটি। তবে সানিয়া-হুবার হেরেছে। মিক্সডে শেষ আটে বোপান্না-জুটি। মানে ভারতের আশা বাড়ছে! |