টাটা তিকিতাকা
অন্য মোড়কে ব্রাজিল
ফেরাচ্ছে গতির ফুটবল
ব্রাজিল-৩ (ফ্রেড ২, নেইমার)
স্পেন-০
হোসে মোরিনহো শুরু করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে।
হেইনকেস আর একটু এগিয়ে দিয়েছিলেন বায়ার্ন মিউনিখকে দিয়ে।
লা রোখা-র মৃত্যুঘণ্টা বাজতে চলেছে, কনফেড সেমিফাইনালে প্রান্দেলির ইতালি সঙ্কেত দিয়েছিল।
তা বলে স্কোলারি-পাহিরা জুটির হাতে যে এ রকম বিশ্রী ভাবে তিকিতাকার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটবে তা আমি কেন, সম্ভবত ফুটবল বিশ্বের কেউই কল্পনা করেনি।
বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা পর্যুদস্ত! ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ধরাশায়ী! গত তিন বছর বিশ্ব-ফুটবলের অশ্বমেধের ঘোড়া দেল বস্কির স্পেন গোল করা ছেড়ে গোল বাঁচাচ্ছে! রবিবার গভীর রাতে টিভিতে দেখতে দেখতে কেমন অবিশ্বাস্য লাগছিল!
কিন্তু কী সেই রসায়ন? কোন সেই ওষুধ? যা দিয়ে জাভি, ইনিয়েস্তা, তোরেসদের রিংয়ের বাইরে পাঠিয়ে দিল নব্য ব্রাজিল?
কনফেড কাপ ফাইনালে ব্রাজিলের ছড়িয়ে দেওয়া রংমশাল দেখে আমার মনে হচ্ছে, ফের যেন ফিরছে সেই সাবেকি ঘরানার গতির ফুটবল। তবে অন্য মোড়কে। রিভার্স রানিং আর প্রেসিং ফুটবলের মিশেল হয়ে। ৪-২-৩-১ থেকে ৩-৪-২-১কত ভাঙা-গড়াই দেখলাম মারাকানা স্টেডিয়ামে।
ফাইনাল শেষে ইনিয়েস্তা এবং দাভিদ লুইজ। ছবি: এপি
তিকিতাকার ভিত পাস-পাস-পাস। যাতে ম্যাচের তুলনামূলক গতি কমে যায়। বিপক্ষের গোলে বল পৌঁছতে সময় লাগে। তার পাল্টা ওষুধ গতি ছাড়া আর কী হবে? স্পেন ম্যাচে স্কোলারির ব্রাজিলকে মনে করুন। দুই উইং দিয়ে হাল্ক আর নেইমারের গতির ব্যবহার। মাঝে অস্কারের পেন্ডুলামের মতো দুলতে-দুলতে দুই উইংয়ে পাস বাড়ানো। একটু পিছন থেকে পওলিনহো, গুস্তাভোর বক্স টু বক্স তীব্র গতিতে ওঠানামা। নিখুঁত স্ট্র্যাটেজি।
স্কোলারির হাতে ২০০২ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দলের চূড়ান্ত ব্যক্তিগত উৎকর্ষের কোনও রোনাল্ডো, রিভাল্ডো বা রোনাল্ডিনহো এ বার ছিল না। যারা ছিল সেই ফ্রেড, লুইজ, আলভেজ, মার্সেলোরা বরং টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ছিলেন সমালোচনায় বিধ্বস্ত। নেইমারকে পর্যন্ত বলা হচ্ছিল ‘ওভার রেটেড’। স্কোলারিকে কয়েক দিন আগেও গ্যালারি থেকে শুনতে হয়েছে ‘বাঁদর’ শব্দটা। ব্রাজিল কোচ জানতেন, তুলনায় কঠিন গ্রুপ থেকে নক আউটে উঠে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য টিম গেম আর গতিই সেরা অস্ত্র।
তিনটের মধ্যে দু’টো গোল হয়েছে শুরুতেই। একটা খেলা শুরুর দেড় মিনিটে। অন্যটা সেকেন্ড হাফের গোড়ায়। দু’টোই ফ্রেডের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যার বিশেষ নম্বর ছিল না। নিজে কোচিং করাতে গিয়ে দেখেছি, অনামীদের মহানায়ক হয়ে ওঠা টিমকে অন্য রকম শক্তি জোগায়। ব্রাজিলের স্ট্র্যাটেজিই ছিল পিকে-জাভিরা গুছিয়ে ওঠার আগেই ওদের মেরে ফেলো। শুনলাম দেল বস্কির জমানায় কখনও এত দ্রুত গোল খায়নি স্পেন। ফ্রেডের দু’টো গোলের মাঝে করা নেইমারের গোলটা বলব এ বারের কনফেড কাপের সেরা। বাঁ পায়ের আউট সাইড ভলিতে প্রথম পোস্ট দিয়ে কাসিয়াসকে দর্শক বানিয়ে সটান জালে! এ রকম গোল তো মেসি করে। মারাদোনা করত।
গতি আর যৌবনের ধাক্কায় স্পেন কেঁপে গিয়েছিল। দেল বস্কির টিমকে ফাইনালে একটু ক্লান্তও দেখাচ্ছিল। কিন্তু তা বলে কন ওদের এত সুপারস্টার থাকতে পেনাল্টি মারতে গেল র‌্যামোস? ওটা গোল হলে স্পেন হয়তো লাইফ লাইন পেত। তবে ৬৭ মিনিটে পিকের লালকার্ড দেখে বাইরে চলে যাওয়াটা ভবিতব্য ছিল। নেইমারদের কোনাকুনি দৌড় আটকাতে স্পেনের হাত-পা চালানো ছাড়া তখন পথ ছিল না। নিজে ডিফেন্ডার ছিলাম বলেই কুর্নিশ জানাব দাভিদ লুইজকে। যে ভাবে পেদ্রোর নিশ্চিত গোলটা গোললাইনে গিয়ে বাঁচাল তা স্বপ্নের মতো। ওটা গোল হলেও স্পেল লাইফ লাইন পেত।
কনফেড কাপে ব্রাজিলের হ্যাটট্রিক হল। কিন্তু গত এক দশক বিশ্বকাপে তারা কিছু করতে পারছে না। এ বার কি পারবে? আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে রাজি নই। এক বছর বিশ্ব ফুটবলে অনেক সময়। অনেক কিছু বদলাবে। বিশ্বকাপ-মুখী প্রতিটা দেশের কোচই কিন্তু ভিডিও অ্যানালিস্ট নিয়ে নেইমারদের ফুটবলের কাটাছেঁড়ায় বসে পড়েছেন!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.