নেদারল্যান্ডসের রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই জড়িয়ে ধরল মার্সেলো। রবিবার রাতে ঐতিহাসিক মারাকানায় আমার সঙ্গী।
নেইমার, ফ্রেডরা ততক্ষণে জাতীয় পতাকায় মুড়ে আনন্দে নাচছে। ঠিক তখনই স্কোরবোর্ডে ভেসে উঠল ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া মারিনের মুখটা। কাঁদছেন, আসলে আনন্দাশ্রু। চোখেমুখে একটা তৃপ্তির ছাপ। গত বছরের শেষে মানো মেনেজেসকে সরিয়ে স্কোলারি-পাহিরাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর দেশের মিডিয়া মারিনকেই বেশি বিঁধেছিল। গুয়ার্দিওলার জন্য সওয়াল করেছিলেন কেউ কেউ। মারিন শোনেননি। না শুনে ঠিকই করেছিলেন, আজ বোঝা যাচ্ছে।
মার্সেলোকে কথাগুলো মনে করাতেই ও বলল, এখন ওসব বাদ দাও। আনন্দ কর। আমরা চ্যাম্পিয়ন। গোটা মারাকানা তখন গাইছে ‘ও কাম্পেয়াও ভলতু’। ইংরেজি করলে, চ্যাম্পিয়ন্স আর ব্যাক। |
সত্যিই নেইমার-ফ্রেডদের কথা ভাবলেই গর্ব হচ্ছে। কী ভাবেই না মনোবল একদম তলানিতে চলে যাওয়া একটা দলকে ফের স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনল ওরা। বিশেষ করে নেইমারের জন্য গর্বটা আরও বেশি। ও যে আমারই মতো সাওপাওলোর ছেলে! নেইমার যখন স্যান্টোসে আসে তখন ওর বাবার একটা কথা কানে বাজছে। বলেছিলেন, ছেলেকে এক পায়ে নয়। দু’পায়েই মারতে শিখিয়েছি। কনফেডে এসে বুঝলাম সিনিয়র নেইমার কথাটা কেন বলেছিলেন। গোটা টুর্নামেন্টে বক্সের মধ্যে বল উড়ে আসলেই গোল করে গেল নেইমার। ডান, বাঁ - দু’পায়েই। ফাইনালের গোলটার তো জবাব নেই। রোনাল্ডো, কাকাদের পর নেইমারই এখন আমাদের যাবতীয় আশা ভরসা। বিশ্বকাপে আমাদের ট্রাম্পকার্ড। মারাকানায় ও বুঝিয়ে দিয়েছে ফুটবলটা অঙ্ক নয়। নিছকই একটা খেলা। যা ব্রাজিলীয়রা উপভোগ করে। এই মজাটাই কয়েক দিনের জন্য উধাও হয়ে গিয়েছিল। নেইমাররা সেটা ফিরিয়ে আনছে। বার্সায় মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তাদের পাশে খেললে এক বছর পরে ও আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। শুধু ওজনটা একটু বাড়াতে হবে। কনফেডের পরেই ওকে দৌড়তে হচ্ছে টনসিল অপারেশন করাতে। যা নিয়ে ব্রাজিলে রসিকতা, ড্রেসিংরুমে চেঁচিয়েই নাকি গলা বিগড়ে গিয়েছে নেইমারের।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আমরা এই মুহূর্তে বাইশ নম্বরে। ঘানারও পিছনে। ব্রাজিল আর সেই ব্রাজিল নেই শুনে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল। আশা করছি, রবিবারের পর থেকে এ বার আর শুনতে হবে না। স্পেন ভেবেছিল তিকিতাকায় পিষে ফেলবে আমাদের। ফাইনালে শেষের দিকে বরং উলটোটাই দেখলাম। এক সঙ্গে ১৭-১৮-টা পাস খেলছিল ডেভিড লুইজ-পওলিনহো-নেইমাররাই। গ্যালারিতে তখন তুমুল টিটকিরি। আমরা এক সঙ্গে পর্তুগিজে বলছিলাম খেলতে চাও! এসো, নেইমার শিখিয়ে দেবে। |