মারাকানায় রবিবার রাতের নেইমারকে দেখার পর বুঝে উঠতে পারছি না, ওকে ঠিক কী ভাবে ব্যখ্যা করা উচিত। শুধু স্ট্রাইকার বলব, নাকি বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া অসম্ভব ভাল এক জন গেমমেকার?
আমার মনে হয়, নেইমারকে শুধু স্ট্রাইকার ভাবলে ওকে অপমানই করা হবে। নেইমার এমন এক বিরল জাতের ফুটবলার যার শ্যুটিং দুর্দান্ত, পেনাল্টি বক্স বা আশেপাশে পেলে শটের পাওয়ারেই জাল ছিড়ে দেবে। আবার একই সঙ্গে তিন-চার জন ডিফেন্ডারের মধ্যে থেকে এমন এমন সব পাস বাড়াবে, যা থেকে গোল না করাটাই অপরাধ। দু’টো ব্যাপার আপনাদের মনে করতে বলছি। ওর দ্বিতীয় গোল এবং ফ্রেডকে বাড়ানো একটা পাস। ওয়ান টু ওয়ান পেয়ে গিয়েছিল ফ্রেড। গোলটা করতে পারলে চার গোল হয়! |
পরিষ্কার বলছি, ব্রাজিলে রোনাল্ডিনহোর পর এত ভাল গেমমেকার কাউকে দেখিনি। কিন্তু নেইমারের মতো গতি রোনাল্ডিনহোরও ছিল কি? কনফেড কাপ চলার সময় বিভিন্ন কাগজে দেখছিলাম, ওকে গ্যারিঞ্চার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো। আমি ও সব তুলনা-টুলনায় বিশ্বাসী নই। আর একটা কথা। নেইমারকে নিয়ে ‘ও গ্যারিঞ্চার মতো খেলে’ বা ‘অনেকটা যেন রোনাল্ডো’ এ সব বেশি দিন বলতে হবে না। এ ভাবে খেললে মেসি-রোনাল্ডোদের যে ভাবে আমরা স্বতন্ত্র ভাবে চিনি, নেইমারকেও সে ভাবেই চিনব।
আমার তো মনে হয়, কালে কালে ও রোনাল্ডোকেও ছাড়িয়ে যাবে। কেন বলছি? নেইমারের দু’টো পা-ই অসম্ভব ভাল। নইলে কাল ও রকম একটা শটে উপরের নেট কাঁপিয়ে দিতে পারত না। মনে রাখবেন, গোলের নীচে কাসিয়াস ছিল, যে কি না বিশ্বের সেরা দুই গোলকিপারের এক জন। সেই কাসিয়াসকে ও নড়তে দেয়নি। |
রোনাল্ডোর সেখানে ডান পা-টা ভাল। খেয়াল করলে দেখবেন, নেইমারের মধ্যে একটা চোরা গতি আছে। বল পাওয়া পর্যন্ত এক রকম। পাওয়ার পরে আর এক রকম। এক ঝটকায় গতি বাড়িয়ে বিপক্ষ বক্সে ঢুকে পড়বে। রোনাল্ডো আচমকা এতটা স্পিড তুলতে পারে না। র্যামোস, পিকে-র মতো স্পেনের পোড়খাওয়া ডিফেন্ডাররা পর্যন্ত নেইমারকে আটকাতে নাকানিচোবানি খেয়ে গেল!
আরও একটা কথা বলতে হবে। নেইমার এখন শিখে গিয়েছে, কী ভাবে ডিফেন্ডারদের বোকা বানানো শুধু নয়, কী ভাবে কার্ড ধরাতে হবে। যেটা আগে ওর মধ্যে দেখিনি। রবিবার পিকে ওকে আটকাতে গিয়ে লাল কার্ড দেখল। আরবেলোয়া আটকাতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখল। যেটাও লাল কার্ড হলে কিছু বলার ছিল না। এক জন বড় স্ট্রাইকারের যে গুণটা থাকা দরকার। এত দিন ওকে নিয়ে বলা হত, নাটক করে ডিফেন্ডারদের কার্ড দেখায়। রবিবারের পর সেটা নিশ্চয়ই বন্ধ হবে। নেইমার এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি করে দিচ্ছে যেখানে ওকে মেরে আটকাতে হবে, নইলে গোল খেতে হবে। |
আমি নিশ্চিত, বার্সেলোনায় খেলতে গিয়ে আরও পরিণত হবে নেইমার। আরও পাল্টাবে, আরও ক্ষুরধার করবে নিজেকে। এত দিন শুনতাম, ইউরোপের টিমের সঙ্গে পারবে না নেইমার। স্পেন, ইতালির সঙ্গে স্বপ্নের ফুটবল খেলে জবাবটা ও দিয়ে দিল। শুধু একটাই জিনিস দেখার এখন। বার্সায় খেলার সময় কমপ্লিট ফুটবলারের মুকুটটা ওকে সেই ইউরোপই পরায় কি না।
|
• সোনার বল (সেরা ফুটবলার) - নেইমার
• ফাইনালের সেরা- নেইমার
• সোনার বুট (সর্বোচ্চ গোলদাতা) - তোরেস (৫) |
|