জলে ভাসছে সাবওয়ে, পাল্টায়নি ভোগান্তির ছবি |
রাস্তায় প্রায় এক মানুষ সমান জল। অগত্যা যাতায়াত করতে হচ্ছে রেল লাইন পেরিয়ে। দীর্ঘ দিন এই সমস্যা চললেও প্রশাসনের উদাসীনতার জন্য আজও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
প্রতি বর্ষায় এটাই চেনা ছবি বালি ও বেলুড় রেল সাবওয়ের। বালি পুরসভা ও পঞ্চায়েতের সীমানায় পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের এই সাবওয়ে দু’টিতে অল্প বৃষ্টিতেই এক হাঁটু জল জমে। টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে প্রায় সাড়ে চার-পাঁচ ফুট জল জমে যায়। রেল কর্তৃপক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে বহুবার জানিয়েও সমস্যা মেটেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই এ বার রাস্তায় নেমেছেন তাঁরাই। সোমবার বালি ছোট দুর্গাপুরের বাসিন্দারা চাঁদা তুলে তিনটি পাম্প বসিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা এলাকার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘ দিন এই সমস্যা চললেও রেলের তরফে কিছুই করা হয় না। এখন বিকল্প নালা কেটে জমা জল ফেলা হচ্ছে। বালিতে রেলের থার্ড লাইনের কাজ করতে গিয়ে নিকাশি নালা বুজে গিয়ে বিপত্তি বেড়েছে।” |
বৃষ্টি হলেই সাবওয়ের সেই চেনা ছবি। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী। |
যদিও পঞ্চায়েত ও পুর এলাকার নিকাশি সমস্যাকেই জল না সরার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের এক কর্তা বলেন, “সাবওয়ে দু’টিতে পাম্প লাগানো হয়েছে। কিন্তু জমা জল বার করলেও ফের তা সাবওয়েতে চলে আসছে।” বালি-জগাছা ব্লকের বিডিও সুনন্দ ভট্টাচার্য বলেন, “সাবওয়েগুলি অনেকটা কড়াইয়ের মতো। সঙ্গে নিকাশি সমস্যা রয়েছে। তবে সেচ দফতর থেকে পঞ্চায়েত এলাকায় বড় কিছু নালা তৈরি হচ্ছে। আশা করি তাতে সমস্যা কিছুটা মিটবে।” পঞ্চায়েত ও পুর এলাকায় নিকাশির সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন বালির তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ ও ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বালি পঞ্চায়েত ও পুর এলাকার জল জমার সমস্যা মেটাতে একটি পাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান রাজীববাবু।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শুধু বৃষ্টি নয়। গঙ্গায় জোয়ার এলেও সাবওয়েগুলিতে জল জমে। কারণ, বালি সাবওয়ের জল রেলের নিকাশি নালা দিয়ে রামচন্দ্রপুর ইটভাটার কাছে বালি খালে এবং বেলুড় সাবওয়ের জল চাঁদমারি হয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন খালে পড়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। বালি পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বালি পুর এলাকার গঙ্গার দিকটা উঁচুু। ফলে জোয়ারে জল যেমন চলে আসে তেমনই পুর এলাকার বর্ষার জলও ওই সাবওয়ে দিয়েই পঞ্চায়েতের নালায় পড়ে। রবিবার সকালে পঞ্চায়েত এলাকার পাশাপাশি সাবওয়ে দু’টি থেকে জল সরাতে রামচন্দ্রপুর এলাকায় বিকল্প নিকাশি নালা খোঁড়ার কাজ শুরু করে সেচ দফতরের একটি জেসিপি মেশিন।
বালি পুর এলাকার দুই প্রান্তের ওই দুই সাবওয়ে দিয়েই সহজে পুর এলাকা থেকে পঞ্চায়েত এলাকায় যাওয়া যায়। সোমবার সকালে দেখা গেল, বেলুড় স্টেশন থেকে মোহনলাল বাহাওয়ালা রোড, পদ্মবাবু রোড হয়ে বালি স্টেশনের সাবওয়ে পর্যন্ত জল জমে রয়েছে। অবস্থা এমনই যে আর কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে পুরো সাবওয়ে ডুবে রেল লাইনে জল উঠে যাবে।
বাসিন্দারা জানান, সাবওয়ে বন্ধ থাকলে কয়েক কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হবে। আবার পানীয় জলের জন্য এই সাবওয়ে দু’টি পার করেই বাসিন্দাদের বালি পুর এলাকায় আসতে হয়। তাই তাঁরা রেল লাইন পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, “সাইকেলে বড় ড্রাম নিয়ে রেল লাইন পেরোনো মুশকিল। তাই গলা জল ভেঙে বেলুড় স্টেশনের সাবওয়ে পার করে জল আনলাম।” তবে অনেকেই আবার সাইকেল কাঁধে ঝুঁকি নিয়েও লাইন পার করছেন। |