অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্ব হইতে শ্রীমতী জুলিয়া গিলার্ড-এর অপসারণ সে দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা শীর্ষ প্রশাসকের বিদায়ও বটে। এই অপসারণের কারণ শাসক লেবার পার্টির নেতৃত্বের স্থান হইতে তাঁহার বিচ্যুতি। তাঁহাকে সরাইয়া দিয়া দলনেতা হইয়াছেন সেই কেভিন রাড, ২০১০ সালে যাঁহাকে একই ভাবে সরাইয়া শ্রীমতী গিলার্ড নেতৃত্ব হাসিল করিয়াছিলেন। জুলিয়া গিলার্ড অবশ্য রাজনীতি হইতেই অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন।
গিলার্ড প্রথমাবধি পুরুষতন্ত্রের বাধা ও অন্তর্ঘাতের সম্মুখীন হইয়াছেন। দলের বাহিরে ও ভিতরে পুং-প্রাধান্যের অভিযোগ তাঁহার তরফে বারংবার শুনা গিয়াছে। লেবার পার্টির মধ্যেও কেবল মহিলা বলিয়া তাঁহাকে হেনস্থা করার, অযোগ্য প্রতিপন্ন করার প্রবণতার বিরুদ্ধে তিনি একাধিক বার মুখর হইয়াছেন। তাঁহার পোশাক, চালচলন, এমনকী হাঁটা-চলা লইয়াও ব্যঙ্গবিদ্রুপ কম হয় নাই। অস্ট্রেলিয়ার সমাজে পিতৃতান্ত্রিক প্রাধান্য ও কুসংস্কার আজও প্রবল। জুলিয়া গিলার্ডের প্রশাসনিক ত্রুটিবিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা লইয়া তাঁহাকে বিদ্ধ করিতে বিরোধীদের পাশাপাশি তাঁহার নিজ দলের উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিকরাও পিছপা হন নাই। অথচ সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় রাখিতে গিলার্ড অন্যান্য দল ও সাংসদদের সহিত দরকষাকষিতে রীতিমত নৈপুণ্যের পরিচয় দেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁহার চাপানো কিছু কর ও রাজস্ব জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করিয়া থাকিবে। চিনা অর্থনীতির মন্দার প্রত্যক্ষ প্রভাবে অস্ট্রেলীয় ডলারের মূল্যমানও হ্রাস পাইতে থাকে। জনমত-সমীক্ষায় দেখা যায়, গিলার্ডকে নেত্রীপদে রাখিয়া নির্বাচনে গেলে লেবার পার্টির জয়ের সম্ভাবনা নাই। কেভিন রাড সম্ভবত এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি সমর্থকদের লইয়া জুলিয়ার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করেন এবং ভোটাভুটিতে অধিকাংশ দলীয় কর্মকর্তার সমর্থন পান।
স্বভাবতই রাড-এর প্রথম কর্তব্যই ছিল, তিনি নারীবিদ্বেষী নন, ইহার প্রমাণ দেওয়া। গিলার্ডের পরাজয়ের সঙ্গে-সঙ্গেই বেশ কিছু বর্ষীয়ান মন্ত্রীও ইস্তফা দেন। রাড তাঁহার মন্ত্রিসভায় ১১ জন মহিলাকে অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন। ইহা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে রেকর্ড। তাঁহার নিজের পরিবারে ব্যক্তিত্বময়ী মহিলাদের উপস্থিতিই যে তাঁহাকে নারীর প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শনে প্ররোচিত করে, তাহাও ঘোষণা করিয়াছেন। নির্বাচনে তিনি যে অস্ট্রেলিয়ার মহিলাদের ভোট নিশ্চিত করিতে ব্যগ্র, তাহা স্পষ্ট। তবে শুধু এই কারণেই তিনি বিরোধী উদারনীতিক নেতা টনি অ্যাবটের জয়ের সম্ভাবনা কাড়িয়া লইতে সক্ষম হইবেন, এ কথা বোধ হয় জোর দিয়া বলা যায় না। অ্যাবট প্রকাশ্যেই রাড-এর নূতন মন্ত্রিসভাকে একেবারে ‘তৃতীয় শ্রেণির মন্ত্রিসভা’ বলিয়া বিদ্রুপ করিয়াছেন। যোগ্যতানিরপেক্ষ ভাবে কেবল মহিলা বলিয়া যদি কাহাকেও মন্ত্রী বানানো হয়, তবে তাহা যে প্রশাসনের মান বৃদ্ধি করিবে না, ইহা স্বতঃসিদ্ধ। রাজনীতি অতি জটিল বস্তু। |