এখনও নিখোঁজ বহু
উত্তরাখণ্ড নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি-র টুইট-টক্কর
দ্ধারের কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু, উত্তরাখণ্ড নিয়ে রাজনীতির তরজা শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। বরং আজ উত্তরাখণ্ড নিয়ে কাজিয়া আরও তীব্র হয়ে উঠল কংগ্রেস ও বিজেপি নেতাদের টুইটার-যুদ্ধে।
টক্করের শুরু লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের একটি টুইটে। তাতে তিনি উত্তরাখণ্ড সরকারের সমালোচনা করেন। উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেস সরকারের আর ক্ষমতায় থাকারও অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি জবাব দিতে দেরি করেননি। টুইটারে সুষমাকে বিঁধে তিনি লেখেন, “দুই কক্ষের বিরোধী নেতারা সিবিআইয়ের স্বশাসনের প্রস্তাবের খুঁটিনাটি নিয়ে সমালোচনা করার সময় পাচ্ছেন। উত্তরাখণ্ডে যাওয়ার সময় পাননি।”
সাহায্যের হাত। সোমবার বদ্রীনাথে। ছবি: পিটিআই
এর পরেই একের পর এক টুইট করতে থাকেন ক্রুদ্ধ সুষমা। জানান, তিনিই বিপর্যয়ের ভয়াবহতার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে জানিয়েছিলেন। শিন্দেই প্রকাশ্যে ভিআইপিদের উত্তরাখণ্ডে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তাই তিনি বা রাজ্যসভার বিরোধী নেতা অরুণ জেটলি সেখানে যাননি। জবাবে মণীশ প্রশ্ন তোলেন, তা হলে নরেন্দ্র মোদী কী ভাবে সেখানে গেলেন। এর কোনও জবাব এখনও দেননি সুষমা। কিন্তু, তত ক্ষণে সাইবার-দুনিয়া পেরিয়ে বাগযুদ্ধ নেমে এসেছে বাস্তবের মাটিতেও। উত্তরাখণ্ড সরকারকে নিয়ে সুষমার মন্তব্যের সমালোচনা করেন অম্বিকা সোনি। নরেন্দ্র মোদী উত্তরাখণ্ডে দিয়ে ১৫ হাজার গুজরাতিকে উদ্ধার করেছিলেন বলে তাঁর অনুগামীরা প্রচার চালিয়েছিলেন। মোদীকে বিদ্রুপ করে কংগ্রেস বলেছিল, তিনি ‘র‌্যাম্বো’-র ভূমিকা পালন করেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি মুখপাত্র মীনাক্ষি লেখি বলেন, “ডাম্বো (বোকা) বা স্ক্যাম্বো (দুর্নীতিগ্রস্ত) হওয়ার চাইতে র‌্যাম্বো হওয়া অনেক ভাল।” টিভি-তে এই মন্তব্যের জবাব দেবেন বলে টুইটারে জানিয়েছেন মণীশ।
শুধু কংগ্রেস-বিজেপি নয়, বিজেপি-র অভ্যন্তরেও চলেছে একে অপরকে খোঁচানোর পালা। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান টুইটারে জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডে মধ্যপ্রদেশের উদ্ধারকারী দল অন্যান্য রাজ্যের মানুষকেও সাহায্য করেছিল। সম্প্রতি কেবল গুজরাতিদের উদ্ধার করায় নীতীশ কুমার, উদ্ধব ঠাকরের মতো এনডিএ নেতারাও মোদীর সমালোচনা করেছেন। অনেকের মতে, চৌহান সেই তালিকাতেই যোগ দিলেন।
সরকারি মতে উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে এলেও এখনও খোঁজ নেই বহু মানুষের। প্রকৃত মৃতের সংখ্যা কখনওই জানা যাবে না বলে ইতিমধ্যেই সাফাই গেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা। রাষ্ট্রপুঞ্জ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এখনও নিখোঁজ ১১ হাজার মানুষ। তাঁদেরই মধ্যে রয়েছেন ছোট্ট স্নেহলতার বাবা-মা। মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা মেয়েটি হাসপাতালে বসে কেঁদেই চলেছে। খোঁজ নেই কোনও প্রিয়জনের।
উত্তরাখণ্ডের হাসপাতালগুলিতে এখন এমনই অনেক স্নেহলতার ভিড়। যে রাজ্য ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনা দেখেছে, সেই মধ্যপ্রদেশও এখন উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ে স্তম্ভিত। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান ঘোষণা করেছেন, স্নেহলতার মতো ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ)-এর পরিসংখ্যান বলছে, পাহাড়ে এখনও আটকে রয়েছেন ১,৫০০। নিখোঁজ ১,৮০০। বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে ১,৩০০টি গ্রাম। রাজ্য সরকারের হিসেব বলছে, এখনও নিখোঁজ অন্তত ৩,০০০। পাথর সরিয়ে, ধ্বংসস্তূপ সাফ করে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে তালগোল পাকিয়ে থাকা দেহগুলি। কিন্তু এত দিনে সেগুলি পচতে শুরু করেছে দেহগুলি। দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন উদ্ধারকারীরাও।
রবিবার বদ্রীনাথ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১,৪৮৯ পুণ্যার্থীকে। তবে প্রকৃতির ভ্রূকুটির কাছে সেনাবাহিনীকে হার মানতে হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। হেলিকপ্টারের বদলে তখন ভরসা শুধুই রাস্তা। ধসে চুরমার হয়ে যাওয়া বেশ কিছু রাস্তা সারিয়ে সেগুলিকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সেনা ঘোষণা করেছে, সোমবারই শেষ করে ফেলা হবে উদ্ধারের কাজ।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে সব রকম চেষ্টা করা হবে। অর্থসাহায্য চাওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)-এর কাছে। ইতিমধ্যেই এক হাজার কোটি টাকার ত্রাণের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। প্রথম দফায় রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের নতুন করে বাড়ি বানাতেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রকৃতির রোষে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া পাহাড়ের গ্রাম-শহরগুলিকে ফের সাজিয়ে তুলতে বিশেষজ্ঞদেরই সাহায্য চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষে ঘোষণা করা হয়েছে, অলকানন্দা এবং ভাগীরথী নদীর ধারে আর কোনও বাড়ি, হোটেল, রেস্তোরাঁ বা দোকান তৈরি করা যাবে না। বিপর্যয় পেরিয়ে এ ভাবে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাইছেন উত্তরাখণ্ডের মানুষ। জওয়ানরা পাহাড় হাতড়ে চলেছেন স্নেহলতাদের নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। কিন্তু বারবারই তাল কেটে যাচ্ছে একের পর এক রাজনীতির কাজিয়ায়।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.