|
|
|
|
আডবাণীদের তত্ত্ব খারিজ |
মোদীর জন্য মেরুকরণে ক্ষতি কী, বলছে সঙ্ঘ
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে নামলে গোটা দেশে ধর্মীয় মেরুকরণ হবে। কিন্তু তাতে মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার মতো
আমজনতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হারিয়ে যাবে।
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের কাছে সম্প্রতি এমন যুক্তিই পেশ করেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। আডবাণীর যুক্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন সুষমা স্বরাজ, যশোবন্ত সিংহ, সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মতো নেতারা। বিজেপি-র সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেও মুম্বইয়ে বসে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এই মতের হয়েই প্রচার চালাচ্ছেন আর একজন। তিনি সুধীন্দ্র কুলকার্নি। বিজেপির অন্দরে যিনি আডবাণীর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই চিহ্নিত।
কিন্তু সঙ্ঘ পরিবার আডবাণীদের এই যুক্তিকে খণ্ডন করছে। বিজেপির অন্দরে অরুণ জেটলি এবং দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ পাল্টা যুক্তির ঝড় তুলেছেন নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে। |
|
একই মঞ্চে। লালকৃষ্ণ আডবাণী, রাজনাথ সিংহ ও নরেন্দ্র মোদী। সোমবার জুনাগড়ে। ছবি: পি টি আই |
সেই যুক্তি হল, প্রথমত, মোদীর উত্থান যদি ভারতীয় ভোটার সমাজে ধর্মীয় মেরুকরণ সৃষ্টি করেও, তাতে বিজেপির লোকসানটা কোথায়? ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম জনসমাজ কোনও দিনই বিজেপিকে ভোট দেয় না। ফলে মেরুকরণের জন্য সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেস পাবে না মুলায়ম পাবেন, নীতীশ পাবেন না লালু পাবেন এ নিয়ে বিজেপির মাথাব্যথার কারণটা কী? বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক যাতে অনেক বেশি সংখ্যায় বিজেপিকে ভোট দেয়, সেই চেষ্টাই করা উচিত বলে মনে করে সঙ্ঘ পরিবার।
দ্বিতীয়ত, আডবাণী এবং সুষমা স্বরাজ এখনও মোদীকে গোধরা-কাণ্ড এবং সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে যুক্ত করলেও অরুণ জেটলিরা কিন্তু মনে করেন, মোদী ক্রমশ তাঁর পুরনো কট্টর ভাবমূর্তিকে ঝেড়ে ফেলে গোটা দেশের সামনে নিজেকে দক্ষ প্রশাসকের ভূমিকায় তুলে ধরতে চাইছেন। এই অবস্থায় মোদীপন্থী নেতারা মনে করছেন, গোধরা নয়, গোটা দেশের বৃদ্ধির হার গুজরাতের মতো শতকরা দশ ভাগে নিয়ে আসাটাই মোদীর মূল চ্যালেঞ্জ হবে।
তৃতীয়ত, অরুণ জেটলিরা দলের মধ্যে আরও প্রশ্ন তুলেছেন, মোদী যদি সাম্প্রদায়িক হন, তা হলে আডবাণী ধর্মনিরপেক্ষ হন কী করে? কারণ, আজ যে ধর্মীয় মেরুকরণের যুক্তি দিচ্ছেন আডবাণী, সেই মেরুকরণের অঙ্ক কষেই ১৯৮৯ সালে রামমন্দির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এবং তখন মেরুকরণের ফায়দা নিয়েছিল বিজেপি। আর আজ আডবাণী ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং মোদী ‘সাম্প্রদায়িক’? এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি, সাকিল আহমেদের তোলা যুক্তিটাকেই সঠিক বলে মনে করছেন আডবাণী বিরোধী বিজেপি নেতারা।
চতুর্থত, আডবাণী-সুষমারা আরএসএসের কাছে যে যুক্তি পেশ করেছেন, সেটি হল মোদীকে সামনে রেখে গোটা দেশে এতগুলি আসন পাওয়া অসম্ভব, যাতে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারে। কারণ, কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ২৭৩টি আসন। মোদীকে সামনে রেখে লড়াই করা মানে এনডিএর শরিক পাওয়া নিয়ে সমস্যা। শিবসেনা ও অকালি দলকে কোনও মতে সঙ্গে রাখা গেলেও বাকি কাউকে পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
কিন্তু আডবাণীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদে রাজনাথ সিংহ-জেটলিদের পাল্টা যুক্তি হল, এনডিএ-র কথা না ভেবে সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপি-র আসন বাড়ানোটাই এখন প্রধান কাজ। বিজেপির প্রবীণ প্রজন্মের বড় অংশ তো বটেই, নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও এখন মোদীর পক্ষে। এই অবস্থায় মোদীকে সামনে রেখে প্রয়োজনে গাঁধীনগর এবং লখনউ-এর দু’টি আসনেই তাঁকে লোকসভার প্রার্থী করে গোটা দেশে হাওয়া তোলা হোক। সে ক্ষেত্রে সঙ্ঘের লক্ষ্য দুশোটি আসন পাওয়া। সঙ্ঘের ধারণা, বিজেপির আসন দুশো হওয়া মানে কংগ্রেস একশোটির কম আসন পাবে। এবং মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি নৈতিক কর্তৃত্ব অর্জন করবে। তখন নীতীশ কুমার কিংবা জয়ললিতার মতো শরিকদের আবার এনডিএতে ফিরিয়ে আনতে কোনও অসুবিধা হবে না।
দলের অন্দরে এই টানাপোড়েনের মধ্যে নরেন্দ্র মোদীও কিন্তু কোনও ভাবেই হিন্দুত্বের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন না। তিনি শিল্পপতিদের মন জয় করেছেন। কৌশলে আমেরিকার মনও জয় করতে সচেষ্ট। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার না করে উদার হিন্দু সমাজের কাছে বিজেপি বার্তা দিতে চাইছে, তারাও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির বিরুদ্ধে,কিন্তু সাম্প্রদায়িক নয়। যে কারণে মোদীর মতো লোক মৌলবাদীদের মতো মাথায় টুপি হয়তো পরছেন না, পাছে সঙ্ঘ নেতৃত্ব অসন্তুষ্ট হন, কিন্তু ধৈর্য ধরে মঞ্চে বসে দাঙ্গার কথা শুনছেন। সহিষ্ণুতা দেখিয়ে সংখ্যালঘুদের বার্তাও দিয়েছেন।
অরুণ জেটলিরা বলছেন, হিন্দুত্ব নয়, মোদীর নেতৃত্বে দক্ষ প্রশাসন এবং উন্নয়নের পাশাপাশি কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়েই ভোট প্রচারে নামবে বিজেপি। দলের শীর্ষ নেতার ভাষায়, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আপাতত বিজেপির কথাই ভাবছি। এনডিএ-র কথা ভাবা যাবে ২০১৪-র পর।” এখনও অবশ্য আডবাণী, সুষমা, যশোবন্ত সিংহের মতো নেতারা সঙ্ঘের এই রণকৌশল মানতে প্রস্তুত নন। কিন্তু দলীয় কর্মীদের চাপের মুখে আপাতত তাঁরা দেওয়াল লিখন মেনেছেন।
অন্তর্কলহের অবসান কিন্তু এখনও হল না। |
পুরনো খবর: সংখ্যালঘুদের বার্তা সহিষ্ণু মোদীর |
|
|
|
|
|