|
|
|
|
ধৈর্য ধরে শুনলেন দাঙ্গার কথা |
সংখ্যালঘুদের বার্তা সহিষ্ণু মোদীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গা নিয়ে কোনও মুসলিম নেতা বিজেপি নেতৃত্বকে তুলোধোনা করছেন। আর নরেন্দ্র মোদী বসে শুনছেন!
গাঁধীনগরে এমনটাই ঘটেছে কাল। মোদীর কট্টর সমালোচক, জাকাত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সইদ জাফর মাহমুদ এ দিন এক আলোচনা চক্রে ২০০২-এর ওই দাঙ্গা ও তার পরবর্তী সময়ে হিংসা-বিধ্বস্ত মুসলিমদের দুর্গতির কথা তুলে ধরেন। দেখানো হয় তার ছবিও। ধৈর্য ধরে জাফর মাহমুদের পুরো বক্তব্যই শোনেন মোদী।
২০০২-এর ওই দাঙ্গা তাঁর কাছে বরাবরই স্পর্শকাতর বিষয়। ওই প্রসঙ্গ তোলায় সংবাদ চ্যানেলের সাক্ষাৎকার থেকে মাঝপথে উঠে চলে যেতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কাল কিন্তু দেখা গিয়েছে অন্য মোদীকে। সব চেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রকাশ্য সমালোচনা শোনার পরেও যিনি বলতে পেরেছেন, “সইদ জাফর মাহমুদ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। সবার কথাই শোনা উচিত। কারণ তা ভাবনাকে উস্কে দেয়।” |
|
বার্তা। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই। |
জাফর মাহমুদ এতে খুশি। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, “খুবই মনোযোগ দিয়ে তিনি আমার কথা শুনেছেন। উপস্থিত শ্রোতারা তা দেখেছেন। আমার ধারণা, কথাগুলো কিছুটা হলেও তাঁদের ভাবনায় ঢুকেছে। আমি নিশ্চিত দেশের চেতনায় এটা ইতিবাচক প্রভাবই ফেলবে।”
ভারতের নবীন নেতাদের আলোচনা চক্র নাম দিয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম যে ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা, দু’দিন আগেই নিজের ব্লগে তা প্রচার করেছিলেন মোদী। গত কালের ওই অনুষ্ঠানের আগে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন দু’জনে। সংবাদচিত্রীদের ছবি তোলার সুযোগও করে দেন দু’জনে। দেশের প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর দিন বসে-বসে জাফরের সমালোচনা শোনা এ দু’টিই রাজনৈতিক ভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এক সময়ে সাচার কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাফর। এ দেশে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য গোটা দেশেই, বিশেষ করে মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। এমন এক ব্যক্তির বক্তব্য মোদী ধৈর্য ধরে শুনছেন স্পষ্টতই দেশের ভাবী নেতা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এটা এক বার্তা।
ভুয়ো সংঘর্ষে ইশরত জহানের হত্যার অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেস যে ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে ভোটব্যাঙ্কের মেরুকরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তা রোখার পাশাপাশি দেশের সব অংশের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মোদী ও দলে তাঁর অনুগামীরা। কিছু দিন আগে দিল্লিতে এসে মুসলিমদের জন্য একটি ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ তৈরি নিয়ে কথা বলে এসেছেন বিজেপি-র প্রচারের মুখ। দলের মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নকভি এখন সেই নথি তৈরির কাজ করছেন। এর পাশাপাশি, কিছু দিন ধরেই রাজনাথ সিংহরা জয়পুর, দিল্লি, পটনা ও উত্তরপ্রদেশের শহরে পরের পর মুসলিম সম্মেলনের আয়োজন করে যাচ্ছেন। সেখানে কার্যত এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছিল, গোধরা-পরবর্তী ঘটনার স্মৃতি মুছে কাজের মানুষ হিসেবেই মোদীকে সমর্থন করাটা প্রয়োজন। কালও ২০০২-এর প্রসঙ্গ তুলে সাচার কমিটির প্রাক্তন কর্তাটি কিন্তু আবেদন রেখেছেন প্রশাসক মোদীর কাছেই। তাঁর বক্তব্য, ২০০২-এর হিংসায় বিধ্বস্ত মুসলিমদের জন্য ধোরাজিনগর ও সিটিজেন নগরে কিছুই করেনি সরকার। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সেখানে গিয়ে দেখা উচিত সেখানে কী ভাবে আছেন মুসলিমরা। এ দিনের আলোচনা চক্রে উপস্থিত অনেকেই, মনে করছেন আলাপ-আলোচনার রাস্তা কখনও বন্ধ করে রাখা উচিত নয়। সহিষ্ণু মোদী আজ সেই রাস্তাটাই খুলে দিলেন। কারণ দিল্লির মসনদ তাঁর পাখির চোখ। এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে মুসলিমদের সমর্থন পাওয়া বা যথা সম্ভব ভোটের মেরুকরণ রোখার চেষ্টায় আজ আরও এক ধাপ এগোলেন মোদী। |
|
|
|
|
|