|
|
|
|
সিবিআইকে স্বশাসন, বেঁকে বসল বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বেঁকে বসায় এখন সিবিআই-তোতাকে খাঁচা-মুক্ত করার প্রক্রিয়া কত দূর সফল হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, কেন্দ্রের খাঁচার তোতা অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হবে সিবিআইকে। সেই নির্দেশ মেনে তিন দিন আগেই সিবিআইয়ের স্বশাসন বিষয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু বিজেপি আজ সরকারের সেই প্রস্তাব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির অভিযোগ, পুরোটাই চমক। কেন্দ্র আসলে মেঘের আড়ালে থেকে সিবিআইকে নিয়ন্ত্রণ করার রাস্তা খুঁজছে। তাঁর অভিযোগ, লোকপাল বিতর্কের সময়ে সিবিআইকে তার আওতায় নিয়ে আসা নিয়ে সরকার একটি সংসদীয় কমিটি গড়েছিল। তাতে বিজেপিরও দুই সদস্য ছিল। কিন্তু সেই সুপারিশ সরকার বাস্তবায়িত না-করে এখন নতুন প্রক্রিয়া শুরু করেছে, বিজেপি যা কিছুতেই মানবে না।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিবিআইয়ের তদন্তে কেউ প্রভাব খাটাচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য তিন জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটিই সিবিআইয়ের তদন্তে নজরদারি করবে। জেটলি আজ যুক্তি দিয়েছেন, “দায়বদ্ধতাহীন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ে এমন একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে, যার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে সিবিআইকে। আসলে সরকার আড়াল থেকে সিবিআইয়ের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চাইছে এবং সিবিআইকে সরকারের হয়ে কাজ করা ছায়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাইছে। সকলের উচিত এর বিরোধিতা করা।” সরকারের অবশ্য যুক্তি, লোকপালের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাওয়াতেই সরকার আর ওই সংসদীয় কমিটির সুপারিশ নিয়ে ভাবছে না। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতেই মন্ত্রিসভা নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রিসভা যে সিদ্ধান্তই নিক, বিজেপি তার বিরোধিতা করলে সংসদে তা আদৌ পাশ করানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হল। বিজেপিও সিবিআইকে অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি সিবিআইকে স্বশাসন দেওয়ার জন্য তাদের প্রক্রিয়ায় বাগড়া দেওয়ার কৌশল নিল।
সরকারের অন্দরমহলেও সিবিআইকে নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনশল ও কংগ্রেস সাংসদ নবীন জিন্দলের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই। সেই সঙ্গে ইশরাত জহান ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অন্যতম শীর্ষ অফিসার রাজেন্দ্র কুমারকেও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। নরেন্দ্র মোদীকে খুনের ষড়যন্ত্রের সন্দেহে ইশরাত ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় গুজরাত পুলিশ। পুলিশের গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু পুরোটাই সাজানো সংঘর্ষ বলে অভিযোগ ওঠায় আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তে নেমে সিবিআই বলছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফেই গুজরাত পুলিশকে ইশরাতদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়। ওই তথ্য দেন রাজেন্দ্র কুমার। তাই কুমারের সঙ্গে গুজরাতের পুলিশ-কর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে সিবিআই।
কিন্তু সংস্থার শীর্ষকর্তাকে সিবিআই জেরা করায় গোয়েন্দা-কর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আজ নতুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী বলেন, “সিবিআইয়ের কাছে কী প্রমাণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, গোয়েন্দা-কর্তা কুমারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সরকারকে দিয়েছে সিবিআই। সেখানে যা তথ্য রয়েছে, তাতে অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন। ফলে সিবিআই আসলে কাকে প্যাঁচে ফেলতে চাইছে, নরেন্দ্র মোদী না কেন্দ্র, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিজেপি অবশ্য সরকারের অন্দরমহলের এই সমস্যা মানতে নারাজ। দলের নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রই সিবিআইকে ব্যবহার করছে মোদীর বিরুদ্ধে। জেটলির বক্তব্য, মুলায়ম ও মায়াবতীর দলের বিরুদ্ধেও সিবিআইকে ব্যবহার করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র তাঁকে চাপে ফেলতে সিবিআই তদন্তের হুমকি দিচ্ছে। আজ বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহও অভিযোগ করেছেন, “কংগ্রেস সরকার সিবিআইয়ের অপব্যবহার করছে। শুধু সিবিআই নয়, অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিরও অপব্যবহারের চেষ্টা করেছে কেন্দ্র।” |
পুরনো খবর: ‘খাঁচার তোতা’ সিবিআইকে মুক্তি দিতে এ বার তৎপর কেন্দ্র |
|
|
|
|
|