‘খাঁচার তোতা’র মুক্তি নিয়ে তৎপর হল মনমোহন সিংহ সরকার। সিবিআইয়ের স্বশাসন চেয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রস্তাবে আজ অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
সম্প্রতি কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সিবিআই-কে কার্যত খাঁচার তোতা করে রেখেছে সরকার। তদন্ত সংস্থাটির নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার জন্য সরকার কী ভাবছে, তা-ও জানতে চেয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশের পরেই সিবিআইয়ের স্বশাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য করা হয়েছিল সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিন্হাকেও।
সূত্রের খবর, মন্ত্রিগোষ্ঠী সুপারিশ করেছে, সিবিআইয়ের কোনও তদন্ত নিয়ে অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের তিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। আর্থিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সিবিআই প্রধানের ক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেছিল মন্ত্রিগোষ্ঠী। সেই সঙ্গে মন্ত্রিগোষ্ঠীর এ-ও প্রস্তাব ছিল, যুগ্মসচিব বা তাঁর থেকে পদস্থ আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্তের জন্য আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে না। সে ক্ষেত্রে সচিবদের একটি কমিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। ওই কমিটিতে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের এক জন প্রতিনিধিও থাকবেন।
মন্ত্রিগোষ্ঠীর সব ক’টি সুপারিশই আজ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে কি না, সরকারের তরফে তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। তবে কম-বেশি সব সুপারিশই মানা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আগামী ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে সিবিআইয়ের স্বশাসনের ব্যাপারে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
সর্বোচ্চ আদালতের চাপ ছাড়াও সিবিআইয়ের স্বশাসন নিয়ে কেন্দ্র তথা কংগ্রেসের এই তৎপরতার পিছনে যথেষ্ট রাজনৈতিক তাগিদও ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে দুর্নীতি প্রশ্নে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা দেখাতে চাইছে কংগ্রেস। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনশল ও কংগ্রেস সাংসদ নবীন জিন্দলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্ত চলছে। ধারাবাহিক জেরা চলছে তাঁদের। সে সব খবর সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশও করে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ইশরাত জহান হত্যাকাণ্ডের তদন্তেও গতি বাড়িয়েছে সিবিআই। যে তদন্তের আঁচ নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহের ওপর এসে পড়ছে। এ দিকে, মোদী দলের প্রচার কমিটির দায়িত্ব পেয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আগামী দিনে এই বিষয়টিকে তাঁরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বড় অস্ত্র করবেন। ফলে এর পর বিজেপি সিবিআইয়ের অপব্যবহারের অভিযোগ তুললে কংগ্রেসেরও পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত থাকছে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ আজ বলেন, সিবিআইয়ের কোনও তদন্তে নাক গলানোর পক্ষপাতী নয় সরকার। সেটাই ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। কিন্তু যখন বনশল বা জিন্দলের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, তখন বিজেপি চুপ থাকছে। আর ইশরাত মামলা নিয়ে তদন্ত করলেই রাজনৈতিক অপব্যবহারের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। শাকিলের কথায়, “বিজেপির দ্বিচারিতা বুঝতে মানুষের দেরি হবে না।” |