১৯৯৮ সালের অক্টোবর। লোকসভা ভোটের আগে বৃষ্টিতে থইথই কাটোয়া ও কেতুগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। স্কুলবাড়ি বাদ দিয়ে অস্থায়ী বুথ তৈরি করতে হয়েছিল ভাগীরথী ও অজয় বাঁধে। এ বার ভরা বর্ষায় পঞ্চায়েত ভোট হলে ১৯৯৮-এর সেই পরিস্থিতিই ফিরে আসবে কি না, প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে আমজনতা, সবার মনেই।
কাটোয়া মহকুমা নির্বাচনী দফতরের এক প্রাক্তন কর্মী বলছিলেন, “১৯৯৮ সালে অক্টোবরে ভোটের কয়েক দিন আগে থেকেই নিম্নচাপের জেরে কাটোয়া, কেতুগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গিয়েছিল। তাই ভোটের দিন বাধ্য হয়েই কাটোয়ার গাজিপুরে দশদুয়ারি বাঁধে এবং অজয়ের বাঁধের উপরে বুথ করতে হয়েছিল।” মহকুমা কৃষি দফতর থেকে জানা গিয়েছে, ধারাবাহিক ভাবে ১৫ জুলাই সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে আসছে কাটোয়ায়। ২০১১ সালের ১৫ জুলাই সে ভাবে বৃষ্টি না হলেও ২০১২ সালে ওই দিনে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১১৯.৭ মিলিমিটার। ২০১০ সালে তা ছিল ৯০.৪ মিলিমিটার।
|
কাটোয়া মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে বিকল্প জায়গা খুঁজে রাখা হচ্ছে। বিডিও-দের সঙ্গে এ ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে কথাও হয়েছে।” তিনি জানান, বন্যাপ্রবণ গ্রামগুলির পরিস্থিতি জানিয়ে একটা সবিস্তার রিপোর্ট নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ঘোর বর্ষায় নিরাপত্তারক্ষী ও ভোটকর্মীরা কী ভাবে বুথে যাবেন, তা নিয়েও চিন্তিত প্রশাসন। আর রাস্তায় জল ডিঙিয়ে বা কাদার মধ্যে দিয়ে ভোটাররা, বিশেষত মহিলারা কী ভাবে ভোট দিতে যাবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে।
কাটোয়া মহকুমায় ভাগীরথী, অজয়ের মতো বড় নদী ছাড়াও কুয়ে, বাবলা, ইন্দ্রাণী, খড়ি, ব্রাক্ষণী-সহ অসংখ্য ছোট সেচখাল রয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই দু’কূল উপচে গ্রাম প্লাবিত করে সেগুলি। কাটোয়া ২ ব্লকে অগ্রদ্বীপ, গাজিপুর, সিঙ্গী, কাটোয়া ১ ব্লকের করজগ্রাম, আলমপুর, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের আগরডাঙা, আনখোনা, বেরুগ্রাম ও কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতই বন্যাপ্রবণ। ফি বছরই এই সব এলাকায় বন্যা হয়। মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জুন-জুলাইয়ের বৃষ্টির পরিমাণ (৫১৪ মিলিমিটার) এ বছর ২৮ জুন পর্যন্ত ছাড়িয়ে গিয়েছে (৫৯৬ মিলিমিটার)। কৃষিকর্তাদের আশঙ্কা, এই অনুপাতে বৃষ্টি হলে ভোটের সময় কপালে দুঃখ আছে।
|
জুলাইয়ে বৃষ্টি |
২০০৫ |
৩৬৮.৩ |
২০০৬ |
৪২২.৮ |
২০০৭ |
৪৪৪.৭ |
২০০৮ |
৪৪৪.৬ |
২০০৯ |
২০৯.৭ |
২০১০ |
২১২ |
২০১১ |
৪৩০.৯ |
২০১২ |
৪৪০ |
(বৃষ্টির পরিমাণ মিলিমিটারে) |
|
কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের চর কবিরাজপুরে কোনও বুথ নেই। সেখানকার মানুষজনকে ভাগীরথী পেরিয়ে কবিরাজপুরে গিয়ে ভোট দিতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সনৎ সাহা, শঙ্কর দাসদের কথায়, “ভোটের দিন বৃষ্টি হলে ভাগীরথী পেরিয়ে কত জন ভোট দিতে যেতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” ওই ব্লকের অগ্রদ্বীপ, সাহেবনগর-সহ বেশ কিছু গ্রাম এবং কেতুগ্রাম ২ ব্লকের মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের সাতটি গ্রামে বুথ ও নিরাপত্তারক্ষীদেরও ভাগীরথী পেরিয়ে সংশ্লিষ্ট বুথে পৌঁছতে হবে। ফলে, ব্লক প্রশাসন ইতিমধ্যে নৌকা ও ছাতার ব্যবস্থা করে রেখেছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষায় ভোট হওয়ায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নানা জরুরি জিনিসের সঙ্গে পলিথিনের প্যাকেটও রাখা হয়েছে। ব্যালট পেপার আবশ্যিক ভাবে প্লাস্টিকে মুড়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এ ছাড়াও ব্যালট বাক্স ঠিক মতো গণনাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হবে। |