অসুস্থ স্বামীকে দেখতে বিহার থেকে বর্ধমানে এসেছিলেন স্ত্রী। সঙ্গে এনেছিলেন তিন ভাড়াটে খুনি।
ভোরে কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতেই গুলিতে খুন হন রেলকর্মী দিলীপ মাহাতো (৪৭)। বর্ধমানের ত্রিপল কলোনি রেল আবাসনের এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বিন্দুদেবী ও পড়শি যুবক নিসার ধুনিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিসারের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এবং স্বামীর মৃত্যুর পরে রেলে চাকরির আশা, এই দুই কারণেই বিন্দুদেবী দিলীপবাবুকে খুন করিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি।
লিলুয়া রেল ওয়ার্কশপের কর্মী দিলীপবাবুর বাড়ি বিহারের রাজমহলে। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন বিন্দুদেবী। মাঝে-মধ্যে বর্ধমানে আসতেন। অসুস্থ থাকায় বেশ কিছু দিন কাজে যাচ্ছিলেন না দিলীপবাবু। সেই খবর পেয়ে ২৫ জুন রাতে বর্ধমানে পৌঁছন বিন্দুদেবী। দিলীপবাবুই তাঁকে স্টেশন থেকে বাড়ি নিয়ে যান। আর পরের ভোরেই খুন হন তিনি। |
পুলিশ জানায়, খুনের ধরণ দেখে সন্দেহ হয়, আততায়ী নিহতের পরিচিত। তদন্তে নেমে লেপ-তোশকের ব্যবসায়ী নিসারের সঙ্গে দিলীপবাবু ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠতার কথা জানতে পারে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নিসারের কথায় অসঙ্গতি মেলে। মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড দেখে জানা যায়, প্রতি দিনই বিন্দুদেবীর সঙ্গে তার দীর্ঘ কথাবার্তা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় নিসার জানায়, দিলীপবাবুর আবাসনে যাতায়াতের সুবাদে বিন্দুদেবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছু দিন আগে দিলীপবাবুর কাছে সে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ধার নেয়। সেই টাকা ফেরত চাওয়া নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত।
পুলিশকে নিসার জানিয়েছে, বিন্দুদেবীর সঙ্গে আলোচনা করে খুনের ছক কষে সে। বিন্দুদেবীকে রেলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যাবতীয় বন্দোবস্তের আশ্বাসও দেয়। পরিকল্পনা মতো রাজমহল থেকে তিন জন ভাড়াটে খুনি নিয়ে বর্ধমানে আসেন বিন্দুদেবী। রাতে ওই তিন জনকে নিসার নিজের দোকানে আশ্রয় দেয়। পুলিশ সুপার বলেন, “ভোরে দিলীপবাবুর আবাসনে যায় নিসাররা। দিলীপবাবু দরজা খুলতেই প্রথমে ধস্তাধস্তি, পরে গুলি করে পালিয়ে যায় তারা।”
পুলিশ জানায়, ঘটনার পরে বিন্দুদেবী জানিয়েছিলেন, ঘরের ভিতরে থাকায় তিনি কিছু দেখেননি। এর পরে তিনি রাজমহল ফিরেও যান। কিন্তু ঘনঘন খোঁজ নিচ্ছিলেন, ময়না-তদন্ত রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে। নিসারের কাছে পুরো ঘটনা জেনে সেই রিপোর্ট দেওয়ার নাম করেই বিন্দুদেবীকে বর্ধমানে ডেকে পাঠায় পুলিশ। রবিবার রাতে স্টেশনে পৌঁছতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের দাবি, জেরায় বিন্দুদেবী জানান, তিনি ৬০ হাজার টাকা দিয়ে রাজমহলের তিন যুবককে ভাড়া করেছিলেন। পুলিশকে তাদের নাম-ঠিকানাও জানিয়েছেন। সোমবার বর্ধমান আদালত ধৃত দু’জনকে ন’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। |