জলের অপচয় রুখতে কর বসাতে চায় পুরসভা
পানীয় জলের জন্য যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয় দুর্গাপুর পুরসভাকে, সেখানেই চলছে জলের চূড়ান্ত অপচয়। পরিশোধিত পানীয় জল ব্যবহৃত হচ্ছে বাড়ি তৈরি বা কাচা, ধোওয়ার মতো বিভিন্ন গৃহস্থালীর কাজে। অথচ এই শহরেরই আর এক অংশের মানুষ গ্রীষ্মে সামান্য পানীয় জলটুকুও পান না। তাই জলের অপচয় রুখতে প্রতিটি বাড়িতে মিটার বসিয়ে একটি নির্দিষ্ট ইউনিটের বেশি জলের জন্য বর্ধিত হারে কর বসানোর কথা ভাবছে দুর্গাপুর পুরসভা।
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক জানান, বর্তমানে ডিভিসির কাছ থেকে বছরে ১০০ লক্ষ গ্যালন জল কেনা হয়। তার জন্য ডিভিসিকে ২৬ লক্ষ টাকা দিতে হয় পুরসভাকে। সেই জল শোধন করতে বিদ্যুৎ খরচ হয় ৩৬ লক্ষ টাকা। এছাড়াও রাসায়নিক কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতন-সহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বছরে প্রায় ৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে মাসে বাড়ি পিছু ৭০ টাকা এবং ব্যবসায়িক কারণে ব্যবহৃত বাড়ি ও শিল্প কারখানা পিছু ১৪০ টাকা হারে কর আদায় করে পুরসভা। এ ভাবে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা আসে। বাকি ৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেয় পুরসভা।
বাড়ির কল থেকে পাইপ দিয়ে জল নিয়ে ব্যবহার হচ্ছে নির্মাণ কাজে। —নিজস্ব চিত্র।
এত টাকা ভর্তুকি দিয়ে যে জল পুরসভাকে আনতে হয়, বেশিরভাগ সময়েই তা স্রেফ নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, বাড়ির ট্যাঙ্ক থেকে জল পড়ে যাচ্ছে অনর্গল। ট্যাপগুলি থেকেও জল পড়ছে। ট্যাপের মুখ বন্ধ করার কেউ নেই। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৮ টা অবধি আর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা অবধি পুরসভার জল আসে। কিন্তু বেশিরভাগ ট্যাঙ্কই তার অনেক কম সময়ে ভর্তি হয়ে যায়। বাকি জল নষ্ট যায়। পুরসভার দাবি, ভর্তি হয়ে যাওয়ার পরে যাতে অতিরিক্ত জল না বেরিয়ে যায়, তার জন্য বাড়ি বাড়ি জলের ট্যাঙ্কে বিশেষ ‘ভাল্ব’ লাগানো হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অনেকেই তা বিকল করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। যান্ত্রিক ত্রুটিতে ‘ভাল্ব’ বিকল হয়ে গেলে নতুন করে তা লাগাতেও উদ্যোগী হননি বেশিরভাগই।
অথচ এই পুরসভারই কলাবাগান বস্তি, হরিবাজার, শঙ্করপুর, রঘুনাথপুর এলাকায় বছরভর, বিশেষত গ্রীষ্মে পানীয় জলের আকাল থাকে। সেই সব এলাকায় গ্রীষ্মে লরিতে করে ট্যাঙ্ক নিয়ে গিয়ে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করে পুরসভা। মেয়র পারিষদ (জল সরবরাহ) প্রমোদ সরকার জানান, প্রতিদিন লরি করে ৬ থেকে ৮ হাজার লিটার জল পাঠানো হয় ওই এলাকায়। সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকা বামুনাড়া, জেমুয়াতেও ‘মানবিকতার খাতিরে’ জল পাঠানো হয়।
কীভাবে রোখা যাবে জলের এই অপচয়?
মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, জল বাঁচাতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘জল ধর-জল ভর’ প্রকল্প চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। প্রমোদবাবু জানান, পুরসভায় পানীয় জল সংক্রান্ত বাজেটে এ বার ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কাজের মধ্যে কুয়ো, নলকূপ ও পুকুর সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। তার জন্য প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সভা করে বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জল নিয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ। অপূর্ববাবু জানান, প্রতিটি বাড়ি বা কারখানায় ‘মিটার’ বসানো হবে। প্রমোদবাবু বলেন, “পরিবার পিছু ১২৫ লিটার জল বিনামূল্যে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।” তবে তার বেশি জল ব্যবহার করতে গেলে গৃহস্থালীর ক্ষেত্রে প্রতি হাজার লিটার জলের জন্য ৩টা ৩০ পয়সা করে কর দিতে হবে। অন্য দিকে, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের জন্য প্রতি হাজার লিটারে ৪ টাকা ৪০ পয়সা এবং শিল্পের জন্য ১০ টাকা করে কর ধার্য করার কথা ভাবা হয়েছে। তিনি আরও জানান, মিটার বসাতে নতুন লাইন করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। যে সব ক্ষেত্রে পুরনো লাইনেই সরবরাহ চলছে, সেগুলিকেও ধাপে ধাপে নতুন লাইনের আওতায় আনা হবে। শহরের বিভিন্ন নালা-নর্দমা দিয়ে প্রতিদিন যে বর্জ্য জল যায়, তা শোধন করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হবে। তবে সেই জল পানের জন্য নয়। স্নান করা, কাপড় কাচা, বাসন মাজা-সহ গৃহস্থালীর নানা কাজে তা ব্যবহার করতে পারবেন শহরবাসী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.