এ অবধি শুধু জুন মাসেই মালদহে ৫টি ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই সব ঘটনায় অভিযুক্তের সংখ্যা ১৩০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অথচ পুলিশ মাত্র ৩০ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করছে। বাকিদের গ্রেফতার করতে না-পারায় পুলিশের ভূমিকায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএমের অভিযোগ, অধরাদের মধ্যে অন্তত ৫২ জন তৃণমূল সমর্থক। বিজেপির জেলা নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে না বলেই এখানে হানাহানির ঘটনা বেড়ে চলেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র পাল্টা অভিযোগ করেন, “এখনও জেলার কিছু পুলিশ অফিসার কংগ্রেস-সিপিএমের কথায় কাজ করছেন। কংগ্রেস সিপিএম সন্ত্রাস চালিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ কয়েক দিন আগে সভা ভন্ডুল করতে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেসের গুন্ডারা সভাস্থলে বোমা মেরেছিল। এ অবস্থায় রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ করতে সর্বদল বৈঠক ডাকছে জেলা প্রশাসন। মালদহ জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলিকে সব রকম সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হয়েছে। ভোট প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ায় উত্তেজনার আশঙ্কা রয়েছে। ক’দিনের মধ্যে সবর্দল বৈঠক ডাকা হবে।” |
জুনে খুন একনজরে |
১ জুন |
বৈষ্ণবনগর শিমুলতলায় কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষে ৪ জন খুন হন।
দু’দলের ৬৪ জনের নামে অভিযোগ হয়। ৪৫ জন অধরা। |
৪ জুন |
গাজলের বাবুপুরে খুন হন সিপিএম কর্মী কলিমুদ্দিন সরকার।
অভিযুক্ত কংগ্রেস। ৪১ জনের নামে অভিযোগ হয়। ৩৪ জন অধরা। |
১৬ জুন |
হবিবপুরের জাজইলে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী নৃপেন মন্ডলকে গুলি করে খুন করা হয়।
অভিযুক্ত তৃণমূল। মৃতের স্ত্রী তৃণমূলের ছয় নেতা সহ ৯-১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।
অভিযুক্ত এক জনকেও পুলিশ ধরতে পারেনি। এই ঘটনায় কেপিপি (অতুল গোষ্ঠী) নেতা সুকুমার রায়কে ধরে। |
২৪ জুন |
রতুয়া থানার কাহালার নরোত্তমপুর দিয়ারায় খুন হয় নন্দলাল মণ্ডল। আট তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর
বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করেছে। |
২৫ জুন |
গাজল থানা থেকে ১৫০ মিটার দূরে বোমা বিস্ফোরণে সিটুর রিক্সাচালক শ্যামল পাল নিহত হন।
অভিযুক্ত ৩ সন্দেহভাজন কেএলও-র এক জনকেওপুলিশ ধরতে পারেনি। |
২৭ জুন |
হরিশ্চন্দ্রপুর বিরুয়া গ্রামে খুন হন সিপিএম কর্মী আকবর খান।
অভিযুক্ত তৃণমূল।
পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।
|
|
পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় সব কটি ঘটনা রাজনৈতিক নয় বলে দাবি করে বলেন, “৫টি হামলার মধ্যে দুটি রাজনৈতিক। বাকি তিনটি ঘটনা অরাজনৈতিক। ৯টি খুনের ঘটনার কিনারা হয়েছে। ৩০ জন অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে যাঁরা খুনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাঁদের ধরতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।”
একের পর এক খুনের ঘটনায় জেলা পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। তিনি বলেন, “খুনের অভিযোগে ফেরার আসামি তৃণমূলের প্রার্থী। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না। আমরা যাঁকে প্রার্থী করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তৃণমূল পুলিশকে দিয়ে তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করিয়েছে। পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী আরও অভিযোগ করে বলেন, “বৈষ্ণবনগরের শিমূলতলায় কংগ্রেস কর্মীকে খুন করার অভিযোগে ৪২ জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুলিশ মাত্র ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত ৩৫ জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করেনি। উল্টে, মিথ্য মামলায় পুলিশ বেছে বেছে আমাদের দলের কর্মীদের গ্রেফতার করেছে।”
একই ভাবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রও রাজনৈতিক হানাহানি বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত। অম্বরবাবু বলেন, “মালদহ জেলা অশান্তির জায়গা ছিল না। এখানে রাজনৈতিক হানাহানি কম ছিল। জেলা পুলিশ প্রশাসনের লাগামছাড়া ভূমিকায় জেলায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। ভোট পিছোনোয় হানাহানি বাড়তে পারে। এখনই যদি প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা না করে তা হলে রক্তারক্তি বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।” এ মাসেই হবিবপুরে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী নৃপেন মণ্ডল খুন হন। ওই ঘটনারয় তৃণমূলের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। বিজেপি-র জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায় বলেন, “নৃপেন মণ্ডলকে খুনের অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেসের ৬ জনের নাম উঠে এসেছে। অথচ পুলিশ অভিযুক্ত এক জনকেও গ্রেফতার করেনি।” |