নেইমার। তোরেস। অস্কার। ইনিয়েস্তা। জাভি। ক্যাসিয়াস। তারকার শেষ নেই। রবিবার রাতে নক্ষত্র সমাবেশ।
শুধু ফাইনালও নয়। রাত সাড়ে বারোটাতেই পির্লো, ফোরলানরা মাঠে নামবেন। এই গ্রহের অন্য গোলার্ধের কনফেডারেশন কাপের ফাইনালের মতো সেই ম্যাচেও লাতিন আমেরিকা বনাম ইউরোপ। ফুটবল যাঁরা ভালবাসেন তাঁরা চাইবেন, এই রাত যেন না শেষ হয়।
সেই সঙ্গে ক্রিকেট সন্ধ্যায় কয়েক হাজার ওয়াটের আলো যদি ক্রিস গেইলও কেড়ে নিতে পারেন। তাই বৃষ্টি ভেজা রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় বহরমপুর শহর ফাঁকা। অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোননি। রাত ৮টা থেকেই টেলিভিশনের সামনে। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পরে সোজা ফুটবলে। তার জন্য কেউ বাড়িতে নিয়ে আসছেন খাবার। কেউ বন্ধু। হোটেল মালিক চন্দন সরকার বলেন, “আমি নিজেই বন্ধুদের সঙ্গে রাত জাগব। ফলে নিজের হোটেল থেকে খাবার আনাচ্ছি। সেই সঙ্গে পরিচিতরাও অর্ডার দিয়েছেন।”
কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “ধোনি-নেইমার-গেইলদের ব্যক্তিগত কৃতিত্ব দৈনন্দিনের নঞর্থক খবরের ভিড়ে কোথাও অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। এই কৃতিত্বগুলো না থাকলে জীবনটাই মরুভূমি হয়ে যেত বলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি।” তাই মানুষ অপেক্ষায় থাকে হাজার হাজার মাইল দূরের ম্যাচের। এ যেন এক আচমকা চলে আসা
রাতের উৎসব।
বহরমপুর হিন্দ ক্লাব কর্তা শেখর রায় বলেন, “এই সব খেলা দেখে আধুনিক ফুটবল সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। রোজই রাত জেগে খেলা দেখেছি। ফুটবলের টেকনিক্যাল অনেক কিছু দিক রয়েছে, যা আমাদের সিস্টেমে ব্যবহার করা যায় কি না দেখব।”
তবে সব থেকে লাভ হচ্ছে নবীন খেলোয়াড়দের। তাঁরা কোনও এক বন্ধুর বাড়িতে ভিড় করে খেলা দেখছেন। অনেকটা পিকনিকের মতোই ব্যবস্থা। তরুণ জানা বললেন, “ওদের পরিকাঠামোর সঙ্গে আমাদের পরিকাঠামোর কোনও মিলই নেই। ওরা অনেক ভাল ভাবে খেলা শেখে। জিম রয়েছে। তবু ওদের খেলা দেখে বোঝা যায়, আমরা কী করতে পারি না। কী ভাবে বল ছাড়াও খেলা যায়, সবই শিখি।” রতন বিশ্বাসের কথায়, “কী ভাবে ট্যাকল করতে হয়, কী ভাবে লম্বা পাস বাড়াতে হয়, কী ভাবে জায়গা নিতে হয়, বোঝা যায়। বাকিটা নিখাদ আনন্দ।”
এফইউসি ক্লাবকর্তা সঞ্জয়কুমার রায় বলেন, “এই ক’দিন খেলা শেষে ভোর রাতে ঘুমোতে গিয়েছি। রবিবারেও অন্যথা হবে না।” মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের তরুণ দত্তর কথায়, “ফুটবলারদের শারীরিক সক্ষমতা, বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণে ওঠা, দলের ফুটবলারদের বল বাড়ানো, পায়ের সূক্ষ্ম কাজ দেখার জন্য সারা রাত জেগে বসে থাকা যায়। আগে অবশ্য একই ভাবে গেইলের ব্যাটিংয়ের সময়েও উদ্দীপনা ছিল। চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারিনি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচেও।”
অশীতিপর প্রাক্তন ফুটবলার দুর্গা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ভাল পরিবেশ ও ভাল মাঠ হলে খেলাও উন্নত মানের হবেএটা যেমন স্বাভাবিক, সেই সঙ্গে বিদেশে খুব ছোট থেকে উন্নত মানের প্রশিক্ষণের ফলে ভাল খেলার মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়। সম্পূর্ণ পেশাদার মানসিকতা গড়ে ওঠে। অর্থের জন্য তাঁরা সব কিছু উজাড় করে দিতে পারে।” চিত্তরঞ্জন ক্লাব কর্তা ব্রজগোপাল মৈত্র বলেন, “ওই মানের খেলা আমাদের পক্ষে সম্ভব না হলেও শেখার আছে অনেক কিছু। গোটা মাঠ জুড়ে ফুটবলাররা খেলতে দেখে মনে হয় মাঠটাই ছোট। বল ধরা-বল ছাড়া, পাস খেলতে খেলতে মাঠে ফুলের মত ছড়িয়ে পড়া, ব্যাক পাস করে ফের আচমকা আক্রমণে উঠে যাওয়া অনুকরণ করা যেতেই পারে।”
সোমবার যে সকাল হবে দেরি করে, তাতে আর দোষ কি! |