ভোটের গুঁতো
কমিশনের রাঙা চোখ, কেস পেলেই ছুটছে পুলিশ
তৃণমূলের পোষ্টারের উপর গোবর লেপে দিয়েছে কেউ।
অভিযোগের আঙুল সিপিএমের দিকে। কেন? দত্তফুলিয়া থেকে অভিযোগ করতে আসা তৃণমূলের লোকজন ধানতলা থানার ডিউটি অফিসারকে বলেন, “স্যার ওই এলাকায় সিপিএমের বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতে গরু আছে। তারাই গোবর নিয়ে এসে দেওয়ালে লেপে দিয়েছে।” ১৫ জুনের ওই জেনারেল ডায়েরির তদন্তও করে ইতিমধ্যে রিপোর্টও তৈরি করেছে পুলিশ।
ধুবুলিয়ার বটতলা এলাকায় প্রচার করছিল কংগ্রেস। তড়িঘড়ি প্রচার সেরে তারা থানায় অভিযোগ জানাল, তৃণমূল ক্রমান্বয়ে হুমকি দিচ্ছে (জিডি নম্বর ৬৮৭) দেরি না করে তারও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জিডি নম্বর ৩৮৩, তারিখ ১০.০৬.২০১৩। করিমপুর থানায় সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়, রামকৃষ্ণপল্লি এলাকায় কে বা কারা সিপিএমের পতাকা ফেলে দিয়েছে। ছুটেছে পুলিশ।
ভোট বড় বালাই। তাই এখন ‘পেটি কেস’-ও পুলিশ ছুটছে। দু-দিন আগেও যা ছিল নিছক ‘পেটি’ বা ‘পাতি’ কিংবা ‘নো’ কেস। নির্বাচনের মুখে জেলার প্রায় সব থানাতেই ভিড় এমন অজস্র কেস। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সে সব কেসের তদন্তও শেষ হচ্ছে ঝড়ের গতিতে। জেলা পুলিশের একাংশ মেনে নিচ্ছে যে বছরের অন্য সময় যে কেসের কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয় না নির্বাচনের সময় তাই যেন ‘স্পর্শকাতর’ হয়ে উঠেছে। কখন কমিশনকে নালিশ জানিয়ে বসে কে জানে বাবা!
নদিয়ার জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় নিয়ম মেনেই আমরা কাজ করছি। এইসময় জেলার সব থানাতেই কেসের সংখ্যা কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। সেগুলোর দ্রুত তদন্তও করা হচ্ছে তবে বছরের অন্য সময় পুলিশ যে কেস নিতে চায় না বা তদন্ত করতে অনেক সময় লাগিয়ে দেয় এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’’
জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এক দিকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ, অন্যদিকে রাজনীতির কারবারিদের ফোনের পর ফোন। ফলে ছোট বড় যাই হোক না কেন এইসময় কোন কেস ফেলে রাখলেই উল্টে ‘কেস খেতে’ হবে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সব অভিযোগই তদন্ত করে রিপোর্ট তৈরি করে রাখা হচ্ছে। ফলে থানার কর্মীদের ল্যাজে গোবরে অবস্থা!”
অথচ পুলিশের এমন তৎপরতা কে দেখেছে? গ্রামের লোকের অন্তত এ হেন তৎপরতার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বরং তাঁদের এমন ‘পাতি’ অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে তাঁদের শুনতে হয় ‘নিজেরা মিটিয়ে নিন না।’ চুরি, লুঠ কিংবা মারপিট করে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এমন সব কেসেও তদন্ত করতে আঠারো মাসে বছর হয় পুলিশের। জেলার আনাচে কানাচে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। বছর কয়েক আগে হোগলবেড়িয়ার এক ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে নদিয়ার তৎকালীন এক জেলা পুলিশ সুপার মন্তব্য করেছিলেন, “হাজার কেসের ভিড়ে অত কি আর মনে থাকে! দেখবেন এক জদিন ঠিক ঘরে আনবে ব্যাটাকে।” পুলিশের এই মনোভাবে আপাতত দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে।
নির্বাচনের সময় ব্যতিক্রম কেস যাই হোক, যেমনই হোক এখন তদন্ত শুরু হচ্ছে ঝড়ের গতিতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ভোটের দামামা বাজতেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রতিটি থানায় চালু করা হয়েছে ‘ইলেকশন ইনসিডেন্ট রেজিস্টার’। নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ সেই খাতায় তুলে রাখতে হচ্ছে। তার বিবরণও পাঠাতে হচ্ছে কমিশনকে। পর্যবেক্ষক যে কোন মুহূর্তেই চেয়ে বসেতে পারেন রিপোটর্। ফলে তদন্তও শেষ করতে হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘দিন কয়েক আগে থানায় এক জন এসে জিডি করে গেল যে উনুন থেকে বাড়িতে আগুন লেগেছে। বিকেলে একই লোক এসে বলছে, ‘স্যার, এর পিছনে কিন্তু একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। ব্যাপারটা কিন্তু একটু ভাল করে দেখবেন।’ তারপরেই ওই বিষয়টি নিয়েই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতারা ফোন করতে শুরু করছে। কি বলবেন এটাকে? বহু নজির রয়েছে কোন কেস মিথ্যে, কোনটা করা হচ্ছে স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে, কোনটা রীতিমত হাস্যকর কোনটাকে আবার নোংরামি বললেও কম বলা হয়। নির্বাচনের সময় কাউকে ‘কেস খাইয়ে’ দেওয়াটাকেও বড় রাজনৈতিক সাফল্য বলে মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা। কিন্তু পুলিশের সাফ কথা, “এইসময় আমরা কোনও ঝুঁকি নিচ্ছি না।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.