উত্তর শহরতলি ও দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা টানা বৃষ্টিতে জলের তলায়।
শনিবার বিকেল থেকে টানা বৃষ্টিতে বরাহনগরের একাধিক এলাকাও ডুবে যায়। লেকভিউ পার্ক, বনহুগলি, সতীন সেন নগর, আরআইসি বাজার, কালীমাতা কলোনি, নৈনান পাড়া, লেকপল্লি, সবেদাবাগান, বরাহনগর বাজার, নিয়োগীপাড়া রোড, মতিলাল মল্লিক লেন, ভট্টাচার্য পাড়া, রাজকুমার মুখার্জি রোড, বিদ্যায়তন সরণি, ন’পাড়া, নীলমণি সরকার স্ট্রিট, ডানলপ-সহ বিভিন্ন এলাকা হাঁটুজলে ভেসেছে।
গোপাললাল ঠাকুর রোড ও বিটি রোডের দু’ধারে জল জমে থাকে দীর্ঘক্ষণ। গালিপিট ও ম্যানহোল খুলে জল নামানোর কাজ হলেও সমস্যা মেটেনি। পুরকর্মীদের একাংশের কথায়, গঙ্গায় জোয়ার থাকায় সমস্যা হয়েছিল।
বরাহনগর পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের অশোক রায়ের অভিযোগ, জল জমার সমস্যা আগেও ছিল। তবে বক্স ড্রেনের কাজ শেষ না হওয়ায় এবং লকগেট রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ বার সমস্যা বেড়েছে। কংগ্রেস নেতা নিতাই মণ্ডল বলেন, “অল্প বৃষ্টিতেই বরাহনগরে হাঁটুজল জমে যায়। নিকাশির কাজ যে কবে শেষ হবে, জানা নেই। ” অভিযোগ পুরোপুরি স্বীকার করেননি বরাহনগর পুর-কর্তৃপক্ষ। চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘নিকাশির কাজ চলছে। বাগজোলা খালের সংস্কারও করা হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, “কাজ চলাকালীন বৃষ্টি নামার ফলে এই অবস্থা।” |
গলি থেকে রাজপথ একই হাল। সোদপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়। |
টানা বৃষ্টিতে বিটি রোড বরাবর পানিহাটি, আগরপাড়া, বেলঘরিয়ার কিছু অংশ, মণিরামপুর, আনন্দপুরী, জগদ্দল জলবন্দি। সব থেকে খারাপ অবস্থা পানিহাটির। এলাকার যাবতীয় আবর্জনা রাস্তার ধারে ডাঁই করে রাখায় নিকাশির অবস্থা বেহাল হয়েছে বলে অভিযোগ। জমা জলের মধ্যে ময়লা ভাসতে দেখা যায় রাস্তায়। পানিহাটি হাসপাতালের ঢোকার মুখেও জল। দোকান-বাজার, বসতবাড়ি, গ্যারাজ, একতলা জলমগ্ন।
পানিহাটির বিধায়ক তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “পানিহাটির দুর্ভাগ্য যে বাম আমলে কোনও কাজ হয়নি। তবে আমাদের সময়েও এখানকার নিকাশির অবস্থার দিকে সে ভাবে নজর দেওয়া হয়নি। নিকাশির হাল দ্রুত ফেরানো হবে।” এ দিকে, বেশ কয়েকটি পানীয় জলের কল জলের তলায় চলে যাওয়ায় দুর্ভোগ শুরু হয়েছে পানিহাটিতে। সোদপুর-মধ্যমগ্রাম রাস্তার কিছু অংশও ভেসে গিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিটি রোডের একটি অংশ জলমগ্ন থাকায় সেখান দিয়ে গাড়ি চলেনি।
দমদমের পাতিপুকুরে নতুন তৈরি হওয়া আন্ডারপাসও জলে থইথই। দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক আধিকারিক জানান, আন্ডারপাসের নিকাশি ব্যবস্থা নতুন হলেও জমা জল যে খালে গিয়ে পড়ছে, তার সংস্কার দরকার। ওই খাল সংস্কারের কাজ চলছে। পাতিপুকুর ঝিল সংস্কার না হওয়ায় জল জমছে পাতিপুকুর ও সংলগ্ন আন্ডারপাসে।
শুধু উত্তর শহরতলিই নয়, দক্ষিণেও ছবিটা ছিল একই রকম। রাজপুর সোনারপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশই জলমগ্ন। এর মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীনগর, বালিয়া এবং ই এম বাইপাস সংলগ্ন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকাই ছিল জলের নীচে। এ ছাড়াও পাঁচপোতা, বোয়ালিয়া, নরেন্দ্রপুর, কুলিপাড়া, বিবেকানন্দ পল্লি, রেনিয়া ও মালঞ্চ-সহ প্রায় সবক’টি এলাকাই ভেসে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত নিকাশি ব্যবস্থার অভাবেই বছরের পর বছর এমন ভোগান্তি। যদিও এর জন্য ভারী বৃষ্টিকেই দায়ী করছে প্রশাসন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে টালিনালা ও আদিগঙ্গার কোনও সংস্কার হয়নি। সে জন্যই মূলত এলাকায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তবে মিঠাপুর নালা সংস্কারের কাজ চলছে। শীঘ্রই জল জমার হাত থেকে মুক্তি মিলবে বলে মত পুরসভার। |