সকাল দশটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোয় দাঁড়িয়েছিলেন সুদীপ্ত সরকার। কিন্তু আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনও বাস-অটোর দেখা পেলেন না তিনি।
বেলা সাড়ে এগারোটায় উল্টোডাঙা মুচিবাজারের মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন অচিন্ত্য দাস। যাবেন ধর্মতলা। ঠায় দাঁড়িয়েও বাসের দেখা না-পেয়ে শোভাবাজারের অটোয় চাপলেন তিনি। সেখান থেকে ফের ট্যাক্সি নিয়ে ধর্মতলা রওনা দিলেন।
এই দু’টি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং ‘রেনি-ডে’ রবিবারে এ ভাবেই শহর থেকে উধাও হয়ে গেল বাস। উল্টোডাঙা থেকে রানিকুঠি, সল্টলেক থেকে বরাহনগর, নাকাল হতে হল বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় বার হওয়া মানুষজনকে। তার উপরে শহরে একটি ধর্মীয় সংগঠনের মিছিলের জেরে সেই দুর্ভোগ আরও বেড়েছিল। |
ভোগান্তির যাতায়াত। রবিবার, দমদম পার্কে। ছবি: শৌভিক দে। |
বর্ষার দিনে রাস্তায় বাস না নামার কারণ হিসেবে রাজ্য সরকার থেকে বাস-মিনিবাস সংগঠনের নেতা, প্রত্যেকেই বলছেন রাতভর বৃষ্টির জেরে উত্তর থেকে দক্ষিণ, মহানগরের সর্বত্র জল জমাতেই রাস্তায় গাড়ি নামানো হয়নি। পাশাপাশি, ‘রেনি-ডে’ বাস চালানোর জন্য কতটা লাভজনক হবে, সে ব্যাপারেও সন্দিহান ছিলেন বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলির কর্তাব্যক্তিরা। এ ছাড়াও, রাস্তার জমা জল ইঞ্জিনে ঢুকে গাড়ি খারাপ করে দিতে পারে বলেও বাস মালিকেরা জানিয়েছেন। তাই অনেকে বাস বের করতে চাননি।
কী অবস্থা ছিল এ দিন? পুলিশ সূত্রের খবর, শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে এ দিন বিশেষ কোনও বাসই শহরে আসেনি। শহর থেকেও বাস ওই সব এলাকায় যেতে পারেনি। ব্যারাকপুর, সোদপুর থেকে বি টি রোড হয়ে ধর্মতলা, শিয়ালদহ যাওয়ার বাস ছিল হাতেগোনা। সল্টলেক থেকেও বাস মেলেনি। ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, বেরসকারি বাস তো দূর অস্ত্, সরকারি বাসও ছিল না। ফলে জরুরি দরকারে রাস্তায় বেরোনো মানুষেরা যেমন নাকাল হয়েছেন, তেমনই তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের কর্মীদেরও অফিস পৌঁছতে বিস্তর হ্যাপা পোহাতে হয়েছে। এবং এই সুযোগে কোনও কোনও এলাকায় চড়া ভাড়া হেঁকেছেন অটো, রিকশাচালকেরা। উল্টোডাঙা এলাকার বাসিন্দা কাজল রায় বলেন, “উল্টোডাঙা থেকে সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে যাওয়ার অটো ভাড়া ২০ টাকা থেকে একলাফে ৫০ টাকা হয়ে গিয়েছিল।” ওই এলাকায় রিকশাচালকেরাও ভাড়া দু’-তিন গুণ বাড়িয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
কিন্তু বাস নামল না কেন? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বিভিন্ন রাস্তায় জল জমায় বাস চালানো যায়নি। পাম্প চালিয়ে দ্রুত জল বার করা হয়েছে। বিকেলের পর থেকে ধীরে ধীরে সরকারি বাস চালানো শুরু হয়েছে।” তবে বেসরকারি বাসের পরিষেবা কিন্তু মেলেনি। এবং তার পিছনে দায়ী কম পরিমাণে যাত্রীসংখ্যা। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্সের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একে তো রাস্তায় জল জমে রয়েছে। তার উপরে লোকজনও কম। বাস চালালে জ্বালানির খরচই উঠবে না।” একই মত মিনিবাস মালিকদের সংগঠনের মালিক অবশেষ দাঁ-র। তিনি বলেন, “সকালে রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে বেশির ভাগ মালিকই বাস বার করতে চাননি।” |