উত্তর থেকে দক্ষিণ
ভোগান্তির চেনা জলছবি মহানগরে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেট পরীক্ষা ছিল রাজা রামমোহন সরণির সিটি কলেজে। রবিবার সকালে দশটা নাগাদ কোমর-জল ভেঙে পরীক্ষা দিতে আসেন খড়্গপুরের রাজীব কুমার। হাওড়া থেকে কোনও রকমে ট্যাক্সি পেয়েছিলেন, কিন্তু কলেজ স্ট্রিটের পর আর এগোনো যায়নি। রাজীব কুমার একা নন, এ দিন এ ভাবেই পরীক্ষা দিতে এসেছেন অনেকেই।
নিম্নচাপের জন্য শনিবার রাতভর এবং রবিবার সকালের অবিরাম বৃষ্টিতে কলকাতা-সহ আশপাশের বির্স্তীণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় সমস্যায় পড়েন শহরবাসী। বিশেষত এ দিন যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁদের অনেকেই বিপাকে পড়েন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি কমে গেলেও, এ দিন বিকেল পর্যন্ত কলকাতার দক্ষিণ থেকে উত্তর, বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় ডুবে থাকে।
দক্ষিণের বালিগঞ্জ প্লেস, সুইনহো স্ট্রিট, কর্নফিল্ড রোড, বালিগঞ্জ স্টেশন রোড, সার্দান অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, রাজা রামমোহন রায় সরণি, কৈলাস বসু স্ট্রিট, বিবেকানন্দ মোড় থেকে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা, সুকিয়া স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, জাকারিয়া স্ট্রিট তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিট, কাঁকুড়গাছি আন্ডারপাস, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া, পাতিপুকুর আন্ডারপাস, দমদম আন্ডারপাসে হাঁটু পর্যন্ত জল জমে। কিছু কিছু এলাকায় প্রায় কোমর ছুঁইছুঁই জল ছিল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। জল জমে তিলজলা, তপসিয়া, ইর্স্টান মেট্রোপলিটান বাইপাস সংলগ্ন পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাটুলির একাংশ, ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের রানিয়া-সহ বহু এলাকায়। পাশাপাশি রবীন্দ্র সরণির বিভিন্ন জায়গা, সূর্য সেন স্ট্রিট, থিয়েটার রোড, আলিপুর চিড়িয়াখানা সংলগ্ন এলাকা, প্রিন্সেপ ঘাট এলাকার আশপাশ, বেহালা চৌরাস্তা ব্লাইন্ড স্কুল সংলগ্ন এলাকা, বেহালা ট্রামডিপো ছাড়াও ডায়মন্ড হারবার রোডের বিভিন্ন জায়গা, জেমস লং সরণি এলাকায় গোড়ালি পর্যন্ত জল জমে যায়।
দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জল কমে গেলেও, উত্তরে বিধান সরণি, রাজা রামমোহন রায় সরণি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দুপুর পর্যন্ত জল ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জল ঢুকে গিয়েছে অনেক বাড়ির একতলায়। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ভিতরেও জল জমে ছিল দুপুর পর্যন্ত। কলেজ স্ট্রিটেও হাঁটু সমান জল থাকায় বইয়ের স্টলগুলি দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে জল নামতে কিছু দোকান তিনটের পরে খুলতে থাকে। বিধান সরণির উপরে খাবারের দোকানগুলিও এ দিন বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন দক্ষিণ কলকাতা থেকে উত্তর কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ সব থেকে বেশি। পুরসভা সূত্রে পাওয়া বৃষ্টির তালিকা অনুযায়ী, উত্তর কলকাতার পাতিপুকুর সংলগ্ন বীরপাড়ায় রবিবার বিকেল ৪টে পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৩৪ মিলিমিটার। উল্টোডাঙায় ১২৯ মিমি, বেলগাছিয়ায় ৯২ মিমি, ঠনঠনিয়ায় ১০৬ মিমি, মানিকতলায় ৮৫ মিমি, ধাপায় ৮৭ মিমি, পামার ব্রিজে ১০৫ মিমি। অন্য দিকে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৭১ মিমি, মোমিনপুরে ৭৬ মিমি, কালীঘাটে ৭৭ মিমি, চেতলায় ৭৩ মিমি ও জিঞ্জিরা পোল ৭৫ মিমি।
পুরসভার নিকাশি দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, দক্ষিণ কলকাতায় বৃষ্টি কম হওয়ায় জল তাড়াতাড়ি নেমে গিয়েছে। কিন্তু উত্তর কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ এতই বেশি ছিল, যে জল বার করতে সময় লেগেছে। পুরসভার নিকাশি দফতরের ওএসডি অমিত রায় বলেন, “সকালে ভাটা থাকায়, গঙ্গার দিকের লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছিল। এতে উত্তর কলকাতার জল বার করতে সকালের দিকে সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু পরে জোয়ার আসতে শুরু করায় গেটগুলি বন্ধ করে দিতে হয়। বাকি জল আর বার করা সম্ভব হয়নি।” এ দিন সকালে পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ এবং নিকাশি দফতরের ওএসডি-সহ পুরসভার কর্মীরা উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.