হাতব্যাগে সন্দেহজনক তরল আর পাউডার। রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে এক যাত্রীকে আটক করল পুলিশ। তাদের সন্দেহ, যাত্রীর ব্যাগে পাওয়া ওই তরল ও পাউডার বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। যদিও ফরেন্সিক রিপোর্ট না এলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে কলকাতা বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এই বিমানযাত্রীর নাম মহম্মদ হাসান (৩১)। তিনি রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়ার বিমানে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর যাচ্ছিলেন। বিমানবন্দরের এক্স-রে মেশিনের এক্সপ্লোসিভ ডিটেক্টর জানিয়েছে, ওই যাত্রীর কাছে যে তরল ও পাউডার মিলেছে, তার ভিতরে ৯০ শতাংশ বিস্ফোরক রয়েছে! যে বিশেষজ্ঞ কুকুর জিনিসপত্র শুঁকে বিস্ফোরকের অস্তিত্ব জানিয়ে দিতে পারে, তাকেও ডেকে আনা হয়েছিল। সেই কুকুরের আচরণ দেখেও অফিসারদের মনে হয়েছে, ওই তরল ও পাউডার বিস্ফোরক হতে পারে। হাসানের দাবি, এগুলি বিস্ফোরক নয়। হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ মাত্র। বিমানবন্দর অফিসারদের মতে, এক্স-রে মেশিন বা পুলিশ কুকুর আশি শতাংশ ক্ষেত্রে ঠিক বলে থাকে। কিন্তু কুড়ি শতাংশ ভুলের সুযোগও থাকে। এর আগে এমন নজির রয়েছে যে, এক্স-রে মেশিনে যেটা বিস্ফোরক বলা হয়েছে, পরে দেখা গিয়েছে সেটা নিছকই নিরীহ ভোজ্যদ্রব্য ছিল। এ বারে পুলিশ তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সন্দেহজনক তরল ও পাউডার ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছে। রিপোর্ট আসার আগে তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে চাইছে না।
তবে হাসানের কাছ থেকে পাওয়া তরল ও পাউডার যদি বিস্ফোরক না-ও হয়, তা হলেও হাসানকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলা যাচ্ছে না। কারণ বিমানে হাতব্যাগে কোনও রকম তরল পদার্থই নেওয়ার কথা নয়। নিরীহ ওষুধও যদি হয়, তবে তা হাতব্যাগে রেখে নিয়ম ভেঙেছেন হাসান।
হাসানের হাতব্যাগে ছোট ছোট প্লাস্টিকের প্যাকেটে বেশ কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধের বড়ি, চারটি প্লাস্টিকের প্যাকেটে হালকা সবুজ রঙের পাউডার জাতীয় বস্তু ছিল। তার সঙ্গে হোমিওপ্যাথির ছোট ছোট শিশিতে যেমন তরল ওষুধ পাওয়া যায়, সে রকম ১০/১২টি শিশিতে লালচে রঙের তরল এবং দু’টি বড় তরলের বোতলও ছিল। বিমানবন্দরের এক্সপ্লোসিভ ডিটেক্টর মেশিনের রিডিং জানাচ্ছে, ২০০ মিলিলিটার সন্দেহজনক তরল এবং ১০০ গ্রাম সন্দেহজনক পাউডার আসলে টিএটিপি এবং পিইটিএন বিস্ফোরক। তাতে বিস্ফোরকের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ!
২০০৬ সালের অগস্ট মাসে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে প্রথম ধরা পড়ে সন্দেহজনক এই তরল। তখনই প্রথম জানা যায়, এই তরল ব্যবহার করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরণ ঘটানো যেতে পারে। শুধু ডিটোনেটরের সাহায্যেই সেই বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব। ওই ঘটনার পর থেকে বিশ্ব জুড়ে বিমানযাত্রীদের ক্ষত্রে আরও বেশি কড়াকড়ি শুরু হয়ে যায়। এমনকী নিরীহ ময়শ্চারাইজার বা টুথপেস্ট জাতীয় বস্তু হাতব্যাগে রেখেও ঝামেলায় পড়েছেন বহু যাত্রী। হাতব্যাগে কোনও ধরনের পাউডার বা তরলই নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই। রবিবার হাসান সেই নিয়ম মানেননি।
জানা গিয়েছে, ৩১ বছরের এই যুবক উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বড় বারাউনা-র বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের এক কর্তার কথায়, “আজমগড় জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত। ফলে সন্দেহ আরও বাড়ছে।” এ দিন রাতেই উত্তরপ্রদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসান সম্পর্কে বিশদ জানতে চাওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বড় ব্যাগ বিমানের ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে একটি কালো রঙের হাতব্যাগ নিয়ে হাসান নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢোকেন। এক্স-রে মেশিন জানিয়ে দেয়, ব্যাগের ভিতরে বিস্ফোরক রয়েছে। আনা হয় বিশেষজ্ঞ কুকুর। অফিসার জানান, ব্যাগে বিস্ফোরকের গন্ধ পেলে কুকুর চুপ করে ব্যাগের পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
রবিবার সন্ধ্যাতেও তা-ই করেছে সে। হাসান অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের এক প্রতিবেশী যুবক ও তাঁর বাবা কুয়ালালামপুরে চায়ের দোকান চালান। হাসানও কুয়ালালামপুরে একটি বাগানে মালির কাজ করেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেছিলেন। এখন কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে ওই প্রতিবেশী যুবকের মা তাঁর ছেলের জন্য এই সব আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ হাসানের হাত দিয়ে পাঠাচ্ছিলেন। |