তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তাই নিয়ে দোলা সেনের সঙ্গে বিরোধে যথেষ্টই চাপে দলের প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তার মধ্যেই চটশিল্পে শোভনদেবদের ইউনিয়নের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল রাজ্যের শ্রম দফতর! যে দফতরের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত দোলা সেন।
বছর তিনেক আগে চটশিল্পের জন্য তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয় ন্যাশনাল জুট ফেডারেশন (এনজেএফ)। যার সভাপতি শোভনদেববাবু। মহাকরণের খবর, ফেডারেশন নিয়ে সম্প্রতি একটি ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তৈরি করেছে রাজ্যের শ্রম দফতর। সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র অনুমোদিত বলে যে নম্বর দেখিয়ে ফেডারেশন রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে, সেটি ভুয়ো! ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন চটকলের ইউনিয়নগুলির অস্তিত্ব নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। |
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় |
পূর্ণেন্দু বসু |
দোলা সেন |
|
শোভনদেবদের ফেডারেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? মহাকরণের খবর, ২০১০ সালের ৮ মার্চ শ্রম দফতরে নথিভুক্ত হয় ফেডারেশনের নাম (রেজি নং ২৫৩৯৬)। স্টেটাস রিপোর্ট অনুযায়ী, সে সময় আবেদনপত্রে ফেডারেশন জানিয়েছিল, আইএনটিটিইউসি-র অনুমোদনের তালিকায় ১২০ নম্বরে নাম রয়েছে তাদের। আরও জানানো হয়, রাজ্যের সাতটি চটকলের মোট ২১৫ জন শ্রমিককে নিয়ে তৈরি কয়েকটি ইউনিয়ন মিলিত ভাবে এই ফেডারেশন তৈরি করেছে। কিন্তু শোভনদেবদের দাবি করা ইউনিয়নগুলির মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের নেতারা শুরুতেই ফেডারেশনের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন শ্রম দফতরে। ১৯ এপ্রিল আরও পাঁচটি ইউনিয়নের নেতারা শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফেডারেশনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক অস্বীকার করেন। এর পরেই শ্রমমন্ত্রী তাঁর দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, শ্রম দফতরের তদন্ত শুরু করেছে জেনে গত ২৯ এপ্রিল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নিয়মমাফিক একটি বার্ষিক বিবরণী দাখিল করা হয়। তাতে জানানো হয়, ৭টি ইউনিয়নকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৩৭টি ইউনিয়ন। ফেডারেশনের অধীনে নাম লিখিয়েছেন ৩৫০০ চটকল শ্রমিক। যদিও শ্রম দফতরের দাবি, ফেডারেশনের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত ৩০টি চটকল ইউনিয়নের নাম-ঠিকানা কিছুই জানানো হয়নি সরকারকে।
শ্রম দফতরের আরও দাবি, ৪ থেকে ৭ মে-র মধ্যে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় চট্টোপাধ্যায় সরকারের ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রারকে তিনটি চিঠি পাঠান। তাতেই ফেডারেশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রিপোর্টের দাবি, আইএনটিটিইউসি-র অনুমোদনের তালিকায় ১২০ নম্বরে তাদের নাম আছে বলে জানালেও কার্যবিবরণীতে সেটা বদলে হয়ে গিয়েছে ৩০১! শ্রম দফতরের তৈরি স্টেটাস রিপোর্টেও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনও সংগঠনকে ফেডারেশন (জাতীয়) পরিচয় বহন করতে গেলে যে নিয়ম মানা উচিত, শোভনদেবরা তা মানেননি।
শোভনদেব অবশ্য শ্রম দফতরের ওই রিপোর্টকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। তাঁর কথায়, “অনুমোদনের নম্বর নিয়ে একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল। সেটা আমরা শুধরেও নিয়েছি।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “ফেডারেশনের আসল-নকল, তার পদাধিকারী এ সব বুঝি না। দীর্ঘকাল ধরে শ্রমিকদের নিয়ে আছি। তাঁদের নিয়েই থাকব। সবাই আমাকে চেনেন।”
দলের শ্রমিক ফ্রন্টের নেতৃত্বের দখল নিয়ে যাঁর সঙ্গে শোভনদেবের বিরোধ তুঙ্গে, সেই আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর কথায়, “সাংগাঠনিক বিষয়ে প্রেসকে কিছু বলব না।” আর শোভনদেবদের ফেডারেশন নিয়ে তাঁর দফতর রিপোর্ট তৈরি করলেও পূর্ণেন্দু বসু এ নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছেন।
|